Advertisement
E-Paper

এ বার অ্যাকাডেমি আপনার ড্রইংরুমে

শুধু হলে নয়। এ বার রিমোটেই নাটক। ড্রইং রুমের এলইডি-তে। থিয়েটারে এই প্রথম ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার। সার্ফ করে জানাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তশুধু হলে নয়। এ বার রিমোটেই নাটক। ড্রইং রুমের এলইডি-তে। থিয়েটারে এই প্রথম ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার। সার্ফ করে জানাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ২২:২৮
‘বিষ’

‘বিষ’

চার‌্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য কিড’ হোক কি উত্তম-সুচিত্রার ‘সপ্তপদী’। অমিতাভ-রেখার ‘সিলসিলা’ বলুন কি আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস্’। সিনেমার পর্দায় দেখে থাকলেও বাড়ির ড্রইংরুমে বসেও তো সেগুলো অনেক বার দেখেছে দর্শক।

কিন্তু কোনও থিয়েটারের কথা কি মনে আসছে, যেটা বাড়ির এলইডি-তে বসে দেখেছেন?

উৎপল দত্তের ‘কল্লোল’ বা তৃপ্তি মিত্রের ‘থানা থেকে আসছি’ টিভিতে দেখেছেন, এমন কেউ দাবি করতে পারবেন না। ডিভিডি বা ভিসিডি আছে বলেও তেমন শোনা যায় না। আজ পর্যন্ত বাংলার কোনও টেলিভিশন চ্যানেলে থিয়েটারের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে বলেও শোনা যায়নি। শুধু বাংলা কেন? ভারতীয় অন্য কোনও ভাষার থিয়েটারকে নিয়ে এই ধরনের কোনও উদ্যোগ এর আগে হয়েছে বলেও খবর নেই। তবে মঞ্চের দর্শকের জন্য সুখবর রয়েছে। আগামী মে থেকে এমনই একটা কাজ শুরু হতে চলেছে জি-বাংলা চ্যানেলে। প্রাইম টাইমে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার করা হবে দশটা বাংলা নাটকের। প্রত্যেক মাসে একটা রবিবার বরাদ্দ থাকবে এই প্রোগ্রামের জন্য।

কেন হঠাৎ এমন একটা উদ্যোগ? যেখানে আজও অনেকেই মনে করেন যে, থিয়েটার একটা ‘নিশ’ আর্ট-ফর্ম। সম্রাট ঘোষ, জি-চ্যানেলের বাংলা ক্লাস্টারের বিজনেস হেড, জানাচ্ছেন যে নতুন কিছু উদ্যোগ নিতে তাঁরা সব সময়ই এগিয়ে এসেছেন। তা সে ‘দাদাগিরি’র মতো কুইজ শো হোক কি ‘ডান্স বাংলা ডান্স’য়ের মতো কোনও রিয়্যালিটি শো। “থিয়েটারের জন্য এই রকম একটা নতুন প্রচেষ্টা করার রিস্ক আমরা নিতে চাই। আশা করছি বাংলার দর্শকের এটা ভাল লাগবে,” বলছেন সম্রাট।

কোন নাটকের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে, তা চ্যানেলের কর্ণধারের সঙ্গে বাছাই করার দায়িত্ব রয়েছে কালিন্দী ব্রাত্যজন-এর। প্রত্যেকটা নাটককে আলাদা করে মঞ্চস্থ করা হয়েছে রেকর্ডিংয়ের জন্য। শিক্ষামন্ত্রী ও নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু জানান, “আমি চ্যানেলের কর্ণধারদের বলেছিলাম যে, থিয়েটারের সংরক্ষণের জন্য অনেক কিছু বলা হয়। কিন্তু সে ভাবে কোনও কাজ হয়নি। তাঁরা যদি এই রকম একটা কাজের উদ্যোগ নেন, তবে থিয়েটারের জন্য সামগ্রিক ভাবে খুব ভাল হবে। এ বছরের জন্য দশটা নাটক বাছা হয়েছে। পরের লটে আরও দশটা নাটক বাছা হবে। সেগুলো ২০১৫-তে দেখান হবে।”

‘মিসড্ কল’

‘সিনেমার মতো’

চ্যানেলের কর্ণধারেরা বলছেন যে- ক’টা নাটক বাছা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা গল্প রয়েছে। প্রত্যেকটাই খুব সমসাময়িক। টিভির দর্শকের কাছে তাঁদের পরিচিত মুখ যে নাটকে আছে, সেগুলো দেখার উৎসাহ বেশি। এই সব কিছু মাথায় রেখে নাটক নির্বাচন করা হয়েছে। বাছাই করা নাটকের মধ্যে রয়েছে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও রাহুল অভিনীত ‘অশালীন’, ব্রাত্য বসু-পীযুষ গঙ্গোপাধ্যায়-অনসূয়া মজুমদার অভিনীত ‘সিনেমার মতো’, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত ‘বিষ’, গৌতম হালদার ও দেবশঙ্কর হালদার অভিনীত ‘মিসড্ কল’, দেবদূত ঘোষ ও মল্লিকা মজুমদার অভিনীত ‘চতুষ্কোণ’, দেবশঙ্কর হালদার ও বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ অভিনীত ‘কাছের মানুষ’ ইত্যাদি। “এই নাটকগুলোয় একটা স্ট্রেট গল্প আছে। সেটা টিভির দর্শকের জন্য খুব দরকারি,” বলছেন রাজর্ষি দে, প্রোগ্রামিং হেড, জি বাংলা।

তবু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই তালিকায় কৌশিক সেন, সুমন মুখোপাধ্যায় বা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কোনও নাটক দেখা যাচ্ছে না কেন? “যখন এই উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছিল, তখন সুমনের নতুন নাটক ‘মেফিস্টো’ নামেনি। তাই নিতে পারিনি। এবং সুমনের ‘শূন্য শুধু শূন্য নয়’ নিতে চেয়েও পারিনি কারণ নাটকের দৈর্ঘ্যটা ছোট ছিল। ‘রাজা লিয়র’য়ের তখন শো হচ্ছিল না। জি-গৌরব সম্মানে কৌশিকের ‘ম্যাকবেথ’ অভিনীত হয়েছে এবং সেখানে রেশমি সেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মান পেয়েছেন। আরও দশটা নাটক আমরা পরের লট-এ টেলিভাইজ করব। তখন সেখানে ওঁদের কাজ দেখা যাবে,” বলছেন রাজর্ষি।

যদি কোনও নাটক টিভিতে দেখানো হয়েই যায়, তা হলে সেটার পরবর্তী শোয়ের দর্শকসংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না? এই ঝামেলাটা আটকাবেন কী করে? “এমন ভাবে নাটকগুলো বাছা হয়েছে, যাতে তাদের শো অ্যাফেক্ট না করে। ‘বিকেলে ভোরের সর্ষেফুল’, ‘অশালীন’, ‘কাছের মানুষ’-এর শো হচ্ছে না। ‘সিনেমার মতো’ নাটকটা এখন মঞ্চস্থ হচ্ছে বলে সেটাকে এ বছরের শেষের দিকে দেখাব,” বলেন রাজর্ষি। সফল হলেই এই প্রোগ্রামের পরে থিয়েটারের ডিভিডি বা ভিসিডি রিলিজ করার ট্রেন্ড শুরু হতে পারে।

প্রিমিয়ারের নাটকগুলো

বিষ

রাজনৈতিক হত্যা

সিনেমার মতো

কাছের মানুষ

চতুষ্কোণ

স্ত্রীর পত্র

বিকেলে ভোরের

সর্ষেফুল

অশালীন

মিসড্ কল

জায়মান

নাটকের জগতে এ যে একটা বড় পদক্ষেপ, তা নিয়ে একমত সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। “বিদেশে নাটকের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় কি না তা জানা নেই। তবে নাটকের ডকুমেন্টেশন তো হয়,” বলছেন তিনি। তবে এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, থিয়েটার আর সিনেমা দু’টো ফর্ম এতটা ভিন্ন যে থিয়েটারের সঠিক এফেক্ট পর্দায় পাওয়া যায় না। “তবু আদলটা ধরা যেতে পারে। নতুন প্রজন্মের অনেককেই আজকাল অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, ও উৎপল দত্তের নাটকের অভিনয়টা তাঁদের সিনেমা দেখে আন্দাজ করতে হয়। শুধু ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হিসেবে নয়, নাটকের দুনিয়ায় এই প্রোগ্রামটার একটা হিস্টোরিকাল ভ্যালু থাকবে,” বলছেন তিনি। তবে তার সঙ্গে এটাও বলছেন যে, যদি উদ্যোক্তারা তাঁদের পছন্দের মানুষের কাজের বাইরে গিয়ে চয়নের কাজটা করতে পারেন, তা হলে তাতে থিয়েটারের আরও ভাল হবে।

এ না হয় গেল বাংলা নাটকের কথা। নাসিরুদ্দিন শাহ, মহেশ দত্তানি, লিলেট দুবে, শাবানা আজমি-রা কলকাতায় এসে হিন্দি এবং ইংরেজিতে নাটক করে যান। তাঁদের নাটকের কি টেলিভিশন প্রিমিয়ার হবে কোনও দিন? আপাতত বাংলা নাটককেই প্রাধান্য দেবে এই নাট্য অনুষ্ঠান, বলছেন সম্রাট। তবে এই উদ্যোগ যদি দর্শকের ভাল লাগে অন্য ভাষার নাটকও দেখা যেতেই পারে!

priyanka dasgupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy