এক মাস আগের কথা। ধোনির সঙ্গে অর্চনা বিজয়ার দেখা হয় মুম্বইয়ের এক জিমের সামনে। অর্চনার ‘খতরোঁ কী খিলাড়ি’-র শ্যুটিং -এর আগে। সেই ২০০৭ থেকে আলাপ দু’জনের। কিন্তু একে অপরকে না কি সেদিন চিনতেই পারেননি। “ধোনিকে কেমন রোগা রোগা লাগছিল দেখতে। জিজ্ঞেস করেছিলাম কী ব্যাপার, হঠাত্ এ রকম রোগা লাগছে কেন? ও বলে শরীরচর্চা করতে গিয়ে না কি ১ কেজি ওজন কমিয়েছে। আমি বললাম অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছ, কী মজা তোমার! তখন ও বলে কী আর মজা? আবার চার মাস কাটাতে হবে ওখানেই।”
অর্চনার ভাষায়, তার পরই ধোনি ‘বোমা’টা ফেলেন। “ও বলে আমাকে ও চিনতেই পারেনি। কারণ আমাকে না কি এত ফিট দেখতে লাগছিল। ধোনি ইয়ার্কি করতে সিদ্ধহস্ত। ওর দিকে তাকিয়ে একটু রাগী রাগী গলা করে বলেছিলাম আমি তো সব সময়ই ফিট ছিলাম। এখন এটা বলার মানে কী?” এক নিশ্বাসে কথা বলে চলেন অর্চনা।
ধোনি-র আরও ছবি দেখতে হলে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (আইফোন/ আইপ্যাড)
অথবা
গুগল প্লে স্টোর (অ্যান্ড্রয়েড) থেকে ABP AR APP-টি
ডাউনলোড করে এই ছবিটি স্ক্যান করুন
চার মাস অস্ট্রেলিয়া গিয়ে কাটানো নিয়ে এত গল্প করার পর হঠাত্ এ রকম একটা সিদ্ধান্তের খবর শুনে হতভম্ব হয়ে যাননি অর্চনা? “সত্যি বলব? এটা একদম ধোনি নিজস্ব স্টাইলেই করেছে,” অর্চনা বলেন। “ও খুব ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেয়। তা ছাড়া এই ধরনের সিদ্ধান্ত তো আর একদিনে নেওয়া যায় না।” মনে হয়নি কেন কাউকে ধোনি সেটা আগে থেকে জানাননি? “ও হয়তো ভেবেছে যে জানালে সাঙ্ঘাতিক গণ্ডগোল তৈরি হবে। ও এ সবের মধ্যেই যায়নি। ধোনি বুদ্ধিমান। ও সব থেকে ভাল জানে কখন ওর টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া উচিত। আর সেটা ঘোষণা করার ধরনটাও ওর একান্ত নিজস্ব।”
তারপর বলেন, এই যে ঢাকঢোল না পিটিয়ে খানিকটা রহস্য রেখে দেওয়া এটাই ধোনির সেক্স অ্যাপিলের গোপন রহস্য। “এত দিন ধরে ওকে দেখছি। এই যে সব কিছু শান্ত ভাবে করা যায়, এর মধ্যেই তো ধোনির সেক্স কোশেন্ট লুকিয়ে। কোনও অন-ইয়োর-ফেস ফ্ল্যামবয়েন্স নেই। লাজুক, একেবারে রিজার্ভড। প্রয়োজনে দুষ্টুমিটাও করতে পারে। এ এক অদ্ভুত সমন্বয়। সেটাই ধোনির ম্যাজিক।”
মঙ্গলবার দুপুরে অবসরের কথাটা শুনে অর্চনার কি মনে হয়েছিল এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হল? “ওরকম বলব না... মন খারাপের মধ্যেও এটাই ভাবছি যে ধোনিকে বলব একটু চাপ কম থাকলে চলে এসো। ২ ফেব্রুয়ারি তাইল্যান্ডে আমার বিয়ে। ওটাই তোমার আমাকে দেওয়া শ্রেষ্ঠ বিয়ের উপহার হবে। কিন্তু ও কি পারবে আসতে? তখনও তো খেলা চলবে...”
কথা বলতে বলতে অর্চনা চলে যান প্রথম বার ধোনির সঙ্গে মোলাকাত হওয়ার স্মৃতিতে। “যত দূর মনে পড়ছে, ক্রিকেট দুনিয়ায় আমার প্রথম পেশাদার অ্যাসাইনমেন্ট নাগপুরে ছিল। ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখন ধোনির চুলটা লম্বা। তাতে আবার স্ট্রিকস। আজ অবশ্য অনেক বদলে গিয়েছে। চুল ছোট। গালে সাদা দাড়ি...”
এত বছরের আলাপ। ওকে কি পাল্টাতে দেখেছেন? “এখনও ওর মধ্যে একটা ‘স্মল টাউন বয়’ ব্যাপার আছে। এত কিছু ঘটে যাচ্ছে। তারও মধ্যে দেখি ধোনি কী ঠান্ডা। কোনও চাপেই বিচলিত নয়। ক্যাপ্টেন্সি ব্যাপারটা তো শুধু কে কখন ব্যাটিং করবেন বা টিমে থাকবেন, সেটা নয়। এত জন খেলোয়াড়ের ইগো ম্যানেজ করা। সেটা কী চাট্টিখানি কথা?”
তার পর নিজেই বলেন, ধোনি অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর নানা মুনির নানা মত শুনেছেন তিনি। “সব চেয়ে বেশি চোখে পড়েছে সচিনের ট্যুইট। ওদের দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে তো কম গুজব শোনা যায়নি। কিন্তু সচিনকেও দেখলাম এ সবের পরে লিখল যে ‘অলওয়েজ এনজয়েড প্লেয়িং টুগেদার। নেক্সট টার্গেট ২০১৫ ওয়ার্ল্ড কাপ মাই ফ্রেন্ড।’ বেশ ‘লোডেড’ টুইট,” বলেন অর্চনা।
কথায় কথায় স্বীকার করেন তাঁর মনও বেশ ভারাক্রান্ত। “একবার ভাবছি এখনও তো অনেক টেস্ট ক্রিকেট ছিল ওর মধ্যে। কিন্তু তবু এই নিয়ে আমি জ্ঞান দেওয়ার কেউ নই। কারণ, এটুকু জানি যে ধোনি কুল, কিন্তু কাপুরুষ নয়। মাঠে হেরে যাওয়ার ভয়ে ও হাত তুলে টাটা বলে বেরিয়ে যাওয়ার পাত্র নয়। বাঁচোয়া একটাই। ক্রিকেট থেকে ও অবসর নেয়নি। ওর হেলিকপ্টার শট-টা এখনও দেখতে পাব বিশ্বকাপে। আইপিএল-এ।”
গলাটা ভারী হয়ে আসার ঠিক আগে অর্চনা নিজেকে সামলে নেন। বলেন, “অনেকে জানেন ধোনি কুল। তবে আমি জানি ধোনি কত বড় প্র্যাঙ্কস্টার। হি হ্যাজ আ গ্রেট সেন্স অব হিউমার।”
মনে পড়ে যায় আইপিএল-এর কত ঘটনা। “যখন আইপিএল-এর জন্য শ্যুট করতাম, দেখেছি ক্যামেরার পিছনে ও দাঁড়িয়ে আমাকে কী হাসানোর চেষ্টা করত! আর আমি শ্যুট করতে করতে ভাবতাম এই বুঝি সব গুলিয়ে গেল। বাচ্চাদের মতো ভিডিয়ো গেমস খেলতে ভালবাসে ও। খুব কম লোকে জানে ও খুব ভাল ফোটোগ্রাফার। আর বাটার চিকেন কী যে ভালবাসে খেতে! এটা এতদিনে গোটা দুনিয়াই জানে। ওর সঙ্গে কত যে দিওয়ালি পার্টি করেছি। আমার জন্মদিন আর দিওয়ালি সব ওই নভেম্বর মাসেই। তাই অনেক সময় সিরিজ কভার করতে গিয়ে এই অনুষ্ঠানগুলো একসঙ্গে কাটিয়েছি।”
এর পর যখন ধোনির সঙ্গে দেখা হবে, তখন কী বলবেন অর্চনা? “এখন জানি ফোনে-ফোনে ধোনি জর্জরিত থাকবে। এর মধ্যে ভিড় বাড়াব না। কিছু দিন পর ওকে ফোন করব। না, কেন এ ভাবে অবসর নিল, এ সব নিয়ে কচকচানির দরকার নেই। শুধু জিজ্ঞেস করব: ‘হে, হাউ’জ লাইফ ট্রিটিং ইউ উইথ লেস প্রেশার?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy