Advertisement
E-Paper

নায়িকার ডিপ্রেশন

পৃথিবী যাদের ব্যাকুল হয়ে চায়। তারাই কেউ কেউ গভীর অবসাদে নিজেদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিতে চাওয়ার নেশায় মাতে। কেন? রহস্য সমাধানের চেষ্টায় প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।আজও পারভিন ববিকে নিয়ে মহেশ ভট্টর স্মৃতিচারণা শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। মহেশ তখন বিবাহিত। তবে পারভিনের প্রেমে তিনি পাগল। এক রাতে দু’জনে খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। লাভ মেকিংয়ের ঠিক আগে পারভিন নাকি তাঁকে বেছে নিতে বলেছিলেন জীবনের একজনকে।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০০:০০
জিয়া খান

জিয়া খান

আজও পারভিন ববিকে নিয়ে মহেশ ভট্টর স্মৃতিচারণা শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। মহেশ তখন বিবাহিত। তবে পারভিনের প্রেমে তিনি পাগল। এক রাতে দু’জনে খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। লাভ মেকিংয়ের ঠিক আগে পারভিন নাকি তাঁকে বেছে নিতে বলেছিলেন জীবনের একজনকে। “মহেশ, ইটস ইদার মি অর ইউজি।” ইউজি বলতে মহেশ ভট্টর দার্শনিক বন্ধু ইউজি কৃষ্ণমূর্তি। পারভিন তত দিনে জেনেটিক বায়োকেমিক্যাল ডিজঅর্ডার- প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়ার শিকার হয়ে গিয়েছেন। সাঙ্ঘাতিক সন্দেহবাতিক। সারাক্ষণ ভেবে চলেছেন যে অমিতাভ বচ্চন তাঁকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু পারভিন যে রাতে মহেশকে বললেন ইউজি আর তাঁর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে, তখন মহেশ আর সহ্য করতে পারেননি। সঙ্গমের ঠিক আগের মুহূর্তে নিজেকে সামলে নেন তিনি। জামা পরে বেরিয়ে যান ঘর থেকে। পিছন থেকে পারভিনের গলা ভেসে আসে। সম্পূর্ণ নগ্ন পারভিন। “মহেশ, মহেশ” বলে চিত্‌কার করছেন তিনি। ইচ্ছে ছিল পারভিনকে থামিয়ে এটা বলার যে, এ ভাবে রাস্তায় বেরোনো উচিত নয়। তবে সে রাতে মহেশ তা পারেননি। সে রাতেই সম্পর্কে ইতি টেনে দেন। তবে ২০০৫ সালে পারভিন যখন রহস্যজনক ভাবে মারা যান, তখন মহেশই এগিয়ে এসেছিলেন তাঁকে দাহ করার জন্য। মহেশ জানতেন সাফল্যের চরম শিখরে থেকেও পারভিন ছিলেন চূড়ান্ত একাকী।

পারভিন ববি

তবে পারভিনের মতো একই সমস্যায় না থাকলেও অবসাদে চলে যাওয়া কিন্তু নায়িকাদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়। পারভিনের সমসাময়িক এক ডাকসাইটে সুন্দরী নায়িকাও নাকি সত্তরের দশকে তাঁর এক সহ-অভিনেতার সঙ্গে ব্রেক আপ হয়ে যাওয়ার পর সুইসাইডের চেষ্টার সিলসিলা। সেই অভিনেত্রী আজও মাঝেমধ্যে সিনেমা করেন। একই ভাবে আরও এক অভিনেত্রী এক বিবাহিত নায়কের সঙ্গে প্রেমে দাগা খাওয়ার পরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে এই অবসাদজনিত সুইসাইডের চেষ্টার খবর নিয়ে লেখালিখি হলেও তাঁদের নাম কোনও দিনই কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। সিল্ক স্মিতা যদিও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করার আগে চিঠি লিখে গিয়েছিলেন। তাতে লিখেছিলেন অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। আর তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া। উনিশ বছর বয়সে দিব্যা ভারতী যখন পাঁচ তলা বাড়ির জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তখন ফিল্ম দুনিয়ার সব মহলেই রটে যায় তাঁর অবসাদজনিত মৃত্যু নিয়ে গুজব। আজও জানা যায়নি তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন, নাকি কোনও অ্যাক্সিডেন্টের জন্য ঘটেছিল সেই মৃত্যু। সেই একই রহস্য আজও ঘিরে রয়েছে ‘নিঃশব্দ’ অভিনেত্রী জিয়া খানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।

রহস্যজনক মৃত্যু প্রসঙ্গে হলিউড মহলে প্রায়ই উঠে আসে মেরিলিন মনরোর নাম। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মেরিলিনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাঁর বাড়িতে। দাবি করা হয়েছিল যে বেশি ঘুমের ওষুধ খাওয়ার জন্যই মেরিলিনের মৃত্যু হয়েছিল।

টলিউডের গসিপ করিডোরে কান পাতলেও অবসাদে ভোগা নায়িকাদের হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা শোনা যায়। তার সঙ্গে রয়েছে মুঠোমুঠো স্লিপিং পিল খাওয়ার ঘটনাও। তবে শুধুমাত্র ‘সচ্ কা সামনা’র একটা এপিসোডে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়া টলিউডের আর কোনও নায়িকার মুখেই তাঁদের অবসাদ জনিত সুইসাইড অ্যাটেমপ্ট নিয়ে কোনও স্বীকারোক্তি শোনা যায়নি। যদিও টিভি আর ফিল্মের আধ ডজন অভিনেত্রী এমন চেষ্টা করেছেন। তার মধ্যে একেবারে হালফিলের ঘটনাও রয়েছে।

তবে এ সবের মধ্যে একটা প্রশ্ন বারবার ফিরে আসে। সৌন্দর্য আর আত্মহত্যা করার প্রবণতার মধ্যে কি কোনও সম্পর্ক রয়েছে?

বিবেকা বাবাজি

যেটা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়, তা হল নায়িকাদের ইগো। কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না যে, সারা দুনিয়া তাঁদের চাইলেও এমনও একজন আছেন যাঁর কাছে তিনি ব্রাত্য। তার সঙ্গে যোগ হয় তাঁদের ইনসিকিওরিটি। প্রত্যেক শুক্রবার সিনেমা হিট বা ফ্লপের উপর নির্ভরশীল তাঁদের কেরিয়ার। ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট বা দোকান উদ্বোধনের চাহিদাও নির্ভর করে তাঁদের জনপ্রিয়তার উপর। আর এই জনপ্রিয়তা এতটাই ঠুনকো যে সেখানে ইনসিকিওরিটি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

নতুন হিরোইনদের সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পারলে তখন চেপে ধরে অন্যরকমের ফ্র্যাস্টেশন। তার অভিব্যক্তি ঘটে নানাধরণের ডেসপারেট কাজের মধ্যে। লাইমলাইটে থাকতে থাকতে একটা সময় আসে, যখন তাঁরা অ্যাটেনশন ছাড়া বাঁচতে ভুলে যান। অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া মিডিয়া কভারেজ যদি কমে আসতে শুরু করে, তখন অচিরেই তাঁরা ডিপ্রেশনে চলে যান। নায়কদের সেই সমস্যাটা কম। কারণ স্ক্রিনে তাঁদের টিকে থাকার সময় নায়িকাদের থেকে অনেক বেশি। গ্ল্যামার দুনিয়ার ইনসিকিওরিটি তখন নায়িকাদের সর্বাগ্রে গ্রাস করতে শুরু করে। একদিকে আকাশচুম্বী ইগো, অন্যদিকে কাজ কমে আসার হতাশা।

২০১০ সালে মডেল-অভিনেত্রী বিবেকা বাবাজিকে তাঁর বাড়িতে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পাবলিসিস্ট ডেল ভাগওয়েগার জানান, “নায়িকারা অনেক ক্ষেত্রেই ডিপ্রেশনে ভোগেন। এর কারণ তাঁদের চুড়ান্ত এক্সপেক্টেশন আর সাঙ্ঘাতিক ইনসিকিওরিটি। তবে বিবেকার ক্ষেত্রে ওটা আত্মহত্যা ছিল না।”

মুম্বই নিবাসী ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সীমা হিঙ্গোরানিও একই কথা বলছেন, “সৌন্দর্য নায়িকাদের মূলধন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যখন জৌলুস কমে আসতে থাকে, তখন স্ট্রেস হতে পারে,” বলছেন সীমা।

জনপ্রিয় নায়িকাদের ক্ষেত্রে আরও একটা সমস্যা হয় যখন তাঁদের পার্টনাররা তাঁদের সন্দেহ করতে শুরু করেন। “যে কোনও পুরুষ যতই প্রোগ্রেসিভ কথা বলুন না কেন, হিরোইন গার্লফ্রেন্ড হলে সন্দেহ করতে ছাড়ে না। বাইরে বড় বড় কথা বলে। কিন্তু দু’বার হিরোইন গার্লফ্রেন্ড ফোন না-ধরলে তাঁরা মনে করেন, নায়িকা অন্য কারও সঙ্গে ‘ব্যস্ত’,” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেত্রী জানান।

সম্পর্কে এই ধরনের গণ্ডগোল হলে তার ঝড় সামলানোটা কঠিন হয়ে পড়ে। সোশাল মিডিয়ার দৌলতে আরও ভয় যে, এ বার দুনিয়া মনে করবে যে তিনি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে অক্ষম। বা অযোগ্য। “রিলেশন ভেঙে গেলে নায়িকাদের সেটা খুব অ্যাফেক্ট করে। তার কারণ সে খবর গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে যায়। তাতে নায়িকাদের সেল্ফ এস্টিমে আঘাত লাগে,” বলছেন সীমা। তবে, সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নায়িকারা থাকেন ডিনায়াল মোডে। সব কিছু চেপে রেখে দেন। আর যখন জানাতে বাধ্য হন, তখন দেরি হয়ে যায়।

পরভিনের সেই অবসাদের চেহারা আজও মুছে ফেলতে পারেননি মহেশ ভট্ট। ফেলতে চান-ও না। তবে বলেন, “যতবার আমি নায়িকাদের সুইসাইড অ্যাটেম্পটের কথা শুনি, আমার তখন মনে হয় আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সব থেকে বড় সমস্যা হল নৈঃশব্দের পলিটিক্স। স্টিগমার ভয়। আমাদের এটাকে ফাইট করতেই হবে। আর তা না হলে তৈরি থাকতে হবে চোখের সামনে নায়িকাদের জীবনের ট্র্যাজেডির সাক্ষী থাকার।”

এড়াতে কী করবেন

• পজিটিভ সাহিত্য এই মানসিক অবস্থা থেকে বের করে আনতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে বিখ্যাত মানুষের জীবনী। যাঁরা সাফল্যের আগে বহু বার অসাফল্যও দেখেছেন।

• একবার হলেও অন্য কাছের মানুষের কথা ভাবুন সে সন্তান, বাবা-মা যেই হোক, আপনার কিছু হলে তাঁদের কী দশা হবে।

• মৃত্যুর পরেও মানুষ যাতে মনে রাখে, তার প্রতি নজর অনেকেরই। মনে রাখবেন, এই একটি সিদ্ধান্ত কিন্তু জীবনের সব ভাল কাজকে ভুলিয়ে দিতে পারে। তখন লোকে তাঁকে ভীরু, কাপুরুষ, পালিয়ে যাওয়া মানুষ হিসেবেই দেখে।

• কোনও কাছের মানুষের সঙ্গে দুঃখ, হতাশা শেয়ার করুন, যাঁকে আপনি মেনে চলেন।

• এর পরেও একই মনোভাব থেকে গেলে মনোবিদের পরামর্শ নিন।

পরামর্শ: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. রিমা মুখোপাধ্যায়।

heroine priyanka dasgupta suicide attempt mental depression
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy