Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিহুতে মেতেছে অসম

‘ফুল ফুলিসে বসন্তর, তুমি জানমণি বহাগর, প্রতিটু বহাগতেস মরম যাচু তুমাক অন্তরর... ভোটের ময়দানে বিহুর ঢোলকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে নেতাদের ঢাকবাদ্যি। তবু, গরু বিহুর সকাল থেকে মুগা-তসর, পেপা-গগ্নার চেনা দাপট রাজ্যের সব পাড়া-মাঠ-প্রান্তরে। পরের ভোট ২৪ এপ্রিল। আপাতত কয়েক দিন রাজা-প্রজা-রাজনীতি দূর হঠো! আম-আদমির উৎসব-উচ্ছ্বাসে চেনা বিহুর পরব তার রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধের পসরা নিয়ে হাজির। অসমে যেমন বিহু, তেমন মণিপুরে মেইতেইদের নববর্ষ ‘সাজিবু (বৈশাখ মাস) চেইরাওবা’ উৎসব। একই সঙ্গে মণিপুরে চড়ক পুজো। অরুণাচলে মালিনী মেলা।

অসমের ‘জামাই’ মহাকাশচারী মাইক ফিনকে বিহুর ফুলাম গামোসা নিয়ে গিয়েছিলেন মহাকাশে। সেই গামোসা নিয়ে এ বার বঙ্গোপসাগরের ৬০ ফুট নীচে বিহু নাচ করলেন আইআইটি গুয়াহাটির গবেষক তথা ইঞ্জিনিয়ার বিক্রমজিৎ কাকতি। বহাগ বিহুর সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে আন্দামানে সাগরের নীচে ছবি তোলার কর্মশালায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন কাকতি। তিনি জানান, বিহুর দিন ডুবুরির পোশাক পরেই হ্যাভলক দ্বীপে সাগরের নীচে, ফুলাম গামোসা নিয়ে তিনি বিহু নাচ করেন। ছবি বিক্রমজিৎ কাকতির সৌজন্যে।

অসমের ‘জামাই’ মহাকাশচারী মাইক ফিনকে বিহুর ফুলাম গামোসা নিয়ে গিয়েছিলেন মহাকাশে। সেই গামোসা নিয়ে এ বার বঙ্গোপসাগরের ৬০ ফুট নীচে বিহু নাচ করলেন আইআইটি গুয়াহাটির গবেষক তথা ইঞ্জিনিয়ার বিক্রমজিৎ কাকতি। বহাগ বিহুর সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে আন্দামানে সাগরের নীচে ছবি তোলার কর্মশালায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন কাকতি। তিনি জানান, বিহুর দিন ডুবুরির পোশাক পরেই হ্যাভলক দ্বীপে সাগরের নীচে, ফুলাম গামোসা নিয়ে তিনি বিহু নাচ করেন। ছবি বিক্রমজিৎ কাকতির সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৫
Share: Save:

‘ফুল ফুলিসে বসন্তর, তুমি জানমণি বহাগর, প্রতিটু বহাগতেস মরম যাচু তুমাক অন্তরর...

ভোটের ময়দানে বিহুর ঢোলকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে নেতাদের ঢাকবাদ্যি। তবু, গরু বিহুর সকাল থেকে মুগা-তসর, পেপা-গগ্নার চেনা দাপট রাজ্যের সব পাড়া-মাঠ-প্রান্তরে। পরের ভোট ২৪ এপ্রিল। আপাতত কয়েক দিন রাজা-প্রজা-রাজনীতি দূর হঠো! আম-আদমির উৎসব-উচ্ছ্বাসে চেনা বিহুর পরব তার রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধের পসরা নিয়ে হাজির। অসমে যেমন বিহু, তেমন মণিপুরে মেইতেইদের নববর্ষ ‘সাজিবু (বৈশাখ মাস) চেইরাওবা’ উৎসব। একই সঙ্গে মণিপুরে চড়ক পুজো। অরুণাচলে মালিনী মেলা।

এ বার বিহুর আগে বা গরু বিহুর দিন বৃষ্টি হয়নি। গুয়াহাটিতে ঢুলিয়া-নাচনিদের পায়ের তালে, ধুলোয় ঢাকল জাজেস ফিল্ড, লতাশিলের মাঠ। এই মাঠকে কেন্দ্র করেই ১৯৫২ সালে গুয়াহাটি বিহু সম্মিলনীর আত্মপ্রকাশ। কৃষিপ্রধান সমাজে বিহু গবাদি আর গৃহস্বামীর বন্ধনের প্রতীক। দীঘলাটি গাছের পাতা গরুর গায়ে বুলিয়ে গাওয়া হয় ‘লাও খা, বেঙেনা খা, বছরে বছরে বাড়হি যা।’ দিনের শুরুতে নবীনরা ‘হুসরি’র দল বেঁধে পাড়ায় পাড়ায় গান গেয়ে প্রবীণদের আশীর্বাদ নেয়। তারপর থেকেই বিহুটুলিতে সমবেত নাচ-গান। এ বার গুয়াহাটির অন্তত ১০০টি বিহুটুলিতে সর্বজনীন বিহুর আসর বসেছে। জাজের ফিল্ডের ‘মুকলি বিহু’র আসর, গুণীজন সম্মাননা। লতাশিলের মাঠে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বিহু নাচ। গগৈ বলেন, “বিহু আমাদের নতুন করে কাজের প্রেরণা ও কর্মশক্তি যোগায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বিহু সংস্কৃতি। অসমের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ়তর করে এই উৎসব।”

আলফা, এনডিএফবি-সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনও নিজেদের শিবিরে বিহু পালন করে। পরেশপন্থী আলফা গত বারের মতো, এ বারেও সতর্ক করে বলেছে, বিহুর আসরে হিন্দি নাচ-গান বা অশালীন অনুষ্ঠান হলে তারা ব্যবস্থা নেবে। তবে, জুবিন গর্গ-সহ অন্য শিল্পীরা আগেই ঘোষণা করেছেন, গান বা অনুষ্ঠানের উপরে জঙ্গি নিষেধাজ্ঞা তাঁরা মেনে নেবেন না।

সব মিলিয়ে মূল্যবৃদ্ধি, গদি দখলের লড়াই, সেনসেক্স আপাতত বাক্সবন্দী। গায়ে ‘বিহু, বিহু লেগেছে’ যে! প্রায় ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র আবহে, প্রকৃতি প্রেমের মলাটে প্রচ্ছন্ন দেহতত্ত্বের সাহসী ইঙ্গিত। ‘জানমণি তুমিয়েই মুর মরমর গহনা, তুমেই মুর সাগরর মুকুতা, তুমেই মুর জিওন লগরি।’ এই যে গত একমাস ধরে, নানা ঠাঁইতে বিহু কর্মশালায় লাস্য শেখা হল, তার বাস্তব প্রয়োগ তো সবে শুরু। চার থেকে চুরাশি তাই ‘বিহু আনন্দিয়া, বিহু বিনন্দিয়া’র সুরে মত্ত। বিহুর মেলায় হরেক দামের মেখলা, গামোসা, পিঠা, নাড়ু হৈ হৈ করে বিক্রি হচ্ছে। মেয়েদের জন্য গামখারু, গলায় গোলপোটা, কানে সোনার থুরিয়া, ডুগডুগি, বেনা, জেথিপোতাই, জাপি, সিলিখা, ঢুল, লোকাপারো ঝুঠো গয়নারও ব্যাপক চাহিদা।

অন্য দিকে, মণিপুরে সাজিবু মাসের পয়লা তারিখে শুরু চেইরাওবা উৎসব। মণিপুরের রাজ-ইতিহাস ‘চেইথারল কুমবাবা’ অনুযায়ী, খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ সালেও চেইরাওবা পালন হত। তবে, তখন চান্দ্রমাস অনুসরণ করা হত। রাজা ভেইগ্যাচন্দ্র বা ভাগ্যচন্দ্র (১৭৬০ সাল)-এর আমল থেকে চড়ক পুজোর দিনই চেইরাওবা উৎসব পালন শুরু হয়। মেইতেইরা ঘরবাড়ি সাফ করে বিভিন্ন ভাবে সাজান। প্রথম দিন, ঘরের ছেলেরা বাড়ির কাছের পাহাড়ের মাথায় চড়েন। লাইনিংথৌ সানামাহি, ইমা লেইমারেল সিদাবির মতো দেবীদের খাবার উৎসর্গ করে শুরু হয় উৎসবের ‘স্পেশ্যাল মেনু’। রাস্তায় চলে নৃত্য-গীত।

বিহু, চেইরাওবার পাশাপাশি, অরুণাচলের লিকাবালিতে ঐতিহাসিক ‘মালিনী মেলা’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bihu assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE