Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সরি আশাজি, জন্মদিনে শুধু ভাল ভাল কথা বলতে পারছি না

বিস্ফোরক উষা উত্থুপ। আজ আশা ভোঁসলের একাশিতম জন্মদিনে। শুনলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত আজ আশাজির জন্মদিন। কোনও কিছু বলার আগে প্রথমেই জানাই অনেক শুভেচ্ছা। সুস্থ থাকুন, আশাজি। ঈশ্বরের কাছে সেটাই কামনা করি। আমার কাছে টাকা থাকলে আজ ওঁর জন্য গড়িয়ে দিতাম একটা হিরের নেকলেস। তাতে লকেট হিসেবে খোদাই করে দিতাম ওঁর নামের ইনিশিয়াল— ‘এ-বি’। শুভেচ্ছাবার্তায় লিখতাম: ‘ডায়মন্ডস আর ফরএভার। অ্যান্ড সো আর ইউ।’

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

আজ আশাজির জন্মদিন।

কোনও কিছু বলার আগে প্রথমেই জানাই অনেক শুভেচ্ছা। সুস্থ থাকুন, আশাজি। ঈশ্বরের কাছে সেটাই কামনা করি।

আমার কাছে টাকা থাকলে আজ ওঁর জন্য গড়িয়ে দিতাম একটা হিরের নেকলেস। তাতে লকেট হিসেবে খোদাই করে দিতাম ওঁর নামের ইনিশিয়াল— ‘এ-বি’। শুভেচ্ছাবার্তায় লিখতাম: ‘ডায়মন্ডস আর ফরএভার। অ্যান্ড সো আর ইউ।’

ওঁর গানের সুঘ্রাণকে কুর্নিশ জানিয়ে পাঠাতাম একগোছা লাল গোলাপ। আর ওঁর খোঁপার জন্য থাকত জুঁই ফুল।

আজ যখন লতা মঙ্গেশকর আর আশাজির তুলনা করতে বলা হয়েছে, তখন কয়েকটা সত্যি কথা বলে যেতে চাই। কাউকে আঘাত করব বলে এ কথা বলছি না।

আমি নিজের লিমিটেশন সম্পর্কে সতর্ক। জানি একশো বার জন্ম নিলেও আমি লতা মঙ্গেশকর বা আশা ভোঁসলে হতে পারব না। ওঁদের সামনে আমি কিছুই না। তাই ওঁদের বিচার করার জায়গায় আমি নেই। কোনও দিন থাকতেও চাই না। যেটুকু আজ বলছি, শুধুমাত্র নিজের জীবনের উপলব্ধি থেকেই বলছি।

আমার মতো ক্ষুদ্র কীটকে ভয় পেলেন কেন

সিক্সটিজের শেষ দিকে হিন্দি ছবির ১ থেকে ১০০ সব গানই লতাজি গাইতেন। ১-১০০ পর্যন্ত কোনও গানই অন্য কোনও শিল্পীর কাছে প্রায় যেতও না। সে যুগের প্রথম সারির সব নায়িকা মীনাকুমারী, মধুবালা, নার্গিস, ওয়াহিদা রহমান, বৈজয়ন্তিমালা সবার লিপে লতাজির গান। এই নায়িকাদের যেটুকু ক্ষমতা ছিল, তাতে একটা বিরাট অবদান ছিল লতাজির। মনে আছে সাড়ে তিন টাকা দিয়ে রেকর্ড কিনে আমি লতাজির গান শুনতাম। মাথায় একটা ওড়না জড়িয়ে লতাজির গাওয়া ‘বিছুয়া...’, ‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া’ গাইতাম।

সুরকাররা তখন পাগলের মতো ছুটতেন ওঁর পিছনে। কত গল্পই না রয়েছে! কখনও শুনেছি মেজাজ দেখাচ্ছেন। কখনও অমুক মিউজিশিয়ানকে অপছন্দ করে বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। ছবিতে সব গান গাইতে না দিলে ছবি করবেন না বলে শর্ত রাখছেন। আর সবাই এই সব শর্ত মাথা পেতে নিতেন। মনে আছে ‘নসিব’ ছবিতে টাইটেল গানটা আমার গাওয়ার কথা ছিল। লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলালের কম্পোজিশন। ছবিতে হেমামালিনী এক গায়িকার ভূমিকায়। তাঁর লিপে ‘মেরে নসিব মে...’ হঠাৎ একদিন শুনলাম আমার পায়ের তলা থেকে গানটা চলে গেল। গানটা গাইবেন লতা মঙ্গেশকর!

এই সময় আশা থেকেছেন সেকেন্ড ক্যাটেগরিতে। ১০১ নম্বর গানটা গাওয়াতে হলে সুরকাররা যেতেন আশা ভোঁসলের কাছে। এক সময় লতাজি যা যা করে ক্ষমতার শীর্ষে থেকেছেন, সুযোগ পেয়ে প্রায় একই জিনিস হুবহু ফলো করেছেন আশাজি। পরের দিকে আশাজির ক্ষমতার প্রধান কারণ ছিল পঞ্চমের সান্নিধ্য। সম্পর্ক। ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’তে প্রথমে কথা হয়েছিল ‘দম মারো দম’ গানটা আমি আর লতাদি গাইব। সেই মতো রিহার্সালও হয়েছিল। রিহার্সালে পঞ্চমদা বলেছিলেন এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে জানাবেন কবে রেকর্ডিং হবে। কিন্তু এক মাস কেটে গেল। কোনও ফোন এল না। শেষে আমি পঞ্চমদাকে ফোন করি। মনে আছে পঞ্চমদা বলেছিলেন, “উস গানে মে কোই প্রবলেম হ্যায়। অন্য একটা গান তোর জন্য বেঁধেছি।” তার পর আমাকে দিয়ে ‘আই লভ ইউ’ গানটা গাইয়েছিলেন। ‘দম মারো দম’ গানটা না গাইতে পেরে মনখারাপ হয়েছিল খুব। ভেবেছিলাম ওই গানটা হিট হলে আমি ৩৬৫ দিন শো পাব। কিন্তু কখনও মনটা তেতো হয়ে যায়নি। সে সময় প্রেম করছি। তার পর বিয়ে। প্রেগনেন্সি। মাঝেমধ্যে দুঃখ হত ঠিকই। তবে জীবনে তখন এত কিছু হচ্ছিল যার জন্য মনটাকে ডাইভার্ট করে দিতে পেরেছিলাম। তবে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরপাক খেত। আমি তো ক্ষুদ্র কীট। কোনও ভাবেই আমি ওঁদের পোটেনশিয়াল ডেঞ্জার হতে পারব না। আমার একটাই লক্ষ্য। ফিল্মে গান হিট হলে আমি সেটা দিয়ে কলকাতার পাড়া শো-তে গাইতে পারব। সেটাও আমার থেকে কেন নিয়ে নিলেন ওঁরা?

গলায় ঝুলত ওপি নায়ারের লকেট

মনে আছে প্রথম যে বার আশাজির সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হয়েছিল। আমি তখন মুম্বইয়ের ‘টক অব দ্য টাউন’য়ে পারফর্ম করি। ৬৮-৬৯-এর কথা। সে সময় ওই নাইটক্লাবে আশা ভোঁসলে আসতেন আমার গান শুনতে। সঙ্গে থাকতেন ওপি নায়ার। কোনও দিন যে আশাজি

সামনে এসে আমার গানের প্রশংসা করেছেন, এমনটা নয়। তবে ওঁর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতাম যে আমার গান ওঁর পছন্দ হয়েছে। মনে আছে আশাজি গলায় পরতেন একটা বিশাল বড় লকেট। তাতে থাকত ওপি নায়ারের ছবি। দেখে ভাবতাম কী ‘কুল’ একজন শিল্পী। লকেটে একজন সুরকারের ছবি লাগিয়ে ঘুরছেন!

তবে সাজপোশাকের দিক থেকে আশাজি তখনও তেমন ফ্যাশনদুরস্ত ছিলেন না। পরের দিকে যখন ওবেরয়তে পারফর্ম করতাম, তখন আশাজিকে দেখেছি পঞ্চমের সঙ্গে আসতে। তত দিনে ইন্ডাস্ট্রিতে ওঁদের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’র ঘটনাটাও আমার মনে ছিল। তবু খারাপ লাগাটা বুঝতে দিতাম না। ওঁদের জন্য কেক অর্ডার করতাম। ফুল পাঠিয়ে দিতাম ওঁদের টেবিলে। কারণ কী জানেন? আজও বিশ্বাস করি, গানে গানে পে লিখ্খা হোতা হ্যায় গানেওয়ালে কে নাম!

আস্তে আস্তে লক্ষ করলাম আশাজি নিজের সাজপোশাক নিয়ে খুব সচেতন হতে শুরু করেছেন। এত পাওয়ারফুল মহিলাদের সচরাচর ইমেজ নিয়ে সচেতনতা দেখা যায় না। আশাজি অন্য রকম। আজও নখগুলো কী সুন্দর করে ম্যানিকিওর করা। দেখে ভাল লাগে। আজও কত ভেবেচিন্তে ঠিক করেন কোথায় কী পরে যাবেন। এখনও এ বিষয়ে ফোকাসড। তবে কোনও দিন একটা ইউনিফর্ম আশা ভোঁসলে লুক তৈরি করেননি তিনি। সেখানে কিন্তু লতাজি নিজের একটা লুক তৈরি করেছেন। দুটো বিনুনি বাঁধতেন। আজও। এই বয়সেও ওই একই লুক।

অসম্ভব ফ্লেক্সিবল গলা

লতাজি যখনই গেয়েছেন, নিজস্ব একটা ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যেই থেকেছেন। বাট আশাজির ভয়েস ইজ ফ্লেক্সিবল ফর দ্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। দশ বছর আগেও আশাজির গলায় আমি শিয়ার ম্যাজিক খুঁজে পেতাম। আজও নিজেকে রিইনভেন্ট করার একটা তাগিদ রয়েছে ওঁর মধ্যে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে হয়তো নিজের কিছু এসেনশিয়াল কোয়ালিটি হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকছে। এফর্টলেস, সেনসুয়াস, দুষ্টুমি ভরা আওয়াজ আজকের আশা ভোঁসলের গলায় আমি সেটা মিস করি।

দিদিকে দেখাতে গিয়ে

মঙ্গেশকর বোনেদের মধ্যে আরও একটা তফাত লক্ষ করেছি। লতাদি হলেন কমপ্লিট ইনট্রোভার্ট। আর আশাজি সে তুলনায় অনেক বেশি এক্সট্রোভার্ট। বা সেটাই উনি দেখাতে পছন্দ করেন। তা হতে গিয়ে মাঝে মধ্যে হয়তো এক্সক্লুসিভিটি ফ্যাক্টরটা থাকছে না। আমি জানি না, এটা কি আশাজি কনশাসলি করেন? সারাক্ষণ ও রকম একটা দিদির ছায়ায় থাকা। তুলনার চোটে বিরক্তিও আসতে পারে। তার পর এমন কিছু তো তাঁকে করতে হবেই যাতে তিনি একটা ছাতার তলায় চলে না যান। ভাবুন তো কী রকম লাগে সব সময় শুনতে যে আপনি তো লতা মঙ্গেশকরের বোন। জানি না, তার জন্যই আশাজি নিজেকে এভাবে গড়ে তুলেছেন কি না? হয়তো ভেবেছেন এমন কিছু করবেন যেটা দিদির থেকে অনেকটা আলাদা।

আমি দেখে অনুপ্রাণিত নই

আজও আমি মুম্বইয়ে লতাজির বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে, ওঁকে ফোন করি। উনি নিজেই ফোনটা ধরেন। একবার ওঁকে বলেছিলাম, ‘আমি প্রত্যেক বার আপনার বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে আপনাকে ফোন করি। মনে হয় না একবার আমাকে ভেতরে ডাকার কথা?’ লতাজি শুধু হেসেছিলেন। এটাও তো এক ধরনের শক্তি। উনি তো জানেন যে আমি কী কাতর ভাবে ওঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই। কিন্তু উনি একটুও রুড না-হয়েও আমাকে সেই এন্ট্রিটা কোনও দিন দেন না।

উনি অবশ্যই জানেন আমার মনের মধ্যে লতা মঙ্গেশকর নামক শিল্পী বসবাস করেন। কুড়ি বছর আগে ওঁকে বলেছিলাম, ‘আপনি যে মিছরি খান, আমাকে দেবেন? রেখে দেব নিজের কাছে।’ একটা প্যাকেটে দিয়েছিলেন। আজ মিছরিগুলো গলে গিয়েছে। তবু প্যাকেটটা যত্ন করে রেখে দিয়েছি। উনি জানেন আমি কতটা সম্মান করি ওঁকে। তবে একটা গণ্ডি টেনে দিয়েছেন।

আশাজির ক্ষেত্রে এটা বলব যে, জীবনের এত চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। চূড়ান্ত মনের জোর না-থাকলে সেগুলো এ ভাবে ফেস করা যায় না। ঠিক-ভুল যে সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকুন না কেন, শেষ পর্যন্ত তাতেই স্টিক করে থাকার ক্ষমতা রাখেন উনি।

তবে একটা কথা মনে হয়, যতটা ক্ষমতা ওঁদের আছে সেখানে দাঁড়িয়ে ওঁরা যদি আরও বেশি অ্যাপ্রোচেবল হতেন, তাহলে সোশ্যাল লাইফে আরও বেশি অবদান রেখে যেতে পারতেন।

ওঁদের প্রতি বিস্ময়, সম্মান রয়েছে। কিন্তু কোনও দিন ওঁদের থেকে অনুপ্রেরণা পাইনি। আই অ্যাম স্কেয়ার্ড অব লতাজি অ্যান্ড আশাজি। ভয়ে অসাড় হয়ে যাওয়া যাকে বলে। স্বপ্ন দেখি না পরের জন্মে লতা মঙ্গেশকর-আশা ভোঁসলে হয়ে জন্মাবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE