Advertisement
E-Paper

হৃদয়ে লেখো নাম

বাংলাদেশের গায়ক হৃদয় খান। টলিউডের নতুন বাসিন্দা। ঢাকা থেকে এসেছিলেন কলকাতায়। কথা বললেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবির ‘তুমি যদি’ আর ‘ভাল লাগে না’ গান দু’টো দিয়ে টলিউডে গায়ক ও সুরকার হিসেবে অভিষেক হল আপনার। কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমায় আপনাকে সে ভাবে গান গাইতে শোনা যায় না কেন? বাংলাদেশে আমার অনেক অ্যালবাম মুক্তি পেয়েছে। আমি মিউজিক করলে যেভাবে ভিস্যুয়ালের কথা চিন্তা করি, দুর্ভাগ্যবশত সেটা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ছবিতে এত দিন এক্সিকিউট করা হয়নি।

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০০:১৯

‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবির ‘তুমি যদি’ আর ‘ভাল লাগে না’ গান দু’টো দিয়ে টলিউডে গায়ক ও সুরকার হিসেবে অভিষেক হল আপনার। কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমায় আপনাকে সে ভাবে গান গাইতে শোনা যায় না কেন?

বাংলাদেশে আমার অনেক অ্যালবাম মুক্তি পেয়েছে। আমি মিউজিক করলে যেভাবে ভিস্যুয়ালের কথা চিন্তা করি, দুর্ভাগ্যবশত সেটা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ছবিতে এত দিন এক্সিকিউট করা হয়নি। অনন্ত জলিল বলে এক অভিনেতা আছেন আমাদের দেশে। উনি কিছু সিনেমা করেছেন, যেখানে কোরিওগ্রাফিটা দারুণ সুন্দর। ওঁর তিনটে ছবিতে আমি কাজ করেছি।

বাংলাদেশের ব্যান্ডের শিল্পীরা দু’দেশেই এত জনপ্রিয়। তবু আপনাদের সিনেমা থেকে তাঁরা দূরেই থেকেছেন। পাকিস্তানের ব্যান্ডের গায়কদের ক্ষেত্রেও তাই। সে জুনুন হোক বা ফুজন। কেন?

কারণটা বোধহয় ওই ভিস্যুয়ালের সমস্যা। এখন দিন পাল্টাচ্ছে। মাইলস্ বা জেমস যদি আমাদের দেশের সিনেমায় কাজ করেন তা হলে ভাল হবে। তবে ফিল্মের কাজে এখনও ওঁদের দেখা যাচ্ছে না। জেমস অনেক আগে বাংলাদেশের ছবিতে কাজ করেছে। কিন্তু বলিউডে কাজ করার পরে আমি ওকে আর বাংলা ছবিতে কাজ করতে দেখিনি। আমাদের দেশে জেমস যেমন কাজ করে এসেছে, সে ধরনের মিউজিক হয়তো সিনেমাতে ব্যবহার করা হয়নি।

কার গান ইন্সপায়ার করে আপনাকে?

জেমস, মাইলস্, তপন চৌধুরী...

ইউটিউবে আপনার দু’টো ভিডিয়ো রয়েছে। তাতে আপনি নিজেই নায়ক। টলিউডে কাজ করার সময় চাননি নিজেকে ক্যামেরার সামনে দেখতে?

হ্যাঁ। অবশ্যই চেয়েছি। বাংলাদেশে অনেক ছবিতে অভিনয় করার অফার এসেছে। কিন্তু করিনি। ওই একটাই ভয়। আমি নিজেকে যে ভাবে প্রেজেন্ট করতে চাই, সেটা যদি না হয়? তবে আমি এগুলো বলে বাংলাদেশি ছবিকে ছোট করতে চাইছি না। যদি কলকাতাতেও আমি অফার পাই, আর সেটা শুনে মনে হয় যে, আমার চিন্তার সঙ্গে কাজটা মিলবে না— সেখানেও আমি না করে দেব। আমি মিউজিক সিনে এসেছি ২০০৮ সালে। এত দিন অজস্র অফার পেয়েও মাত্র দু’টো ভিডিয়ো করেছি। আমি বেশ চুজি। সেন্সিবিলিটি না-মিললে আমি ব্যাপারটায় ঢুকি না। এসকে মুভিজের ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবির গানের ভিস্যুয়ালের থিমগুলো হিমাংশু ধানুকার কাছে শুনে আমার ফ্যান্টাস্টিক লেগেছিল। তাই রাজি হই।

ভিডিয়ো দেখে কি অঙ্কুশকে ঈর্ষা করেছেন?

অঙ্কুশ ভাল। ইউটিঊবে ‘তুমি যদি’ গানটার প্রায় ৭০ হাজার ভিউজ। গানটা দেখে মনে হয়েছিল অঙ্কুশের জায়গায় আমি থাকলেও ভাল হত। (হাসি)

জেমস ‘গ্যাংস্টার’য়ে ‘ভিগি ভিগি’ গেয়েছেন। ওঁকে অনুসরণ করে বলিউডে কাজ করতে চান নাকি?

সিরিয়াসলি বলিউডের জন্য চেষ্টা করছি। এ আর রহমানের সব কাজ শুনি। শ্রেয়া ঘোষাল, সোনু নিগম, কেকে— আমার প্রিয় শিল্পী।

অরিজিৎ সিংহ এখন বলিউড আর টলিউডে দারুণ জনপ্রিয়। তাঁর গান শোনেন?

হ্যাঁ, শুনি তো। খুব ভাল ভয়েস। ভীষণ ভার্সেটাইল। এখন এক্সপেরিমেন্টের যুগ। ভাল লাগে যে, ওকে দিয়ে নানা ধরনের গান গাওয়ানো হচ্ছে।

টলিউডে অরিজিৎ-এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবেন?

(হাসি) জানি না আমার গলাটা সে জায়গায় পৌঁছেছে কি না। একটা স্বপ্ন আছে, নিজের সিগনেচার টিউন দিয়েই আমার জায়গাটা গড়ার।

আপনার গলার টেক্সচারটা তো অনেকের থেকে আলাদা। সোনু নিগম, বাবুল সুপ্রিয় বা শানের মতো গান গাইবেন, না কি অনুসরণ করতে চান অরিজিতের পথ?

সে দিক থেকে বলব, আমি অরিজিতের জুতোতেই পা রাখতে চাই।

জেমসের কাছে বলিউডে পা রাখার জন্য টিপস্ চেয়েছেন?

জেমসকে আমি চাচা বলি। আমাকে অনেক ছোটবেলা থেকে চেনে। এই তো একসঙ্গে আমেরিকা ট্যুর করে ফিরলাম। মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করি, ‘চাচা, আর হিন্দিতে গান করছ না কেন?’ উত্তরে বলে, ‘করব করব’।

বলিউডে গিয়ে কম্পোজারদের দোর দোর ঘুরে লেগে থাকার ব্যাপারটা বোধ হয় জেমসের প্রাথমিক লক্ষ্য নয়। গান খারিজ হয়ে যেতে পারে জেনেও কি আপনি বলিউডে একনিষ্ঠ ভাবে ব্রেক পাওয়ার চেষ্টা করবেন?

একটা বয়স আসে যখন হয়তো মানুষের আর সে মানসিকতা থাকে না। চাচা এত নামযশ পেয়েছে। তাই জানি না এখন ওই কসরতটা করতে চাইবে কি না? কিন্তু আমার ব্যাপারটা আলাদা। আমি একটা অ্যালবামের জন্য ৪০টা ট্র্যাক তৈরি করে, তার থেকে ৯টা গান ব্যবহার করি। ট্র্যাক রিজেকশনে ভয় পাই না। ভাল কিছু পাওয়ার জন্য আমার খাটতে অসুবিধা নেই।

অর্ণবের গান শুনেছেন? উনিও তো টলিউডে কাজ করছেন...

ফ্যাবিউলাস গায়ক। আমি ওঁর বিশাল ফ্যান। ‘র ফ্লেভার’ আছে ওঁর গলায়। গায়কিটা একদম ইউনিক। আমাদের বাংলাদেশে ওর মতো আর্টিস্ট খুব কম।

কথা বলার সময় বাঙাল ভাষাটা যে ভাবে ব্যবহার করেন, গিটারটা হাতে তুলে নিলেই অমনি আপনার উচ্চারণ ইংরেজি ঘেঁষা হয়ে যায় কেন?

সচেতন ভাবে এটা নিয়ে ভাবিনি। কিন্তু এখন ধরিয়ে দেওয়াতে বুঝতে পারছি।

আপনার ভিডিয়োগুলো আন্তর্জাতিক ভিডিয়োর স্টাইল অনুসরণে তৈরি। তাল রাখতে গিয়েই কি উচ্চারণটাও অ্যাংলিসাইজড্ হয়ে যায়?

ভিস্যুয়ালের পুরা কনসেপ্টটা আমার...

‘পুরা’ শব্দটা কোনও দিনই আপনি গাইতে গেলে ব্যবহার করবেন না...

(হাসি) তা ঠিক। আসলে ছোটবেলা থেকেই ইংলিশ গান শুনে বড় হয়েছি। শোনার সময়, ভাবতাম ওদের গায়কির মধ্যে কী এমন আছে যা আমাদের মতো অল্পবয়সিদের এত অ্যাট্রাক্ট করে? তখন লক্ষ করলাম ওদের উচ্চারণের ধরনটাই আলাদা। হতে পারে গান গাওয়ার আগে মনের মধ্যে ওটা কাজ করে।

কলকাতার ব্যান্ডের গান শুনেছেন?

ক্যাকটাসের গান শুনেছি।

কোনও বিশেষ ভাল লাগা গান?

আলাদা করে বলতে পারব না। আসলে আজকাল হিন্দি বেশি শোনা হয়।

‘জাতিস্মর’য়ের গান? ‘এ তুমি কেমন তুমি’?

না, শোনা হয়নি। আমি মিউজিকটাকে এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে করে এসেছি... এটা শুনতে হবে, ওটা গাইতে হবে—কেরিয়ারের জন্য তা করিনি।

তবুও অরিজিতের হিন্দি গান শুনেছেন...

সে তো ইদানীংকালে। আমি ছোটবেলা থেকে ওয়েস্টার্ন মিউজিক শুনেছি। লাওনেল রিচি, সিলিন ডিওন, এলটন জন, রিচার্ড মার্কস, পিঙ্ক ফ্লয়েড— এঁদের গান শুনেই বড় হয়েছি।

আপনার গানে এদের ইনফ্লুয়েন্স রয়েছে?

বাংলাদেশে আমাদের একটা রেকর্ডিং স্টুডিয়ো ছিল। সব সেলিব্রিটি আমাদের স্টুডিয়োতে এসে গান রেকর্ড করতেন। সব্বাইকে ছোটবেলা থেকে চিনতাম। কিন্তু আমি নিজে শুনেছি ওয়েস্টার্ন মিউজিক। গত তিন বছর হল আমি ইস্টার্ন মিউজিক শোনা শুরু করেছি। যখন পেশাদার ভাবে বাংলায় গান গাইব বলে ঠিক করলাম, তখন আমি প্রথম বাংলা শিখতে শুরু করি।

আগে বাংলা লিখতে পারতেন না?

ইংলিশ মিডিয়ম স্কুলে পড়েছি। মিউজিক করতাম ইংরাজিতে। যখন ঠিক করলাম বাংলায় অ্যালবাম করব, তখন টিউটর রেখে শিখতে শুরু করলাম।

বয়স মাত্র ২৪। তবু আপনার গলায় এত বেদনা কেন?

বাংলাদেশে আমার বাবা (রিপন খান) পরিচিত মিউজিক ডিরেক্টর। তবে ছোটবেলা থেকেই আমি ভীষণ স্বাধীনচেতা। ১৭ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে একা থাকতে শুরু করি। নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে জীবনে।

কিন্তু এটা কেন? বাড়িতে সব্বাই সঙ্গীত জগতের মানুষ। আপনিও সঙ্গীতচর্চা করতে চাইতেন। তা হলে কেন বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন?

আব্বার সঙ্গে আমার একটা দূরত্ব ছিল। দূরত্বটা সঙ্গীতের নয়।

প্রেমঘটিত কিছু নাকি?

না, তাও না। আব্বার লাইফস্টাইলের সঙ্গে আমি মেলাতে পারতাম না। আমার আব্বার উড়া মন... আমাদের সম্পর্কটা ঠিক জমাট বাঁধেনি।

তাই স্বাধীনতার স্বাদটা অনেক অল্প বয়সেই পেয়েছেন?

হ্যাঁ। অন্যদের মতো পরিবারের আদর, ভালবাসা সেভাবে পাইনি। আমার মনটা অনেকটা ব্লটিং পেপারের মতো। যখন কোথাও সেই না-পাওয়া ভালবাসাটা পাই তখন আঁকড়ে ধরি।

‘অবুঝ ভালবাসা’র ভিডিয়োতে যে নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন, তাঁকে কি বাস্তবেও আঁকড়ে ধরেছেন?

(হাসি) সুজ্যানা জফর ওর নাম। আমরা ডেট করছি না। তবে খুব ভালবাসি ওকে। সেই ভালবাসাটা একতরফা। প্রথম বার ওর সঙ্গে দেখা হয় মিউজিক ভিডিও করার সময়। আমাদের দেশের ও খুব বিখ্যাত মডেল।

গলায় এত বেদনার মূর্ছনা। আপনার ফ্যানেরা বলেন আপনার চোখ খুব এক্সপ্রেসিভ। তাও সুজ্যানাকে বোঝাতে পারছেন না?

(হাসি) পারিনি। আমাদের মধ্যে আসলে একটা লম্বা বয়সের ব্যবধান আছে। ও আমার থেকে ছ’ বছরের বড়।

সেটা কি সত্যি একটা সমস্যা? তাও আপনার কাছে?

না। মানে... তা নয়।

এই যে না বোঝাতে পারা—এটা কি এক ধরনের হেরে যাওয়া নয়?

আমি ওয়ান ওম্যান ম্যান। ও যদি সাড়া না-ও দেয় আমি ওকে ভালবেসে যাব।

সুজ্যানাকে বলেছেন সে কথা?

আমরা ভাল বন্ধু। ওকে সে কথা বললেই ও বলে আমি নাকি ইম্যাচিওর্ড। মনে হয় ও আমাকে বোঝে। কিন্তু আমাদের সমাজে মেয়েরা বয়সে বড় হলে সম্পর্ক মেনে নিতে অসুবিধা হয়। তবু আমি ওকে ভালবেসে যাব। চিরদিনই।

ছবি: কৌশিক সরকার।

priyanka dasgupta interview hriday khan bangladeshi singer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy