Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Shobdo Jobdo 2023

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে কতটা স্বীকৃতি পাচ্ছে বাংলা ভাষা?

অনেকের কাছেও বাংলা ভাষা চর্চা বা বাংলা বলার বিষয়টি উপহাস ও উপেক্ষার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে কথ্য বাংলার মান যেমন নামছে, তেমনই নামছে লিখিত বাংলার উৎকর্ষতাও।

বর্তমানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে প্রবল আশার সঞ্চার হয়েছে এক অন্য উপায়ে

বর্তমানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে প্রবল আশার সঞ্চার হয়েছে এক অন্য উপায়ে

এবিপি ডিজিটাল কনটেন্ট স্টুডিয়ো
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ১৬:০৬
Share: Save:

স্বাধীনতার প্রায় ৭৫ বছর পরেও আজ ঘরে ঘরে বা পারিবারিক পরিসরে মানুষ ইংরেজিতেই কথা বলে। এমন কি নিজের সন্তানদের মাতৃভাষায় উচ্চ শিক্ষা নিয়েও এখন কারোর কোনও মাথাব্যথা নেই। বরং তাঁরা চান, সন্তান তাড়াতাড়ি বিদেশি ভাষা শিখুক, তার পর দেশের বাইরে চলে যাক। এমনকি যাঁরা দেশে আছেন বা থাকবেন, তাঁদের অনেকের কাছেও বাংলা ভাষা চর্চা বা বাংলা বলার বিষয়টি উপহাস ও উপেক্ষার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে কথ্য বাংলার মান যেমন নামছে, তেমনই নামছে লিখিত বাংলার উৎকর্ষতাও। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ভাষা শহিদ দিবস বা একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য প্রকৃত অর্থে আজও তাঁদের কাছে অজানা। শুধুমাত্র ভাষার মাস এলে আমাদের মাতৃভাষার প্রতি দরদ বেড়ে যায়। তখন আমরা সকলেই একদিনের জন্য বাংলা ভাষা প্রেমী হয়ে উঠি। কিন্তু বাকি এগারো মাস আমরা কী তা বজায় রাখতে পারি? কেনই বা ধীরে ধীরে ম্লান হচ্ছে বাংলা ভাষার এই আবেদন?

আমাদের দেশে এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে। তবে মুশকিল একটাই দু’দিক রক্ষা করতে গিয়ে তাঁদের না হচ্ছে ভাল ইংরেজি শিক্ষা, না হচ্ছে মাতৃভাষার শিক্ষা। বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে চলনসই ইংরেজি ভাষা শিক্ষাই মুখ্য হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীদের কাছে। অর্থাৎ বিদেশি ভাষা শেখার জন্যও যে মাতৃভাষা ভাল ভাবে শিখতে হয়, এ বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে না বেশিরভাগ পড়ুয়াদের কাছে। অথচ প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সত্য এটাই যে, যার যার মাতৃভাষায় শিক্ষা পাওয়ার মধ্য দিয়েই পারে একটি জাতি সামগ্রিক ভাবে এগিয়ে যেতে পারে।

তাই বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনেকেই। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অধিকাংশ মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম নিয়মিত বই পড়ার পরিবর্তে প্রতিদিন অনেক সময় ব্যয় করেন ‘মোবাইল ফোন’, ‘ইন্টারনেট, ‘কম্পিউটার’, ‘ল্যাপটপ’, ‘হোয়াটসঅ্যাপ’, ‘গুগল’, ‘ফেসবুকে’। অনেকেই আবার আসক্ত ‘ভিডিও গেমে’। সে ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা চর্চা তো দূরের কথা, বই পড়ার সুযোগই মেলে কোথায়? উচ্চশিক্ষার প্রচলন বাংলায় তেমন নেই বললেই চলে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়ে যায় কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তাও।

কিন্তু তাই বলে মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা বা অস্বীকার করা যাবে না কিছুতেই। সে জন্য নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে বাংলা ভাষার চর্চা। নিজ মাতৃভাষায় শেখা এবং লিখতে পাড়ার মধ্যে অগৌরবের কিছু নেই। অবশ্য বর্তমানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে প্রবল আশার সঞ্চার হয়েছে এক অন্য উপায়ে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলেন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে বাংলাভাষীর সংখ্যা হতে পারে প্রায় ৩১ কোটি ৬০ লাখ। এই সাফল্যের অন্যতম কারণ হচ্ছে, বাংলা ভাষাকে ইতিমধ্যেই প্রযুক্তি বান্ধব ও ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে, সারা বিশ্বে বাঙালিরা ইন্টারনেটে নিজের ভাষায় ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারছে। তথ্য প্রযুক্তিবিদরা এ নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। হরেক রকমের বাংলা অ্যাপস তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বহির্বিশ্বেও প্রায় ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বাংলা অ্যাপস চালু থাকার ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার অবাঙালি শিক্ষার্থী বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পাচ্ছে। তাই কোনও অবস্থাতেই বাংলা ভাষা, সাহিত্য সংস্কৃতি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE