Advertisement
E-Paper

মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করি

২০০০ সালে আমার ইনফেকশন হয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই কমছিল না। তখন এলাইজা টেস্ট করে জানা যায়, আমার শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে। প্রথম দিকে আমার স্ত্রীর রক্তে ভাইরাস মেলেনি। সে এক নিদারুণ অবস্থা।

ক্ষিতিশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ২২:০১

২০০০ সালে আমার ইনফেকশন হয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই কমছিল না। তখন এলাইজা টেস্ট করে জানা যায়, আমার শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে। প্রথম দিকে আমার স্ত্রীর রক্তে ভাইরাস মেলেনি। সে এক নিদারুণ অবস্থা। আমার শরীরে ভাইরাস, অথচ স্ত্রীর শরীরে নেই। পনেরো দিন পর স্ত্রীর রক্তেও ভাইরাস পাওয়া গেল। ছেলেমেয়ে নিয়ে ছিল আমাদের সংসার। ক্যানিংয়ে কাপড়ের ব্যবসা ভালই চলত।

কিন্তু এই একটা ঘটনা জীবনটাকে একেবারে বদলে দিল। একঘরে হয়ে গেলাম। আমাদের থেকে আশপাশের সবার মধ্যে নাকি এডস-এর ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে। আমরা যাতে পাড়া ছেড়ে চলে যাই তার জন্য চাপ আসতে লাগল। আস্তে আস্তে দোকানে খদ্দের কমে গেল। আমার দোকানটা তুলে দিতে বাধ্য হলাম। খুব খারাপ অবস্থায় দিন কাটাতে লাগালাম।

কিন্তু, তার পর মনে হল ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমি তো একা নই! সমাজে আমার মতো ভুক্তভোগী আরও অনেকে আছেন। তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে। খুঁজতে খুঁজতে ক্যানিংয়েই সাত জনকে পেয়ে গেলাম। এর পর প্রতি দিন মেডিক্যাল কলেজে এসে বসে থাকতাম। সেখানে যে সব এডস আক্রান্ত রোগী আসতেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতাম। এই ভাবে অনেকের সঙ্গে আলাপ হল। তার পর একটি কেএনপি প্লাস নেটওয়ার্কের খোঁজ পাই, যারা কলকাতায় আমাদের মতো মানুষদের নিয়ে কাজ করে।

২০০৪-এর অগস্টে আমরা নিজেদের জন্য একটি সংস্থা খুলি। যে সংস্থা কাজ করবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এডস আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে। আমার যে দোকানঘরটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেখান থেকেই আমাদের এসএনপি প্লাস সংস্থার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের সংস্থায় প্রায় ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন।

মূলত তিনটি প্রজেক্ট চলে আমাদের। শরীরে এইচআইভি ভাইরাস বাসা বেধেছে বলে যে সব মানুষ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম এবং ট্রপিক্যাল মেডিসিনে আসেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আসলে এডস হয়েছে শুনলেই মানুষ ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। সেই ভয় থেকে তারা পালিয়ে যায়। যা সেই মানুষটির এবং সমাজের পক্ষে ভীষণ রকম ক্ষতিকর। আমরা সেই হারিয়ে যাওয়া আটকানোর চেষ্টা করি।

আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, যে আমরাও এডস আক্রান্ত। কিন্তু বহু দিন ধরে সুস্থ ভাবে কাজকর্ম করে চলেছি। সুতরাং তোমরা ভয় পেও না। বরং হাসপাতালে এস। সেখানে তোমাদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে ও ওষুধ দেওয়া হবে।

দ্বিতীয়ত, সারা জীবন ধরে যে এই ওষুধ খেয়ে যেতে হবে, সে ব্যাপারে আমাদের কর্মীরা কাউন্সেলিং করে। কিছুতেই যেন ওরা ওষুধ বন্ধ না করে। তবেই সুস্থ থাকবে, এটা বোঝানো হয় বার বার।

তৃতীয়ত, এডসকে কেন্দ্র করে কোনও রকম সামাজিক সমস্যা হলে আমরা এগিয়ে যাই। কাউকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, হলে বা স্কুলে ঢুকতে না দেওয়া হলে প্রতিবাদ করি। এবং সেই মানুষটার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করি। প্রথম দিকে যে সমস্যার মুখোমুখি আমি হয়েছিলাম, তা যেন আর কারও না হয়।

গত পনেরো বছর আমার শরীরে এডস-এর ভাইরাস রয়েছে। আমি দিনে আঠারো ঘণ্টা কাজ করি। এটুকু বলতে পারি, যারা এডস আক্রান্ত নন, তাদের থেকে আমি অনেক সুস্থ। এডস মানেই জীবন শেষ নয়। নিয়মিত ওষুধ খেলে শরীরে এইচআইভি ভাইরাস থাকলেও সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়।

aids victim khitish mondal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy