নানা রকমের চাপ সামলানো জীবনযাত্রায় খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। মনখারাপ থাকলে, মানসিক চাপে থাকলে, টেনশনে থাকলে কিংবা হাতে সময় না থাকায় প্রাতরাশে, দুপুরে যথাযথ পুষ্টিকর খাবার না খেলে হাতের কাছে সহজে পাওয়া অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যা থেকে বিপদ ঘনায়। বাইরের তেলমশলা, ভাজাভুজি, মিষ্টি, অতিরিক্তি সোডিয়াম যুক্ত নোনতা খাবারের কুপ্রভাব পড়ে লিভারে। ফল— ফ্যাটি লিভার। লিভারের এই অসুখ হলে প্রথমেই খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে এক চিকিৎসক বলছেন, টুকটাক মুখ চালানোর চার সুস্বাদু জলখাবার খেয়েই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমানো যেতে পারে।
ওই চিকিৎসকের নাম সৌরভ শেঠি। তিনি এমস এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষিত লিভার এবং অন্ত্রের রোগের চিকিৎসক। বর্তমানে আমেরিকান সোসাইটি অফ গ্যাস্ট্রোইন্টেসটাইনাল এন্ডোস্কপি এবং ইন্টারনাল মেডিসিনের অনুমোদিত চিকিৎসক। সৌরভ অতিমারির সময় থেকেই নিজের সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তাঁর অনুরাগীর তালিকায় রয়েছেন বলিউডের স্বাস্থ্যসচেতন নায়ক-নায়িকারা। সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে সৌরভ জানিয়েছেন, লিভারকে সুস্থ করে তুলতে উপকারী চার স্বাস্থ্যকর জলখাবারের কথা। যা টুকটাক মুখ চালানোর বাসনাকে তৃপ্ত করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যও ভাল রাখবে।
চার স্বাস্থ্যকর জলখাবার কী কী?
সৌরভ বলছেন, কোনও একটি খাবার খাওয়ার বদলে যদি দু’টি খাবার একসঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া যায় তবে উপকার হবে বেশি।
১। খেজুর আর আখরোট
কিছু ভাল মানের খেজুর আর আখরোট কুচিয়ে রেখে দিন হাতের কাছে। মুখ চালানোর ইচ্ছে হলে খেজুর আর আখরোট এক সঙ্গে মিশিয়ে খেতে বলছেন সৌরভ। তিনি জানাচ্ছেন, খেজুরে রয়েছে সল্যুবল ফাইবার। যা লিভারে ফ্যাট জমতে দেয় না। কারণ, এর ফাইবার শরীরে গেলে তা হজম প্রক্রিয়ার গতি কমিয়ে দেয়। ফলে খাবার থেকে শরীরে শর্করাও পৌঁছয় ধীরগতিতে। যা লিভারের জন্য ভাল।
অন্য দিকে, আখরোটে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা লিভারের প্রদাহ কমাতে কার্যকরী। শুধু তাই নয়, চিনের ফুজিয়ান মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ পাবলিক হেল্থের গবেষণায় বলা হচ্ছে, আখরোট ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূরে রাখতেও সাহায্য করে।
২। ডার্ক চকোলেট এবং বাদাম
চকোলেট দিয়ে লিভার ভাল হবে? ব্যাপারটা একটু সোনার পাথরবাটির মতো শুনতে লাগলেও সৌরভ বলছেন, ‘‘এটি অত্যন্ত কার্যকরী। তবে মাথায় রাখতে হবে, চকোলেট খুব ভাল মানের হতে হবে। আর ডার্ক চকোলেটে যেন চিনি না থাকে। অন্তত ৭০ শতাংশ কোকো থাকে।’’ ডার্ক চকোলেটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে লিভার ফ্যাটের ক্ষতিকর প্রভাব দূরে রাখে।
ডার্ক চকোলেটের সঙ্গে কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম বা নুন ছাড়া চিনেবাদাম খেলেও শরীরে যাবে ভিটামিন ই। মিশরের কায়রোর হুসেন ইউনিভার্সিটি হসপিটালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফ্যাটি লিভার সারাতে ভিটামিন ই অত্যন্ত কার্যকরী।
৩। মধু এবং দারচিনি দিয়ে আপেল
আপেল তো খেয়েই থাকেন। কিন্তু সে তো স্বাস্থ্যকর খাবার বলে। একটি আপেল কুচিয়ে তার উপর ভাল মধু এক চামচ আর এক টুকরো দারচিনির গুঁড়ো ছড়িয়ে নিলে তা সুস্বাদু জলখাবার হতে পারে। আর সেই জলখাবার ফ্যাটি লিভার সারাতেও কার্যকরী।
সৌরভ বলছেন, ‘‘আপেলে আছে পেকটিন। এটিও এক ধরনের সল্যুবল ফাইবার। যা অন্ত্রের ভাল ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপকারী। শুধু তা-ই নয়, অস্বাস্থ্যকর মেদ ঝরাতেও কার্যকরী।’’ ভাল জাতের মধু নিয়মিত স্বল্প পরিমাণে খেলে তা-ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে বিপাকের হার ভাল থাকে। লিভারকে ফ্যাটমুক্ত করতে সাহায্য করে। দারচিনিতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন নামের এক ধরনের পলিফেনল জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। বহু গবেষণাতেই দেখা গিয়েছে, অ্যান্থোসায়ানিন ফ্যাটি লিভার কমাতে সাহায্য করে।
৪। দই-বেদানা-পেঁয়াজের রায়তা
সুস্বাদু রায়তা খেতে ভালবাসেন ভারতীয়েরা। সেই রায়তাও বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো হলে এবং নিয়মিত খেলে তা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। পেঁয়াজ এবং বেদানা, দু’টিতেই রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্থোসায়ানিন। এই দু'টিই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ঠাসা। এর সঙ্গে দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক মেশালে তা লিভার এবং অন্ত্র উভয়ের জন্যই ওষুধের মতো কাজ করে। সপ্তাহে অন্তত ৪-৫ বার এই রায়তা খেলে তা লিভার সারানোর কার্যকরী উপায় হতে পারে।