বাড়িতে কি এক চিলতে বাগান আছে? সবুজ ঘাসে মোড়া একটু হাঁটা-চলার জায়গা। এই ফ্ল্যাট-আবাসনময় দুনিয়ায় যে খানে এক চিলতে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেলেই হিল্লে হল বলে ভাবছেন মানুষ, সেখানে একটি সবুজ ঘাসের বাগান চাওয়া বাড়াবাড়ি বলে মনে হতেই পারে। কিন্তু কারও কারও বাড়িতে সেই সুযোগ আছে। যাঁদের নেই তাঁদের জন্য রয়েছে বাড়ির কাছের পার্ক বা খেলার মাঠ। ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে স্বাস্থ্য ভাল রাখার তাগিদে সেখানে বহুবার হাঁটতেও গিয়েছেন হয়তো। কিন্তু খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপর হেঁটেছেন কি?
হাঁটেননি। তার কারণ হাঁটার জন্য দাম দিয়ে যে ভাল জুতো জোড়া কিনেছেন, সেটি পরে হাঁটলে বা দৌড়ালে কষ্ট কম হয়। পা জোড়া আরামে থাকে। হাঁটতে গেলে তাই সেটিই গলিয়ে নেন পায়ে। হাঁটার আগে সেই জুতো খোলার সময় বা ইচ্ছে কোনওটিই হয় না। অনেকের অবশ্য খালি পায়ে ঘাসে হাঁটলে পায়ে ময়লা লাগার ভয়ও থাকতে পারে। কিন্তু সেটুকু এড়াতে পারলে আর ভেজা ঘাসে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলে দেখবেন, তা শুধু শরীর নয়, মনও ভাল রাখবে। কিন্তু কী ভাবে?
ছবি : সংগৃহীত।
খালি পায়ে ঘাসজমিতে হাঁটার একটি নাম আছে। একে বলা হয় গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং। সাধারণ হাঁটার পদ্ধতির থেকে এই পদ্ধতিতে হাঁটলে উপকার মেলে অনেক বেশি। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে।
১। শরীরের বেশিরভাগ স্নায়ুর শেষপ্রান্ত রয়েছে পায়ের পাতায়। তাই অনেক ব্যাথা বেদনার উপশমের জন্যও পায়ের পাতার বিভিন্ন অংশে মাসাজ করানোর চল রয়েছে। সেই একই যুক্তি খাটে খালি পায়ে হাঁটার ক্ষেত্রেও। মাটি আর ঘাসের স্পর্শে পায়ের পাতায় যে প্রভাব পড়ে, তা সরাসরি প্রভাবিত করে স্নায়ুতন্ত্রকে। এতে মানসিক চাপ কমে। মন শান্ত হয়।
২। ব্যস্ত জীবনে নানা কারণে প্রতিনিয়ত খাওয়ার সময়, ঘুমোনোর সময় ওলোট-পালট হচ্ছে। শরীরের স্বাভাবিক রুটিন বদলানোয় নষ্ট হচ্ছে বিশ্রামের সময়। বারোটা বাজছে ঘুমের। ঘাসের উপরে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস শরীরে ‘স্ট্রেস হরমোন’ কর্টিসলের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ কমে। পাশাপাশি, যে মেলাটোনিন হরমোন শরীরের সময়ের হিসাব ঠিক রাখে, তারও মাত্রা ঠিক রাখে। এতে শরীরের বিশ্রামের সময় ঠিক থাকে। ঘুম ভাল হয়।
৩। খালি পায়ে হাঁটলে মাটির উঁচু-নিচু, অমসৃণ ভাব পায়ের পাতায় নানা রকমের চাপ তৈরি করে, যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে কোষে কোষে অক্সিজেনের জোগান বাড়ে।
ছবি : সংগৃহীত।
৪। জুতোর আড়ালহীন নগ্ন পা যখন ঘাসে পড়ে, তখন পায়ের পাতায় থাকা স্নায়ুর প্রান্তগুলি সরাসরি প্রকৃতির সংস্পর্শে আসে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পৃথিবীর সঙ্গে শরীরের এই স্পর্শে ইলেকট্রনের বিনিময় হয়। যা শরীরে প্রদাহের সমস্যা কমায়। ফলে ব্যথা, জ্বালা কমে। এ ছাড়া এতে কোষ এবং পেশির ক্ষতিসাধনকারী ফ্রি র্যাডিকালগুলিকেও নিরস্ত করে। এতে শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে। যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে ক্যানসারেরও কারণ।
৫। জুতো পরে হাঁটার থেকে খালি পায়ে হাঁটলে আরও বেশি সংখ্যক পেশি কাজ করে। পেশির জোরও লাগে বেশি। এটি পেশির গঠন সুঠাম করে। পাশাপাশি, খালি পায়ে হাঁটলে শরীরের সার্বিক ভারসাম্য রাখার ক্ষমতা উন্নত হয়। মাথা, চোখ, অন্যান্য ইন্দ্রিয় এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে ছন্দোবদ্ধ হয়ে কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে। ফলে দেহের ভঙ্গিমারও উন্নতি হয়।
আরও পড়ুন:
খালি পায়ে হাঁটার এই উপকারিতাগুলি পরীক্ষিত সত্য। বিভিন্ন গবেষণা এবং সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, ঘাসের উপরে খালি পায়ে হেঁটে তাঁরা সুফল পেয়েছেন। তাঁদের কর্মক্ষমতা বেড়েছে। তাঁরা মানসিক ভাবে অনেক বেশি শান্ত থেকেছেন। এমনকি, কাজের উদ্যমও বেড়েছে।