মন খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু বন্ধুর ফোন আসতেই ভাল হয়ে গেল। হইচই আড্ডার আবহে কোথায় ক্লান্তি! মুহূর্তে ফুরফুরে মেজাজ। ভাবছেন, এ সব শুধু বন্ধুর সঙ্গলাভ জন্যই হল? এর পিছনে কিন্তু লুকিয়ে হরমোনের কারিকুরি। বাইরের খোলা হাওয়া, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়ায় বেড়ে যায় এমন কিছু হরমোনের ক্ষরণ, যা মস্তিষ্কে সুখানুভূতি তৈরি করে। আনন্দ, আবেগ-ভালবাসা, এই সমস্ত অনুভূতির সঙ্গে জুড়ে থাকে বিশেষ হরমোন। সে কারণে ডোপামিন, এন্ডরফিন, সেরোটোনিনের মতো হরমোনকে ‘হ্যাপি হরমোন’ বলে চিহ্নিত করা হয়। এই ধরনের হরমোনের কম-বেশি প্রভাব সরাসরি পড়ে মানসিক স্থিতিতে।
বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে যেমন এ ধরনের হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পেতে পারে, তেমনই কোনও কোনও অভ্যাস ‘হ্যাপি হরমোন’ তৈরির ক্ষেত্রেও বাধাও দিতে পারে। তার ফলও কিন্তু পড়ে মেজাজে।
কম ঘুম হচ্ছে?
রাত জেগে মোবাইলের পর্দায় চোখ? ঘুম হয় না ঠিকমতো? ঘুম না হলে মেজাজও কিন্তু বিগড়ে যায়। নিদ্রা-জাগরণের সঙ্গে সেরাটোনিন হরমোনের সম্পর্ক রয়েছে। ঘুম কম হলে সেরাটোনিনের মাত্রাও কমে যেতে পারে। তার প্রভাব পড়ে মেজাজে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর যেমন বিশ্রাম পায় না, ঠিক তেমনই এতে অন্য অনেক হরমোনের ভারসাম্যও বিঘ্নিত হতে পারে।
কফি খেয়ে দৈনন্দিন খাবার বাদ দেন?
চা-কফি স্নায়ুকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে ঠিকই, কিন্তু তার অনেক নেতিবাচক দিকও রয়েছে। অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরে জলের ঘাটতি তৈরি করতে পারে। আবার অন্য খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যেতে পারে এতে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে, হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে বা ঠিক না থাকলে মস্তিষ্কেও তার প্রভাব পড়বে। তার ফলে মন ভাল করা হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে পারে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যাতে অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে, তা কিন্তু মস্তিষ্কে ডোপামিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করতে পারে।
দিনভর ঘরে বা অফিসেই কাটে?
শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি। সূর্যালোকের সংস্পর্শে ত্বক ভিটামিনটি তৈরি করে। সেরোটোনিনের মতো হ্যাপি হরমোন নিঃসরণেও কিন্তু এর ভূমিকা রয়েছে। তাই বাইরে হাঁটাহাটি করলে, রোদ, আলো, হাওয়া শরীরে লাগলে মনেও প্রভাব পড়ে। কিছুটা সময় খোলা জায়গায় হাঁটাহাটি করলে মন ফুরফুরে লাগে, তার কারণ হল ‘হ্যাপি হরমোনের’ নিঃসরণ।
উদ্বেগ: মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের ফলে কর্টিসল ক্ষরণের মাত্রা বেড়ে যায়। এটি আবার ‘স্ট্রেস হরমোন’ বলে পরিচিত। ক্রমাগত মানসিক অশান্তিতে থাকলে সেই চাপ মস্তিষ্ক নিতে পারে না। এতে ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসরণে প্রভাব প়ড়তে পারে। সমস্যা সমাধানে প্রাণায়াম করা যেতে পারে। কারণ, এতে সেরোটোনিন, ডোপামিন, এন্ডরফিনের মতো ‘হ্যাপি হরমোন’-এর ক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
একাকিত্ব: একলাই দিন কাটে? অনেক সময় প্রিয়জনের সঙ্গের অভাব, বন্ধুবান্ধব না থাকার মতো বিষয়গুলি অক্সিটোসিন, সেরোটোনিনের নিঃসরণে প্রভাব ফেলতে পারে। আবার উল্টো দিকে প্রিয়জনের সঙ্গ, স্পর্শ, বন্ধু সাহচর্য ‘হ্যাপি হরমোন’-এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।