এই যে কথাটা বললেন, সর্বসমক্ষে লোকে কী ভাবল? ভুল বুঝল না তো? পরক্ষণেই হয়তো মনে হচ্ছে, দরকারই ছিল না বিষয়টি নিয়ে কথা বলার। আপনিও কি এমন তালিকায় পড়েন?
আরও পড়ুন:
একেই বলে সামাজিক উদ্বেগ। অবসাদ এবং উদ্বেগ— বদলে যাওয়া গতিশীল জীবনে এই দুই সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এ নিয়ে চিন্তিতি মনোবিদ থেকে মনোরোগ চিকিৎসকেরাও। উদ্বেগেরই একটি ধরন হয় সামাজিক উদ্বেগ। যেখানে ব্যক্তিবিশেষ নিজের কাজকর্ম সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী নন। বরং প্রতি মুহূর্তেই তাঁরা হীনম্মন্যতায় ভোগেন কে, কী ভাবে তাঁকে বিচার করছেন এটা ভেবে। সামাজিক উদ্বেগ তৈরি হলে, কেউ নিজের সম্পর্কে খুব নিম্নমানের মূল্যায়ন করেন। নিজের আচার-আচরণ নিয়ে ভয়ে থাকা এই সমস্যার প্রধান লক্ষণ। যাঁরা এই সমস্যায় আক্রান্ত হন, তাঁরা সব সময়ই ভাবেন, সমাজ বা চারপাশের মানুষ তাঁর থেকে অনেক কিছু চাইছেন। আর তাঁরা সেটি পূরণ করতে পারবেন না। স্বাভাবিক ভাবেই সামাজিক উদ্বেগ কর্মজগতেও পিছিয়ে পড়ার কারণ হয়। কোনও প্রেজ়েন্টেশন সামলাতে গিয়ে বা আর পাঁচ জনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভয় বা উদ্বেগ কাজ করে।
তবে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে মানসিকতায় বদল আনলে। দৈনন্দিন কয়েকটি অভ্যাস ধীরে ধীরে সামাজিক উদ্বেগ কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করতে পারে।
আলাপচারিতা: সামাজিক উদ্বেগের কারণে অনেকেই সহকর্মীর সঙ্গে ঠিক ভাবে কথা বলতে পারেন না। মনে হয়, যা বলবেন, সেটা নিয়ে অন্যে কী ভাববে। সে কারণেই কি কর্মক্ষেত্রেও লোকজনকে এড়িয়ে চলেন? তবে বাড়তি কথা না বলেও, অন্যের কুশল সংবাদ নেওয়া যায়। ছোটখাটো আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। কথা বলার অভ্যাস কিন্তু সম্পর্ক সহজ করতে এবং জড়তা কাটাতে সহায়ক হতে পারে।
প্রস্ততি: চেষ্টার কোনও বিকল্প নেই। বহিরাগতদের সামনে প্রেজ়েন্টেশন দিতে হবে বা মিটিং রয়েছে। সেখানে কোন কথা বলবেন, বাড়িতেই এক-দু’বার আয়নার সামনে মহড়া দিন। যত ভাল ভাবে বক্তব্য গুছিয়ে নেবেন, ততই বলতে সুবিধা হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি একটি খাতায় লিখে রাখুন, যাতে বলার সময় সহজ হয়ে যায়।
বেশি ভাবা বন্ধ করুন: লোকে কী ভাববে, লোকে কী বলবে, এমন ভাবনা থেকেই মনে ভয় এবং উদ্বেগের জন্ম। নেতিবাচক ভাবনা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা ভাল। কাজটি কী ভাবে করতে পারেন, তাতে মন দিলেও লাভ হবে। ফল নিয়ে আগাম ভেবে উদ্বেগ বাড়ানো অর্থহীন।
সাহায্য: কোনও সহকর্মী এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিতে পারেন। কাজের জায়গায় আত্মবিশ্বাসের অভাব হলে, যাঁরা তিরস্কার না করে পাশে থাকবেন এমন মানুষের সান্নিধ্য বেছে নিতে পারেন। ইতিবাচক মানসিকতা, অন্যের অনুপ্রেরণাও এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
প্রাণায়াম: নিয়মিত প্রাণায়ামের অভ্যাস মন শান্ত রাখতে সাহায্য করে। ঠান্ডা মাথায় কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরচর্চা এবং প্রাণায়াম মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্যেও জরুরি।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। সামাজিক উদ্বেগ যদি শরীর অবসন্ন করে তোলে, সমস্যা বৃদ্ধি পায়, সহজ অভ্যাসে বশে আনা না যায় অবশ্যই মনোবিদ বা মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।