আম গাছের পাতার চেয়ে ফলের সঙ্গেই পরিচয় বেশি। কারণ ফলটিই সুস্বাদু। পাতার দরকার পড়ে মূলত পুজো আচ্ছার দিনে। মঙ্গলঘটে আমশাখা রাখার প্রয়োজনে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফলের মতো আম গাছের পাতাও শরীরের নানা উপকারে লাগে। এমনকি, আমপাতায় থাকা কিছু উপাদান সাহায্য করতে পারে ক্যানসার প্রতিরোধেও।
আমপাতার নানা উপকারের মূলে যে উপাদানটি রয়েছে, তার নাম ম্যাঙ্গিফেরিন। এই ম্যাঙ্গিফেরিন নিয়ে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসউটিক্যাল সায়েন্সেসের একটি গবেষণা বলছে, আমপাতায় থাকা এক বিশেষ ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যা ক্যানসারের মূল কারণ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
কী ভাবে ক্যানসার রোধে সাহায্য করে আমপাতা?
আমপাতায় থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন হল এক ধরনের সক্রিয় সি গ্লুকোজ়াইলেটেড জ়্যানথোন। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, এটি রক্তে থাকা অক্সিজেনহীন বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা কমাতে পারে। ফলে তা ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে। এতে শরীরে কার্সিনোজেনেসিস অর্থাৎ ক্যানসার তৈরির সম্ভাবনা কমে। এমনকি, টিউমার হওয়ার সম্ভাবনাও কমায় এই উপাদান।
আর কোন কোন উপকারে লাগে আমপাতা?
১। বয়সের ছাপ দূরে রাখে
আমপাতায় থাকা নানা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শরীরে কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে বলে জানাচ্ছে আরও একটি গবেষণা। কোরিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ওরিয়েন্টাল মেডিসিনের ওই গবেষণা বলছে, সূর্যের আলো এবং অতিবেগনি রশ্মি থেকে ত্বকে যে বয়সের ছাপ পড়ে, বিশেষ করে চোখের নীচে নাক এবং ঠোঁটের দু’পাশে এবং কপালে যে সূক্ষ্ম বলিরেখা দেখা যায়, তা কমাতে পারে আমপাতায় থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন। ওই একই উপাদান দায়ী কোলাজেন উৎপাদনের জন্যও। যা ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে জরুরি।
২। মেদ জমতে দেয় না
আমপাতার রস নিয়ে করা বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে এটি শরীরে ফ্যাট ভাঙার যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তা প্রভাবিত করতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যাটানিয়ার একটি গবেষণা বলছে, পেশির তন্তুতে মেদ জমে শরীরের ওজন বাড়ে। চিনের ডিপার্টমেন্ট অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড হাইজিনের একটি গবেষণা আবার বলছে, আমপাতায় থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন শরীরে অ্যাডিপোনেকটিন নামে এক ধরনের প্রোটিনকে সক্রিয় করে দেয়। যা মেদ কমানোর পাশাপাশি রক্তে থাকা চিনির মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে ওজন ও থাকে নিয়ন্ত্রণে।
৩। ডিমেনশিয়া, ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে
আমপাতায় রয়েছে জোরালো প্রদাহনাশক উপাদান। গবেষণা বলছে, এটি ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার্স এবং পার্কিনসনসের মতো রোগ দূরে রাখতে পারে। এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পারে। পাশাপাশি এটি ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। শরীরে অতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড জমলে তা ইনস্যুলিন রেজ়িস্ট্যান্স তৈরি করে। যা টাইপ টু ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। চিনের তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে আমপাতায় থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে ইনস্যুলিনকে সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না।
কী ভাবে খাবেন?
ম্যাঙ্গিফেরিনের উপস্থিতি যেমন আমপাতায় রয়েছে। তেমনই রয়েছে আমেও। তবে আমে এ ছাড়াও রয়েছে সুক্রোজ় এবং ফ্রুকটোজ়। যা ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আমপাতায় সেই ঝুঁকি নেই। আর তা ছাড়া আম সারা বছর পাওয়া না গেলেও আমপাতা পাওয়া যায়। তাই সারা বছরের জন্য আমপাতাই বেশি উপকারী।
আমপাতার রস খাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হল ২-৩ কাপ জলে ১০-১৫টি পরিষ্কার আমপাতা ফুটিয়ে নিয়ে ছেঁকে নিন। তবে ইদানিং দোকানে আমপাতার পাউডারও পাওয়া যায়। তা জলে গুলে খাওয়া যেতে পারে।