নরম সাদা পরতের ভিতরে সোনালি রঙের অল্প তরল কুসুম! ডিমপ্রেমীদের কাছে তা স্বর্গসুখের সমান। অল্প নুন-মরিচ ছড়িয়ে মুখে চালান করে দেওয়ার অপেক্ষা। তৃপ্তিতে চোখ বুজে আসে। পেট ভরানোর পাশপাশি মন ভরানো ডিমের পুষ্টিগুণও বিপুল। তাই ডিম গোটা দুনিয়ার প্রাতরাশের পছন্দের খাবার। কেউ খান কেতাদুরস্ত ইংলিশ প্ল্যাটারে টোস্টের উপর সাজিয়ে দেওয়া এগফ্রাই। কারও দরকার পোচ। কেউ খান স্যান্ডউইচের পুর বানিয়ে, কারও আবার অফিস যাওয়ার মুখে ঘি-ভাত আলুভাতের সঙ্গী হয় সর্ষের তেল, পেঁয়াজ লঙ্কা দিয়ে মাখা ডিম। প্রাতরাশে ডিমের সঙ্গী হয় অনেক কিছুই। শুধু প্রাতরাশই বা কেন, দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে ডিম খাওয়া হয়। কিন্তু ডিমের সঙ্গে যা খাওয়া হয়, তা কি শরীরের জন্য ভাল? তা থেকে কি শরীরে কোনও বিষক্রিয়া হতে পারে?
ডিম খাওয়ার পরেই কিছু খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল বলে জানাচ্ছে হজম সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা। আমেরিকার ‘পাবমেড’ আর্কাইভে সংরক্ষিত এ সংক্রান্ত বেশ কিছু গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ডিম খাওয়ার পরে কোন কোন খাবার খাওয়া ঠিক নয়।

ছবি: শাটারস্টক।
১। চিজ়
চিজ় ওমলেট কার না খেতে ভাল লাগে! কিন্তু চিজ় ডিমের সঙ্গে না খাওয়াই উচিত বলছেন পুষ্টিবিদেরা। খুব অল্প পরিমাণে খেলে সমস্যা না হলেও ডিমের সঙ্গে বেশি চিজ় খেলে হজমের সমস্যা, পেটফাঁপা এবং ক্লান্তিবোধ আসতে পারে শরীরে।
২। চিনি
ডিমের সঙ্গে চিনি জাতীয় খাবার কখনওই একসঙ্গে খাওয়া উচিত নয়। চিনি এবং ডিম শরীরের ভিতরে গেঁজিয়ে যায়। যা থেকে পেটফাঁপা, পেটের অস্বস্তি, গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। পেটখারাপও হতে পারে।
৩। বিন জাতীয় দানাশস্য
ডিমে প্রোটিনের মাত্রা বেশি। বিন জাতীয় দানাশস্যেও প্রোটিনের মাত্রা বেশি। তাই দু’টি খাবার একসঙ্গে খেলে তা হজম করতে অসুবিধা হবে। যা থেকে পেটের সমস্যা হতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত।
৪। কলা-সহ যে কোনও ফল
পাউরুটি-ডিম আর কলা চিরকালীন প্রাতরাশ। কিন্তু গবেষণা বলছে কলার মতো কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকা খাবারের সঙ্গে ডিম খেলে তা ডিম আর চিনির মতোই শরীরে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। বেশির ভাগ ফলেই রয়েছে অ্যাসিডিক উপাদান। যার ফলে ডিমের প্রোটিন হজম করতে অসুবিধা হতে পারে।
৫। কফি বা চা
ডিমের সঙ্গে কফি বা চা না খাওয়াই ভাল। কারণ চা এবং কফিতে থাকা ক্যাফিন খাবারের সমস্ত পুষ্টিগুণ শরীরে যেতে দেয় না।
৬। আলুভাজা
একটু বেশি তেলে ভাজা আলু, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ় বা চিপসে থাকে অস্বাস্থ্যকর স্নেহপদার্থ। যা ডিমের সঙ্গে খেলে হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

ছবি: শাটারস্টক।
৭। দই
ডিম এবং দই— দু’টিরই প্রোটিনের মাত্রা বেশি। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, একসঙ্গে দু’ধরনের প্রোটিন খেলে তা হজমক্ষমতার উপর চাপ সৃষ্টি করে। বৈজ্ঞানিক কোনও তথ্যপ্রমাণ না থাকলেও বহু প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে দই আর ডিম একসঙ্গে না খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৮। মাংস
ইংলিশ ব্রেকফাস্টের ভক্ত বাঙালিরা। সেই ধরনের প্রাতরাশের পাতে ফ্রায়েড এগ যেমন থাকে, তেমনই থাকে সসেজ, বেকন, সালামির মতো প্রক্রিয়াজাত মাংস। যা ভেজে দেওয়া হয়। পুষ্টিবিদেরা বলছেন ওই ধরনের মাংসে যেমন প্রোটিন বেশি, তেমনই তাতে স্নেহপদার্থের পরিমাণও বেশি। প্রক্রিয়াজাত মাংসে এর পাশাপাশি থাকে আরও ক্ষতিকর উপাদান। যা খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
৯। সয়াবিন জাত খাবার
সয়াবিন থেকে তৈরি খাবার যেমন সয়ামিল্ক, বেকড বিনস ইত্যাদিতে থাকে ট্রিপসিন নামের এক ধরনের এনজ়াইম, যা ডিমের প্রোটিন হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। শুধু তা-ই নয় ওই এনজ়াইম শরীরকে ডিমের পুষ্টিগুণও গ্রহণ করতে বাধা দেয়।