শৈশবের একাধিক শখ পরবর্তী সময়ে জীবনে ব্যস্ততার চাপে বজায় থাকে না। ছোটবেলার সাইকেল চালানো, ছবি আঁকা বা ডাকটিকিট জমানোর মতো শখগুলির সঙ্গে জুড়ে থাকে স্মৃতিমেদুরতা। কিন্তু ছোটবেলার শখই হতে পারে দীর্ঘায়ুর অন্যতম চাবিকাঠি। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে করা হয়
জাপানের ইউনিভার্সিটি অফ সুকুবা সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে, সাইকেল চালানোর মতো শৈশবের শখ মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করতে পারে। পাশাপাশি, নিয়মিত সাইকেল চালানোর ফলে বার্ধক্যে শরীরিক গঠন এবং মন ভাল থাকে। প্রায় ১০ বছর ধরে চলা এই গবেষণায় যাঁরা অংশগ্রহণ করেন, তাঁদের গড় বয়স ৭৪ বছর। এ ক্ষেত্রে যাঁরা সাইকেল চালাতে ভালবাসেন, যাঁরা সপ্তাহে আড়াই কিলোমিটারের বেশি সাইকেল চালান এবং যাঁরা একেবারেই সাইকেল চালান না— গবেষকরা এ রকম মানুষদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। দেখা গিয়েছে, যাঁরা সাইকেল চালান, তাঁরা অন্যদের তুলনায় পরবর্তী জীবনে বেশি সুস্থ থেকেছেন।
গবেষকেদের দাবি
গবেষক কেনজি সুনোদার পর্যবেক্ষণ, অল্প পরিমাণেও সাইকেল চালালে, তা ব্যক্তিকে শক্ত-সমর্থ থাকতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, ব্যক্তির পেশির ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে, কার্ডিয়ো ভাস্কুলার ব্যবস্থা সক্ষম রাখতে, অস্থিসন্ধি ভাল রাখতে সাহায্য করে। সাইকেল চালালে, অবসাদ দূর হতে পারে। দূর হতে পারে উদ্বেগ। যা পরোক্ষে ব্যক্তির দীর্ঘায়ুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুনোদার কথায়, ‘‘সাইকেল চালাতে গেলে ব্যালান্সের প্রয়োজন। একই সঙ্গে ব্যক্তিকে চোখ-কান খোলা রাখতে হয়।’’ বিষয়টিকে তিনি এক ধরনের ব্যায়াম হিসাবেই উল্লেখ করেছেন।
বয়সের সঙ্গে শরীরে জড়তা বাসা বাঁধে। তাই অল্প হাঁটা অনেকের কাছেই কষ্টকর হয়ে ওঠে। সেখানে হাঁটার তুলনায় সাইকেল চালানো তাকে কম সময়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে সাহায্য করে। গবেষকদের দাবি, বিষয়টি বয়স্কদের ক্ষেত্রে মনোবল বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
— প্রতীকী চিত্র। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতের পরিস্থিতি কী রকম
২০২২ সালের একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, শহরাঞ্চলের ৬৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কেরা সপ্তাহে অন্তত ১ বার সাইকেল চালান। আবার ভারতীয়দের মধ্যে ২১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কেরা এখনও বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য (গন্তব্য যখন ২ কিলোমিটারের মধ্যে) প্রতি দিন সাইকেলই ব্যবহার করেন। আবার ভারতে ৫৫ শতাংশ পরিবারে অন্তত একটি সাইকেল রয়েছে। সেখানে পরিবার প্রতি অন্তত একটি গাড়ি রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশের। সুতরাং বলা যেতে পারে, সাইকেল চালানোর উপকারিতা দেশের একটি বড় সংখ্যক নাগরিক পেয়ে থাকেন।
অন্যান্য শখ
শুধু সাইকেল চালানো নয়, ‘হার্ভার্ড হেল্থ’ সহ একাধিক আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, ছোটবেলার বিভিন্ন শখ (যেমন ধাঁধা, সঙ্গীত ইত্যাদি) মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে, যা পরোক্ষে আয়ুষ্কালকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। ১৬টি দেশের প্রায় ৯৩ হাজার বয়স্ক ব্যক্তির উপরে সমীক্ষা চালিয়ে ‘নেচার মেডিসিন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র দাবি করেছে, যাঁরা ছোটবেলার শখকে লালন করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বাকিদের তুলনায় বেশি বাঁচার আগ্রহ, তৃপ্তি, অবসাদের কম উপসর্গ এবং উন্নত স্বাস্থ্য লক্ষ করা গিয়েছে।