বিশ্বজুড়ে ক্রমশ বেড়ে চলা ডায়াবেটিক নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক এবং গবেষকরা। এই রোগ বশে রাখতে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাসেও জোর দিচ্ছেন তাঁরা। সমস্যা খাওয়া নিয়েই। ডায়াবিটিস হলে শুধু চিনি বাদ পড়ে না, মন ভরে ভাতও খাওয়া চলে না। কিন্তু বলিউড অভিনেতা গোবিন্দের স্ত্রী সুনীতা আহুজার পাতে থাকে ভাত। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, রুটি খান, তবে অর্ধেক। তবে যেহেতু তিনি নেপালি, সে কারণেই ভাত খাওয়া ছাড়তে পারেন না। সুনীতার পাতে থাকে ‘ডায়াবেটিক রাইস’। অনলাইনে খুঁজলেই এখন বিভিন্ন সংস্থার ‘ডায়াবেটিক রাইস’ পাওয়া যায়। তার জনপ্রিয়তাও বাড়ছে।
কিন্তু কী এই ‘ডায়াবেটিক রাইস’? সাদা ভাতের চেয়ে কি বেশি উপকারী? পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ডায়াবেটিস থাকলে ব্রাউন রাইস, পারবয়েলড রাইস ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হত। সে সবই এখন ডায়াবেটিস রাইসের মোড়কে বিক্রি হচ্ছে।’’
আসলে এটি কোনও বিশেষ ধরনের চাল নয়, বরং যে সব চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম অর্থাৎ, যে চাল খেলে শরীরে চট করে শর্করার মাত্রা খুব বেড়ে যায় না, সেগুলিকেই এই তালিকায় ফেলা হচ্ছে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একটি স্কেল বা সূচক, যা নির্দেশ করে কোনও একটি খাদ্য খেলে কত দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি হওয়ার অর্থ হল সেই খাবারটি খেলে রক্তে দ্রুত শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
ডায়াবেটিক রাইস বলে চিহ্নিত চালের বিশেষত্ব হল, সাদা ভাত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা যত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, এগুলিতে তা হয় না। বরং এই চালের ভাত খেলে রক্তে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ বাড়ে।
‘ডায়াবেটিক রাইস’-এর তালিকায় কী কী থাকতে পারে?
• ব্রাউন রাইস
• ব্ল্যাক রাইস
• পারবয়লেড রাইস
• প্রক্রিয়াজাত কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত চাল
পুষ্টিবিদ শম্পা জানাচ্ছেন, সাদা ভাতের চেয়ে এই ধরনের চাল দিয়ে তৈরি ভাতের পুষ্টিগুণ তুলনামূক বেশি। এতে ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন মেলে। এগুলি খেতে হয়তো তেমন ভাল নয়, কিন্তু যদি গুণ বিচার হয়, তা হলে স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সাদা ভাতের বদলে এই ধরনের চালের ভাত খাওয়া যেতে পারে।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কোন চালে কত?
সাদা চাল: ৭০-৮৯ (উচ্চ)
ব্রাউন রাইস: ৫০-৬০ (মধ্যম)
পারবয়লেড রাইস: ৪০-৫৫ (কম থেকে মধ্য)
ডায়াবেটিকদের জন্য এ ধরনের চাল কেন উপকারী?
• খাওয়ার পরে এক ঝটকায় রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় না।
• সাদা ভাতের চেয়ে পরিমাণে একটু বেশি খাওয়া যায়, ফলে তৃপ্তি আসে।
• সাদা ভাতের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম, ফলে ডায়াবিটিস বেশি হলে এটি খাওয়া সুবিধানজক।
তবে চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ডায়াবেটিক রাইসও মেপে খাওয়া জরুরি। অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে। শম্পা মনে করাচ্ছেন, ডায়াবেটিস রাইসের সঙ্গে যদি প্রচুর ডাল, দুধ, আম, কলা মেখে খাওয়া হয়, তবে এর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। শরীরে কার্বোহাইড্রেট যাবে। বদলে প্রোটিন জাতীয় খাবার অথচ তুলনামূলক কম কার্বোহাইড্রেট ভাতের সঙ্গে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তালিকায় পনির, টোফু, মাছ, ডিম, সব্জি রাখতে বলছেন পুষ্টিবিদ।