শীত পড়লেই নানা অনুষ্ঠান, পার্টি, বিয়েবাড়ি লেগেই থাকে। এই সময়ে আর নিয়ম মানা হয়ে ওঠে না। বড়দিনের পার্টি মানেই দেদার খাওয়াদাওয়া হবে। পছন্দমতো কেক-মিষ্টিও এই সময়ে খাবেন। আবার বিয়েবাড়িতে কব্জি ডুবিয়ে পোলাও-মাংস খেয়ে এসেই গলা-বুক জ্বালা হলে অ্যান্টাসিডও খেয়ে নেবেন। কিন্তু নিয়ম ভেঙে যতই আনন্দ করুন না কেন, অম্বলের ধাত থাকলে মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিডের বদলে ঘরোয়া উপকরণেই ভরসা রাখা ভাল। যে দিন প্রচুর খাওয়দাওয়া হবে, সে দিন সকাল থেকেই নিয়ম মানতে হবে। ওষুধ না খেয়েও অম্বল কমানো যায়, যদি কিছু নিয়ম মেনে চলেন।
বাঙালি খাদ্যরসিক। সে কারণেই গ্যাস-অম্বল, চোয়া ঢেঁকুর পিছু ছাড়ে না বাঙালির। অনেকের আবার বাইরের তেল-মশলাদার খাবার সহ্য হয় না একেবারেই। দু’চামচ বিরিয়ানি খেলেন কিংবা কামড় বসালেন কবিরাজিতে— ব্যস সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভিতর টক টক ভাব। কিন্তু গ্যাস-অম্বলের ভয়ে তো আর রসনার তৃপ্তি থেকে দূরে থাকা যায় না। তবে নিয়ম মানলে আর ভয় নেই।
কী কী নিয়ম মানবেন?
অম্বল হয়ে পেট-বুক জ্বালা করলে সঙ্গে সঙ্গে আরাম দিতে পারে আধ কাপ ঠান্ডা দুধ। দুধে এমন কিছু জিনিস থাকে, যা অ্যাসিডের সঙ্গে লড়তে সক্ষম। শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা কমায়। ফলে কম সময়ে শরীরের ভিতরের জ্বালা ভাব কমে।
আরও পড়ুন:
যে দিন রাতে ভূরিভোজের পরিকল্পনা আছে, সে দিন সকালে খেতে হবে ডিটক্স পানীয়। একটি গোটা আপেল ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এ বার একটি কাচের জারে জল নিয়ে আপেলের টুকরো ও ২-৩টি দারচিনির স্টিক ফেলে দিন। তাতে কিছু পুদিনা পাতাও মেশাতে পারেন। ঘণ্টা দুয়েক জারটি ফ্রিজে রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে ডিটক্স পানীয়। এই জল ওজন কমাবে, পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রাও কমাবে।
খাওয়াদাওয়ার পরে পেট ভার লাগলে অ্যান্টাসিড হয়, খেতে হবে আদা চা। ভুলেও নরম পানীয় মুখে তুলবেন না, তাতে হজম তো হবেই না, উল্টে অম্বল, পেট ফাঁপার সমস্যা বেড়ে যাবে। এই চা বানাতে, দুই চামচ আদা কুচি ভাল করে ফুটিয়ে নিন। অন্তত ৪-৫ মিনিট ফোটানোর পর ওই জলে একে একে চা পাতা, দারচিনি, গোলমরিচগুঁড়ো, তুলসিপাতা দিয়ে আরও কিছু ক্ষণ ফোটান। জল খানিকটা শুকিয়ে এলে নামিয়ে ছেঁকে নিন। তার পর ঠান্ডা হলে চুমুক দিলেই হবে।
পুদিনাপাতা দিয়ে দইয়ের ঘোলও গ্যাসের সমস্যা মেটাতে কাজে আসে। যাঁরা সারা বছর গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা সারা দিনে এক বার ঘোল খেতেই পারেন। উপকার পাবেন।
অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থাকলে, তেলমশলাদার খাবার খাওয়ার পরেই গলা-বুক জ্বালা হতে থাকে। সেই সময়ে আরাম দিতে পারে মৌরির চা। এক কাপ জলে এক চা-চামচ মৌরি নিয়ে ফোটাতে হবে। জলের রং বদলাতে থাকবে। ঘন হলে গ্যাস বন্ধ করে ছেঁকে নিতে হবে। মৌরির চা কোনও অ্যান্টাসিডের থেকে কম নয়। খেলে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমবে।
খাওয়ার পরেই বমি ভাব হলে, অল্প বিটনুন দিয়ে আদাকুচি খেতে পারেন। এতে বমি ভাব কমে যাবে।
শুকনো খোলায় জিরে ভেজে গুঁড়ো করে নিন। এক চামচ জিরে গুঁড়ো এক গ্লাস জলে মিশিয়ে খেতে পারেন। রাতে শোয়ার আগে খেলে, অম্বলে কষ্ট পেতে হবে না।
আরও একটি টোটকা আছে, যা রাতে খাওয়ার আধ ঘণ্টা পরে খেলে উপকার হবে। সেটি হল ক্যামোমাইল চা। ক্যামোমাইল টি-ব্যাগ বা শুকনো ফুল গুঁড়ো করে গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৩-৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পরে সেই চা পান করলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কমবে এবং রাতে ঘুমও ভাল হবে।