Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে ঘি, মাখন ও নারকেল তেল! বাদ দিতে বলছেন চিকিৎসক, কতখানি সত্য এই দাবি?

কেরলের যকৃৎ রোগের চিকিৎসকের দাবি, ঘি, মাখন এবং নারকেল তেল নাকি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। এ দিকে রুজুতা দিওয়েকারের মতো পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, ঘি খুবই স্বাস্থ্যকর। কোনটি আদপে সত্য? কী বলছেন কলকাতার চিকিৎসক এবং আমেরিকাবাসী বাঙালি পুষ্টিবিদ?

ঘি, মাখন এবং নারকেল তেল ভাল না কি খারাপ?

ঘি, মাখন এবং নারকেল তেল ভাল না কি খারাপ?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৫ ১১:০১
Share
Save

ঘি, মাখন এবং নারকেল তেল নাকি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। এমনই দাবি করলেন কেরলের যকৃৎ রোগের চিকিৎসক সিরিয়াক অ্যাবি ফিলিপস। এক্স সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘লিভারের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এবং লিভারের চর্বি কমাতে নারকেল তেল, ঘি এবং মাখনের মতো স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বদলে মোনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (যেগুলি ভাল ফ্যাট বলে চিহ্নিত) সমৃদ্ধ পরিশোধিত (রান্নার জন্য), অপরিশোধিত এবং কোল্ড-প্রেসড (সরাসরি ব্যবহারের জন্য) বীজের তেল ব্যবহার করুন’’।

চিকিৎসকের এই বক্তব্যে আবার ধোঁয়াশার সৃষ্টি। রুজুতা দিওয়েকারের মতো পুষ্টিবিদেরা বার বার ঘিয়ের উপকারিতা নিয়ে মানুষকে অবগত করার পর ধীরে ধীরে ভারতীয়েরা আবার ঘিয়ের দিকে ঝুঁকছিলেন। মাঝে ওজন ঝরানোর জন্য অনেকেই ঘি, মাখন ইত্যাদি বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রুজুতার প্রচারে ঘিয়ের পুষ্টিগুণ নিয়ে সন্দেহ কাটছিল। একই সঙ্গে ভারতীয় হেঁশেলের উপাদানের প্রতি টান বাড়ছিল মানুষের। তবে আবার যকৃৎ রোগের চিকিৎসকের এই বক্তব্যে প্রশ্ন জাগছে, ‘‘ঘি, মাখন এবং নারকেল তেল ভাল না কি খারাপ?’’

মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানাচ্ছেন, যকৃতের জন্য এই তিনটি জিনিস খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এই তিনটিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকায় কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় শরীরে। কিন্তু ঘি, মাখন এবং নারকেল তেল শরীরের পক্ষে সব ক্ষেত্রে খারাপ নয়। এগুলিতে মিডিয়াম-চেন ট্রাইগ্লিসারাইড (এমসিটি) জাতীয় ফ্যাট থাকে। এগুলি বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং ওজন ঝরানোর জন্যও কার্যকরী বলে মত চিকিৎসকের। পুষ্পিতা মণ্ডল বলছেন, ‘‘অনেক রোগের ক্ষেত্রে এমসিটি-ভিত্তিক ডায়েটের পরামর্শ দিই আমরা। এর ফলে শরীরে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। কিন্তু পরিমাণ বুঝে খেতে হবে। খুব বেশি খেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকিও থেকে যায়। কিন্তু পরিশোধিত তেল এবং বীজ তেল আমরা না খাওয়ারই পরামর্শ দিই। এগুলোতে প্রদাহজনিত রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও বেড়ে যায়।’’

যকৃতের জন্য ঘি, মাখন এবং নারকেল তেল কেন ক্ষতিকারক?

যকৃতের জন্য ঘি, মাখন এবং নারকেল তেল কেন ক্ষতিকারক?

একই বিষয় নিয়ে পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরীর বক্তব্য খানিক ভিন্ন। তিনি বলছেন, ‘‘ঘি-মাখনে ফ্যাট থাকে বলে যকৃতের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়, এই ধারণা ছিল প্রাচীন যুগে। কিন্তু মাঝে ঐতিহ্যবাহী খাবারকে সাদরে গ্রহণ করার হাওয়া তৈরি হল। বলা হল, এমনকি কফির মধ্যে মিশিয়ে খেলেও হার্ট, লিভার ভাল থাকে, ওজন কমে। কিন্তু আদপেই তা সত্য নয়। এ বার ফ্যাট সম্পর্কে বিশদ জানলে খানিক পরিষ্কার হতে পারে বিষয়টা। আমাদের শরীরে মূলত দু’রকমের ফ্যাট থাকে, স্যাচুরেটেড আর আনস্যাচুরেটেড। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মধ্যে রয়েছে মোনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। সমস্ত অঙ্গে (লিভার, হার্ট ইত্যাদি) এই তিন ফ্যাটের অনুপাত যদি ১:১:১ হয়, তা হলে সেটিই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। কিন্তু গত ১৫ বছরে ঘি-কে খুব অনেক উঁচু আসনে বসানো হয়। কারণ ঐতিহ্যগত সম্মান রয়েছে ঘিয়ের। দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাংশ মূলত ঘি, দক্ষিণাংশ প্রধানত নারকেল তেলের উপর নির্ভরশীল। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেল, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ভাল, সুতরাং ঘি ভাল। কিন্তু আমি বলব, খুব সীমিত পরিমাণে খেলে তবেই তার গুণাগুণ শরীরে টের পাওয়া যায়। কোনও রান্নায় অল্প পরিমাণে ঘি দিলেন, তবে ঠিক আছে। কিন্তু বেশি ঘি খেলে কিন্তু লিভারে ক্ষতি হতে পারে। মাখনের ক্ষেত্রেও তা সত্য। যদিও নারকেল তেলের ফ্যাটি অ্যাসিড স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। তা ছাড়া এতে অনেক বেশি পরিমাণে মিডিয়াম-চেন ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে। তাই হজমের জন্য নারকেল তেল ভাল। কিন্তু বাকি দু’টি বেশি খেলে যে শরীরে খারাপ প্রভাব পড়বে, তা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত সত্য। ঘিয়ের উপর নির্ভরশীল খাদ্যাভ্যাস তৈরির এই নতুন ধারা বন্ধ করা উচিত।’’

উল্টো দিকে পরিশোধিত (রিফাইন্ড অয়েল, যেমন সূর্যমুখী তেল, ক্যানোলা অয়েল, সয়াবিন তেল) এবং অপরিশোধিত বীজ তেল নিয়ে পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, পরিশোধিত তেল উচ্চ তাপে গরম করলেও কালো হয় না এবং নষ্টও হয় না। আর তাই এগুলি রান্নার জন্য উপযুক্ত। যে তেলগুলি অনেক ক্ষণ গরম করার কালো হয়ে যায়, সেগুলি আসলে কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। এগুলি একাধিক রোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু অপরিশোধিত (আনরিফাইন্ড অয়েল) তেল আবার খানিক গরম করলেই কার্বন বার হতে শুরু করে। এগুলি রান্নাতে ব্যবহার করা যায় না। স্যালাডে ব্যবহার করা যেতে পারে কেবল। এগুলি যকৃতের পক্ষে ভাল বলা হচ্ছে কারণ, এতে মোনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। পুষ্টিবিদ বলছেন, ‘‘কিন্তু আমি শুরুতেই বললাম, কেবল মোনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট দিয়ে হয় না, স্যাচুরেটেড ফ্যাটেরও প্রয়োজন। তিনটি ফ্যাটই ১:১:১ থাকলে, তবে সেটি স্বাস্থ্যকর। শুধু পরিশোধিত, অপরিশোধিত তেল নয়, তাই ঘি, মাখন, নারকেল তেলেরও দরকার রয়েছে। তবে আসল চিন্তার বিষয়, কতটা খেলে সেটা উপকারী, কখন সেটা ক্ষতিকারক।’’

তবে ঘি ও মাখন নিয়ে যে হইহই শুরু হয়েছিল, তাকে সমর্থন করেন না পুষ্টিবিদ। তাঁর মতে, যকৃতের জন্য সত্যিই ঘি বা মাখন খুব বেশি ভাল নয়। বিশেষ করে যকৃতের রোগ থাকলে এগুলি ক্ষতিকারক হতে পারে। সুতরাং চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের কথায় এটুকু স্পষ্ট, কোনও কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ভাল নয়, আর সমাজমাধ্যমের পরামর্শমতো নিজের ডায়েট ঠিক না করে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে তার ভিত্তিতে খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা উচিত।

Ghee Benefits Ghee Disadvantages coconut oil benefits butter benefits liver diseases Healthy Lifestyle

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।