মধ্যাহ্নভোজ সারার পর থেকেই আর কাজে মন বসে না? মনে হয়, অফিসের ডেস্কে মাথা রেখে একটু ঘুমিয়ে পড়তে পারলে মন্দ হয় না? তা হলে জেনে রাখুন, এমন মনে হওয়াটা মোটেই কারও একার নয়।
বিশেষত দুপুরে ভাত, রুটি জাতীয় খাবার খেলেই ঘুম ঘুম ভাব হয়। কাজ করতে ইচ্ছাই করে না। শরীরেরও নিজস্ব ছন্দ এবং ঘড়ি রয়েছে। দুপুর গড়ালেই সেই ছন্দ মেনে খানিক ক্লান্তি আসে। তা ছাড়া মধ্যাহ্নভোজের পর রক্তে শর্করার মাত্রাও ওঠা-পড়া করে। বিশেষত ভাত বা কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি জাতীয় খাবার খেলে।
শেষ পর্যন্ত ক্লান্তি ভাব কাটাতে অনেকেই গরম চা-কফিতে চুমুক দেন। কেউ আবার শরীরে চনমনে ভাব আনতে ধূমপানেরও আশ্রয় নেন। তবে চা-কফি ছেড়ে ‘চা’ পাতাহীন চা বা বিশেষ একটি পানীয়ে একবার চুমুক দিয়ে দেখুন। দিন দশেক খেলেই বদল বুঝতে পারবেন নিজেই। জিনিসটি আর কিছুই নয়, লবঙ্গ-দারচিনি ফোটানো জল। যাকে অনেকে ‘ভেষজ চা’-ও বলেন। অফিস ডেস্কে খাওয়ার উপযোগী, ডেস্কে বসে এই চায়ে চুমুক দিলে চনমনে ভাব ফিরবে বলে, একে ডেস্ক চা-ও বলা হচ্ছে।
উপকারী কেন?
১। দারচিনিতে এমন উপাদান রয়েছে যা রক্তে শর্করা বশে রাখতে সাহায্য করে। ইনসুলিন সঠিক ভাবে কাজ করলে শরীরও শর্করা জাতীয় খাবার থেকে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, খাবার খাওয়ার পরে রক্তে অনেক সময় শর্করার মাত্রায় যে ওঠা-পড়া হয়, তা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক দারচিনি। শর্করা ঠিক ভাবে কলাকোষে কাজ না করলেই ক্লান্তি আসতে পারে। লবঙ্গে থাকে ইউজিনোল, যা কার্বোহাইড্রেট বিপাকে বিশেষ ভাবে সহায়ক।
২। দুপুরে খাওয়ার পরে অনেক সময় বদহজমের সমস্যা হয়, অম্বল হয়ে যায়। দারচিনি কিন্তু হজমে সহায়ক। এটি খাবার হজমে সহায়ক উৎসেচকের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। লবঙ্গও পেটফাঁপা কমাতে সহায়ক। ফলে খাবার পড়ে দারচিনি-লবঙ্গ চায়ে চুমুক দিলে হজম ভাল হবে, শরীর ঝরঝরে লাগবে। একইসঙ্গে ধীরে ধীরে পেটের স্বাস্থ্যও ভাল হবে। পেট ভাল থাকলে শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গও ভাল ভাবে কাজ করতে পারে।
৩। লবঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। মস্তিষ্কে হওয়া অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে এই মশলা। দারচিনি এবং লবঙ্গের সুন্দর গন্ধ রয়েছে। এমন চায়ে চুমুক দিলে শরীরে চনমনে ভাব আসবে। ক্লান্তি কেটে যাবে। ক্যাফিন না থাকায় ভেষজ চা বা পানীয়টি শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হবে না।
৪। দারচিনি এবং লবঙ্গে প্রদাহনাশক উপাদান এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে। জ্বরজারি, গলা খুসখুস বা গা ম্যাজম্যাজে ভাব থাকলেও এই পানীয় উপকারী। ছোটখাটো সংক্রমণ দূর করতেও এটি সহায়ক।
কী ভাবে তৈরি করবেন ‘ডেস্ক টি’?
অফিসে মাইক্রোঅয়েভ অভেনে জল গরম করার সময় ২-৩টি লবঙ্গ এবং ১ টুকরো লবঙ্গ ফেলে দিন। তার পর সেটি পান করুন। চাইলে মধু যোগ করতে পারেন। না হলে বাড়িতেই লবঙ্গ-দারচিনি ফুটিয়ে চা বানিয়ে নিন। ফ্লাস্কে ভরে রাখতে পারেন। শুধু দুপুরে খাওয়ার পরে নয়, মাঝেমধ্যে আরও এক-দু’বার এমন পানীয়ে চুমুক দেওয়াই যায়।