এডিস মশাদের দাপাদাপি বন্ধ হবে। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে বিশ্বে প্রথম বার ‘সিঙ্গল ডোজ়’ প্রতিষেধক আনতে চলেছে ব্রাজিল। দীর্ঘ আট বছরের ট্রায়ালের শেষে টিকাটির কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হন সে দেশের স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। প্রায় ১৬ হাজার মানুষের উপরে টিকাটির প্রয়োগ করে দাবি করা হয়েছে, সেটি ৯১.৬ শতাংশ সফল। ডেঙ্গির সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ‘হেমারেজিক ফিভার’-এর ঝুঁকি কমাতেও প্রতিষেধকটি কাজ করবে বলেই দাবি গবেষকদের।
সাও পাওলোর বুটানটান ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা টিকাটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। ডেঙ্গির আরও দু’টি প্রতিষেধক এর আগে এসেছে, যেগুলি ডবল ডোজ় ও ট্রিপল ডোজ়ের। একটির নাম ‘টিএকে-৩০০’, যেটি তৈরি করেছে জাপান, অন্যটি ‘সিওয়াইডি-টিডিভি’ যা তিনটি ডোজ়ে নিতে হবে। ব্রাজিলের টিকাটির বিশেষত্ব হল, একটি ডোজ়েই তা ডেঙ্গি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারবে। টিকার নাম ‘বুটানটান-ডিভি’, যা ১২ বছর বয়সের পর থেকেই নেওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে। টিকাটি যাঁদের উপর প্রয়োগ করে দেখা হয়েছিল, তাঁদের বয়স ছিল ১২ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।
আরও পড়ুন:
'নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন'-এ টিকাটির কার্যকারিতা নিয়ে বিশদ লিখেছেন গবেষকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গির দুই উপরূপ ডিইএনভি-১ ও ডিইএনভি-২ এর বিরুদ্ধে খুব ভাল কাজ করেছে টিকাটি। দেখা গিয়েছে, এই দুই ভাইরাসের উপরূপকে ঠেকাতে টিকাটি প্রায় ৯০ শতাংশ সফল হয়েছে। ডেঙ্গি ভাইরাসের বাকি উপরূপগুলিকে ঠেকাতেও টিকাটি একই ভাবে কাজ করতে পারবে বলেও দাবি করা হয়েছে।
ডেঙ্গির সংক্রমণ বছর বছর বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ইতিমধ্যেই সতর্ক করে জানিয়েছে যে, ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আর পাঁচটা ভাইরাল ফিভারের সঙ্গে ডেঙ্গি জ্বরের খুব তফাৎ নেই। তবে ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার হলে রোগীর প্রাণ বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়ে। ডেঙ্গি জ্বর সৃষ্টিকারী ভাইরাসের চারটি উপরূপ আছে, ডিইএনভি-১ থেকে ডিইএনভি-৪। ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী মশা কামড়ানোর তিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর শুরু হয়। হেমারেজিক হলে রোগীর শরীরের বিভিন্ন ধমনী ও শিরা ফেটে গিয়ে রক্ত ও প্লাজমা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। বাইরে থেকে রক্ত দিলেও অনবরত রক্তক্ষরণে রোগীর অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। কেবল শিশু বা বয়স্কেরা নন, ইদানীং কমবয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যেও ডেঙ্গি হেমারেজিক জ্বরের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। তাই ডেঙ্গি ঠেকাতে নানা ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বিশ্ব জুড়েই। নতুন টিকাটির একটি ডোজ় কার্যকরী হলে, তা ডেঙ্গি থেকে অনেকটাই সুরক্ষা দিতে পারবে বলে আশা রাখছেন গবেষকেরা।