বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল বার করে ঢকঢক করে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। ফ্রিজের কনকনে ঠান্ডা জল খেলে শুধু সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথাই হবে না, হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হওয়ারও অন্যতম কারণও কিন্তু হিমশীতল জল। শুনতে অবাক লাগলেও তা সত্যি। যাঁদের হার্টের সমস্যা আগে থেকেই আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মুম্বই নিবাসী হৃদ্রোগ চিকিৎসক স্বরূপ সরোজ পালের মতে, আপাতদৃষ্টিতে খুব একটা ক্ষতিকর মনে না হলেও ফ্রিজের ঠান্ডা জল খাওয়ার অভ্যাস কিন্তু রক্তনালিকাগুলির উপর প্রভাব ফেলে, শুধু তা-ই নয়, হঠাৎ করে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়ে হার্টের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। চিকিৎসক বলেন, ‘‘হার্টের রোগীরা যখন বরফ দেওয়া কিংবা হিমশীতল জল খান, তখন রক্তনালিকাগুলি সঙ্কুচিত হয়ে যায়, যার ফলে শরীরে ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন তৈরি হয়ে রক্তচাপ হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এ ছাড়াও ঠান্ডা জলের প্রভাবে রক্তনালিকাগুলি শক্ত হয়ে যায়, তাই হৃদ্যন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। রক্তনালিগুলির মুখ সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে হৃদ্যন্ত্রে রক্তের চলাচল বাধা পায়। এই সমস্যা হৃদ্রোগীদের জন্য বড় বিপদের কারণ হতে পারে।’’
চিকিৎসকের মতে, ঠান্ডা জল ভেগাস স্নায়ুর উপরেও প্রভাব ফেলে। এই স্নায়ু হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই হৃদ্রোগীদের অতিরিক্ত ঠান্ডা জল না খাওয়াই ভাল।
অতিরিক্ত ঠান্ডা জল খেলে তা হৃৎস্পন্দনের হার কমিয়েও দিতে পারে। ‘ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন’-এর তথ্য বলছে, দিনের পর দিন কনকনে ঠান্ডা জল খেয়ে গেলে তা হৃৎস্পন্দনের হার অনিয়মিত করে দিতে পারে। সাধারণত এক জন প্রাপ্তবয়স্কের হার্টবিট মিনিটে ৬০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকে। হৃৎস্পন্দনের একটা নির্দিষ্ট ছন্দও থাকে। এর মাত্রা যদি কোনও ভাবে বেড়ে বা কমে যায়, তখন হার্টের সঙ্কোচন ও প্রসারণ অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় কার্ডিয়াক অ্যারিদ্মিয়া বলা হয়। তখন শ্বাসের হার বেড়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে এবং তা হৃদ্রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।