Advertisement
E-Paper

তরুণদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে কেন? জীবনযাত্রায় কী কী বদল এনে তা রোখা সম্ভব?

বয়স বাড়লে তবেই ক্যানসার হয়, এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষদের গড় বয়স হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, প্রতি পাঁচ জনে এমন এক জন আছেন, যাঁর ক্যানসার ধরা পড়েছে ৩৫ বছরের নীচে।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫৭
Cancer cases rising among young population, what are the reasons and how to lower the risk

ক্যানসার ঠেকাতে জীবনযাত্রায় কী কী বদল আনা জরুরি? ফাইল চিত্র।

দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণেই বাড়ছে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা। তার মধ্যে স্তন, ফুসফুস, মুখ, পাকস্থলী, বৃহদন্ত্রের ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির একটি সমীক্ষা দাবি করেছে, কমবয়সিদের মধ্যেই ক্যানসার বেশি ডালপালা মেলছে। এর অন্যতম বড় কারণ হল জীবনযাপনে অসংযম। বয়স বাড়লে তবেই ক্যানসার হয়, এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষদের গড় বয়স হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, প্রতি পাঁচ জনে এমন এক জন আছেন যাঁর ক্যানসার ধরা পড়েছে ৩৫ বছরের নীচে।

ক্যানসার চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তী সতর্ক করে বললেন, কমবয়সিরা মেয়েরাই বেশি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর কথায়, “দেশে মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের হার ক্রমশ বাড়ছে। এর মধ্যে গ্রামীণ এলাকার একটি বড় অংশও রয়েছে। স্তন ক্যানসারের পাশাপাশি মহিলাদের মধ্যে এখন আরও তিনটি ক্যানসারের প্রকোপ ভাল মাত্রায় দেখা যাচ্ছে। তা হল, জরায়ুমুখ, জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার।” দীর্ঘ দিন ধরে পেট ফুলে যাওয়া, মোটা হওয়া, হজমের গোলমাল, ঋতুস্রাবের পরে রক্তপাত, অনিয়মিত ঋতুস্রাবের মতো সমস্যা দেখা গেলে তা উপেক্ষা করেন মহিলারা। অসচেতনতাই ক্যানসার বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসক। তা ছাড়া, এখন অধিকাংশ মহিলাই গর্ভধারণ করছেন অনেক দেরিতে। প্রথম সন্তান আসছে ৩৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সে, যা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তা ছাড়া, এখনকার অনেক মেয়েই সন্তানকে স্তন্যপান করাতে চান না, এই প্রবণতাও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকখানিই বাড়িয়ে দেয়।

ক্যানসার আচমকা হয় না। এর বীজ দীর্ঘ সময় ধরেই রোপিত হতে থাকে শরীরে। এর নেপথ্যে আছে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসও। এখনকার শিশুরাও সুষম খাবারের বদলে প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এই সব খাবারে এমন রাসায়নিক থাকে, যা ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, অনেক নামী ব্র্যান্ডে যে সব প্রক্রিয়াজাত মাংস দিয়ে সসেজ, বার্গার তৈরি হচ্ছে, সেই মাংসের স্বাদ বাড়াতে প্রাণীদের বিশেষ হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এই হরমোন মানুষের শরীরে ঢুকলে মানবশরীরের স্বাভাবিক হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে দিতে পারে। সে কারণেই দেখা যাচ্ছে, এখন সময়ের আগেই ঋতুবন্ধ হচ্ছে মহিলাদের অথবা ঋতুস্রাব শুরুর সময় এগিয়ে আসছে অনেকটাই। আগে ১২-১৩ বছর বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হত, এখন ৮-৯ বছর বয়সি শিশুরও ঋতুস্রাব শুরু হচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে গিয়ে স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

নিউক্লিয়ার মেডিসিনের চিকিৎসক সোনালি ঘোষের বক্তব্য, কমবয়সিদের মধ্যে কোলন, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ছে। মুখ ও গলার ক্যানসার উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে কমবয়সি পুরুষদের। তামাকজাত নানা দ্রব্য, যেমন সিগারেট বা বিড়ি, গুটখা, জর্দা, খৈনি থেকে বাড়ছে মুখ ও গলার ক্যানসারের ঝুঁকি। মুখ ও গলার ক্যানসার কিন্তু এক জায়গায় থেমে থাকে না, ধীরে ধীরে লসিকা গ্রন্থি হয়ে ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়ে। দেখা যাচ্ছে, মুখ ও গলা-ঘাড়ের ক্যানসারে আক্রান্তদের একটা বড় অংশের বয়স ৪০ থেকে ৬০। ১৮-২৫ বছরের ছেলেমেয়েদেরও এই রোগ হচ্ছে।

আরও একটি ক্যানসার রীতিমতো মহামারীর চেহারা নিচ্ছে, তা হল জরায়ুমুখের ক্যানসার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে যে মহিলারা মারা যান, তাঁদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর কারণ এই জরায়ুমুখ ক্যানসার! দেশে এখন প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ মহিলা এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। অত্যধিক নেশার প্রকোপ, ঋতুস্রাবের সময়ে পরিচ্ছন্নতার অভাব, অসুরক্ষিত যৌনজীবন, মুঠো মুঠো জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি খাওয়ার অভ্যাস এর অন্যতম বড় কারণ। সচেতনতার অভাবই এই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, অথচ প্রথমে ধরা পড়লে এই রোগ সেরে যেতে পারে পুরোপুরি। প্যাপ স্মিয়ার, এইচপিভি, ভিআইএ, কলপোস্কোপি-র মতো অনেক সহজ পদ্ধতি এসে গিয়েছে। তার পরেও ২৫ পেরোনো মহিলাদের অধিকাংশই বছরে এক বার এই সব রুটিন পরীক্ষার ব্যাপারে উদাসীন।

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে গত ২০ বছরে পাকস্থলী, বৃহদন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্তের হার ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশ হয়েছে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে হলে জীবনযাপনে সংযম আনতেই হবে। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, ক্যানসার থেকে রেহাই পাওয়ার দু’টি উপায় আছে— ‘প্রিভেনশন অঙ্কোলজি’। এর অর্থ, ক্যানসারের জন্য দায়ী এমন অভ্যাস, যেমন, ধূমপান, তামাক চিবোনো, মদ্যপান ছাড়তে হবে ও খাদ্যাভ্যাসে বদল আনতে হবে। দ্বিতীয় উপায়টির পোশাকি নাম ‘আর্লি ডিটেকশন’ অর্থাৎ, নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে। যাঁদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস রয়েছে তাঁদের আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে আগে জরুরি। ছোট থেকেই ভুলভাল খাওয়ার অভ্যাস পরবর্তী কালে ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’-এর কারণ হয়ে ওঠে, যা পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। সব রকম জাঙ্ক ফুড ও কৃত্রিম রং মেশানো খাবার খাওয়া বন্ধ করে, ফাইবার জাতীয় খাবার যেমন দানাশস্য, বাদাম, বীজ, সব্জি ও ফল বেশি করে খেতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চার কোনও বিকল্প নেই। ধূমপান ও মদ্যপানের নেশা ছেড়ে দিলেই ভাল। বয়স ত্রিশ পেরোলে কিছু স্ক্রিনিং টেস্ট করিয়ে রাখা জরুরি। যেমন, মহিলাদের প্রতি মাসে নিজের স্তন পরীক্ষা, প্রতি বছর ম্যামোগ্রাম টেস্ট, প্যাপ টেস্ট করানো জরুরি। পুরুষদের ‘পিএসএ টেস্ট’ বা ‘প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট’ করিয়ে রাখা ভাল।

Cancer Care cancer awareness Oral Cancer Cervical Cancer Lung Cancer Breast Cancer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy