সংসার আর অফিস একসঙ্গে একহাতে সামলাতে হিমশিম খেতে হয় অনেককেই। তাই দু’বেলার ভাত বেশি করেই করে রাখেন অনেকে। আবার সময় বাঁচাতে একসঙ্গে অনেকটা ভাত করে ফ্রিজে রেখে দেওয়াও হয়। বার করে গরম করে নিয়ে খেলেই হল। কিন্তু এই যে বার বার ফ্রিজ থেকে ভাত বার করে গরম করে খাওয়া হচ্ছে, তা কি শরীরের জন্য ভাল? পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, এই অভ্যাস একেবারেই ঠিক নয়। সময় ও গ্যাসের খরচ বাঁচছে ঠিকই, কিন্তু শরীরের বারোটা বেজে যাচ্ছে।
আগের দিনের বেঁচে যাওয়া ভাত পরের দিন গরম করে খাওয়া হয় অনেক বাড়িতেই। ভাত রান্না করার পর তা সঠিক তাপমাত্রায়, সঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করলে তার মধ্যে ব্যাসিলাস সেরেয়াস নামক ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। সেই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে যে রোগ হয়, তা-ই ‘ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম’ নামে পরিচিত। ব্যাসিলাস সেরেয়াস হল এমন একগুচ্ছ ব্যাক্টেরিয়া, যাকে ধ্বংস করা কঠিন। রান্না করার সময়ে সঠিক তাপমাত্রা পেলেই এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়া আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। খাবারের মধ্যে দিয়ে তা পেটে গেলে ব্যাক্টেরিয়া থেকে নির্গত টক্সিনের ফলে সমস্যা শুরু হয়।
কী কী উপসর্গ দেখে সতর্ক হবেন?
১) কোনও খাবার থেকে ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে ১ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে একাধিক বার বমি হতে দেখা যায়। বাসি ভাত বা ভাত দিয়ে তৈরি খাবার থেকে কোনও ভাবে সংক্রামিত হলে বমি হবেই।
২) ব্যাসিলাস সেরেয়াস নামক ব্যাক্টেরিয়াটি শরীরে প্রবেশ করার পর ওই ব্যক্তির গ্যাস্ট্রো-এনটেস্টাইন ট্র্যাকের ভিতর বাসা বাঁধে। সেখানে বিষক্রিয়া শুরু করে। ফলে অন্ত্রেও সংক্রমণ শুরু হয়। একাধিক বার জলের মতো মলত্যাগ করেন রোগী।
৩) অতিরিক্ত বমি এবং মলত্যাগের কারণে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যেতে থাকে। জলের অভাবে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। পেটের পেশির দ্রুত সঙ্কোচন-প্রসারণের ফলে যন্ত্রণা হতে শুরু করে। সঙ্গে কারও কারও সারা শরীরেও ব্যথা লক্ষ করা যায়।
এই ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায় কী?
১) বেঁচে যাওয়া খাবার বেশি ক্ষণ বাইরে ফেলে রাখা যাবে না। বিশেষ করে ভ্যাপসা আবহাওয়া এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়া উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। সঙ্গে তাদের বিষক্রিয়ার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২) দুপুরবেলা ভাত খেয়ে বেঁচে যাওয়া ভাতটুকু রাইসবোলের মধ্যে তুলে রেখে দিলেন। পাত্রটি মাইক্রোওয়েভ প্রুফ হলে সেই সমেত গরমও করে নেন অনেকে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, খাবার সুরক্ষিত রাখতে হলে কাচের, বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করাই ভাল। রান্না করা ভাত ফ্রিজে তোলার আগে দেখে নেওয়া জরুরি যে, তা পুরোপুরি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এসেছে কি না।
৩) বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করা থেকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখা— সবই করেছেন। তার পরেও যদি মনের কোথাও সন্দেহ থাকে, সে ক্ষেত্রে খাবারের প্রতি মায়া না রেখে চোখ বন্ধ করে তা ফেলে দিন।