কখনও বৃষ্টি, তার পরেই চড়া রোদ। আবহাওয়ার এই ব্যাপক তারতম্যের সুযোগে বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে ভাইরাস ও ব্যাক্টিরিয়ার। তাতে আক্রান্ত হয়ে কমছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যার ফল, চড়া রোদে ‘হিট এগজ়রশন’-এর মতো সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় সব বয়সের মানুষ।
গ্রীষ্মের মতো টানা তাপপ্রবাহ চলছে না ঠিকই। কিন্তু, টানা কয়েক দিন প্রবল বৃষ্টি হওয়ার পরের দিন চড়া রোদ উঠছে। কখনও আবার সকালে কয়েক ঘণ্টা রোদ থাকার পরে বিকেলের দিকে বৃষ্টি নামছে। এই রোদে কয়েক ঘণ্টা থাকলেই শরীরে তীব্র অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। মাথা ঘোরানো, গা-বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, প্রচণ্ড ক্লান্তির মতো সমস্যা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের মহড়ায় এবং রেড রোডে অনুষ্ঠানের দিনে অনেক স্কুলপড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, তীব্র গরমে শরীরে জলশূন্যতাতৈরি হয়েছে।
বৃষ্টির মাঝেই তীব্র রোদে গরমের অনুভূতি মারাত্মক হচ্ছে। প্রবল ঘাম হওয়ায় শরীর থেকে জল ও নুন বেশি পরিমাণে বেরিয়ে গিয়ে সমস্যা বাড়ছে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, তাপমাত্রা যা-ই থাকুক, চড়া রোদে গরম অনুভূত হওয়ার মাত্রা এবং আর্দ্রতা মারাত্মক বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা চড়া রোদে অভ্যস্ত নন, তাঁরা ঘণ্টা দুয়েক এই তীব্র গরমে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’’
একই সঙ্গে তিনি জানাচ্ছেন, বৃষ্টি-চড়া রোদে আবহাওয়ার প্রতিনিয়ত যে তারতম্য ঘটছে, তাতে পোয়াবারো হয়েছে ভাইরাস ও ব্যাক্টিরিয়ার। ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে বহু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, টানা বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমে ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, আচমকা চড়া রোদে আবার তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। এতে প্রচণ্ড ঘাম হয়। সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম শুকোতে দেরি হয়। কেউ সেই অবস্থাতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঢুকছেন, পাখার তলায় বসছেন। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, ‘‘ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। যাঁরা আচমকা চড়া রোদে অসুস্থ হচ্ছেন, তাঁরা বেশির ভাগই হয় আগে সংক্রমিত হয়েছিলেন, কিংবা তখনও শরীরে সংক্রমণ রয়ে গিয়েছে। যার ফলে শরীরে জলের চাহিদা মারাত্মক বেড়ে যাচ্ছে। তার জেরে প্রচণ্ডরোদে শরীর আরও দুর্বল হয়ে অসুস্থ বোধ হচ্ছে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তীব্র গরম বা ঠান্ডা, যে কোনও পরিস্থিতিতে শরীর ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়। কিন্তু আজ বৃষ্টি, কাল চড়া রোদ, এমন তারতম্যে শরীরও ঠিক মতো খাপ খাওয়াতে পারছে না। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘যদি আস্তে আস্তে তাপমাত্রা পরিবর্তন হয়, তা হলে শরীর সেটা মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার ফারাক হলেই অস্বস্তিবোধ হয়।’’
তিনিও জানাচ্ছেন, প্রচণ্ড রোদে অস্বস্তি হলে অবহেলা করা চলবে না। সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়ে, কপালে ঠান্ডা জল দিতে হবে। বেশি করে জল খেতে হবে। অল্প ঠান্ডা জায়গায় বসে ঘাম শুকিয়ে নেওয়াও প্রয়োজন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)