ঘুম থেকে উঠতেই এক কাপ ধোঁয়াওঠা গরম চা বা কফি পেলে কার না ভাল লাগে! শীতের দিনগুলিতে যদি প্রতি বেলাই থাকে গরম গরম ভাত-রুটি, তরকারি, তা হলে তো কথাই নেই। তবে অতিরিক্ত গরম খাবার খেলে কিংবা একই খাবার বারবার গরম করে খেলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
ডা. অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, এক-আধ দিন গরম খেলে তেমন সমস্যা না-ও হতে পারে। কিন্তু দিনের পর দিন, বারবার অতিরিক্ত গরম খাবার খেলে ঠোঁট, খাদ্যনালিতে থাকা মিউকাসের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঠিক যে ভাবে অনেকক্ষণ চড়া রোদে থাকলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বাড়তে পারে মুখের ভিতরে ঘা হওয়ার সম্ভাবনা। পরবর্তীতে কর্কট রোগের আশঙ্কাও থেকে যায়।
অনেকেরই অভ্যাস, কাজের ফাঁকে একটু চা-ধূমপান সহযোগে আড্ডা। ডাঃ তালুকদার বলছেন, “এর জেরেও সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সিগারেটের গরম ধোঁয়া আর চা বা কফির গরম তরল মুখের ভিতরে, খাদ্যনালিতে বাড়তি চাপ ফেলে। এই ক্ষেত্রেও ঘা হওয়ার সম্ভাবনা, কর্কট রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।” এ ছাড়াও, অতিরিক্ত গরম খাবারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জিভের স্বাদকোষ। এর জেরে খাওয়ার রুচি, খিদে ভাব কমে যায়। হজম ক্ষমতাও কমে। বাড়ে অম্বল, গ্যাস, বমির মতো সমস্যা।
ইদানীং আগুন পান, সিজ়লার জাতীয় খাবার খুবই জনপ্রিয়। তবে এই পান খেতে গিয়ে অনেকেই মুখের ভিতরে জ্বালা ভাব অনুভব করেন। পরে দেখা যায়, ঘায়ের মতো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণ চুন দেওয়া পানও খুব বেশি খেলে একই ধরনের ক্ষত হতে পারে মুখের ভিতরে।
বাচ্চা, বয়স্কদের ক্ষেত্রে
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, “যদি শিশুদের খাওয়ানোর সময়ে বড়রা খাবারের তাপমাত্রা বুঝতে না পেরে অতিরিক্ত গরম খাবার খাইয়ে ফেলেন, তা হলেও হতে পারে বিপদ। দীর্ঘ দিন ধরে খাদ্যনালি, জিভের সমস্যা রয়ে যেতে পারে। বমি, অম্বলের সম্ভাবনাও বাড়ে।”
বয়স্কদের আবার অনেক সময়ে নানা ধরনের ওষুধ খেতে হয়। কিছু ওষুধের প্রভাবে জিভের স্বাদকোষ সাময়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জিভে স্বাদ ঠিকঠাক না থাকার ফলে অতিরিক্ত গরম খাবার মুখে দিয়ে ফেললেও তাঁরা বুঝতে পারেন না। তার থেকে পরে ক্ষত তৈরি হতে পারে মুখের ভিতরে।
বারবার গরম নয়
ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে অনেকেই একসঙ্গে অনেক দিনের রান্না করে রাখেন। প্রতি বেলা খাওয়ার আগে তা গরম করে নেন। কখনও আবার ভরসা ফাস্ট ফুডে। ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী এবং পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী বলছেন, এই ভাবে একই খাবার বারবার গরম করে খেলে কিংবা একই তেলে ভাজা খাবারে নিজেদেরই ক্ষতি। বারবার খাবার গরম করলে সেটির পুষ্টিগুণ হ্রাস পায়, স্বাদ বদলে যায়। নষ্ট হয় খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-র গুণাগুণ। ওমেগা-থ্রি ফ্যাটের গুণও কিছুটা নষ্ট হতে পারে। খুব বেশি ভাজলে খাবারে থাকা প্রোটিনও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তা হলে উপায়?
- অতিরিক্ত গরম খাবারের বদলে যদি একটু উষ্ণ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তা হলে খাবার খেয়ে যেমন আরাম, খাওয়ার সময়ে বিশেষ সমস্যাও হয় না।
- অতিরিক্ত গরম খাবার খেয়ে ফেলায় মুখের ভিতরে ঘা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- একই তেলে বারবার খাবার না ভেজে টাটকা তেল ব্যবহার করুন।
- অনেকটা খাবার একসঙ্গে রান্না করলেও ফ্রিজে রাখার সময়ে তা ভাগ করে আলাদা পাত্রে রাখলে বারবার পুরো খাবারটা গরম না করে প্রয়োজন মতো পরিমাণে গরম করা যায়।
গ্যাসের বদলে যদি আভেনে খাবার গরম করা হয়, তা হলে পুষ্টিগুণ তুলনামূলক ভাবে কম নষ্ট হয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)