রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে ফের চিন্তা বাড়ছে। গত এক মাসে মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের ১৬টি জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি, যার মধ্যে কলকাতাও রয়েছে। এমনিতেই বর্ষার সময়ে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। কারণ, এই আবহাওয়াই ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়াদের বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ। ডেঙ্গির উপসর্গ যদি সাধারণহয়, তা হলে নিরাময়ে বেশি সময় লাগে না। তবে যদি ‘সিভিয়ার’ ডেঙ্গি ধরা পড়ে, তা হলে চিন্তার বিষয় আছে বই কি। ডেঙ্গি সেরে গেলেও অন্তত সপ্তাহ খানেক ধরে সাবধান না থাকলে শরীরে একাধিক রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমনই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
সন্ধ্যা ও রাতের সময়টাতেই ডেঙ্গি মশার দাপট বাড়ছে, এমনই জানালেন সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর কথায়, “বৃষ্টিতে যত্রতত্র জমা জলে ডিম পাড়ছে ডেঙ্গির মশা। বাড়ির আনাচকানাচে জল জমে থাকলেও সেখানে মশার বংশ বাড়ছে। মশাবাহিত ডেঙ্গির ভাইরাস বর্ষার এই স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেই দ্রুত সংখ্যায় বাড়ে। তাই সাবধান না হলেই বিপদ। সবচেয়ে আগে খেয়াল রাখতে হবে, জল যেন না জমে। রাতে মশারি টাঙিয়ে শোয়াই ভাল। ছোটদের ফুলহাতা জামা পরিয়ে রাখলে ভাল।”
আরও পড়ুন:
ডেঙ্গির লক্ষণ কি বদলাচ্ছে?
প্রচণ্ড দুর্বলতা, পেশিতে যন্ত্রণা, মাথা ঘোরা, বমি ভাব এ সব তো থাকেই, পাশাপাশি চুল পড়া, ঘন ঘন মেজাজ বদলে যাওয়া এমনকি দৃষ্টিশক্তি ঝাপসাও হয়ে যেতে পারে ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে। সকলের ক্ষেত্রেই যে এই সব উপসর্গ দেখা দেবে, তা নয়। যদি শরীরে আগে থেকেই অনেক অসুখবিসুখ থাকে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রচণ্ড দুর্বল হয়, তা হলে এমন নানাবিধ সমস্যা একে একে দেখা দিতে থাকে। চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পালের বক্তব্য, ‘সিভিয়ার’ ডেঙ্গিতে চোখের পিছনে যন্ত্রণা হয়, গায়ে র্যাশ বেরোতে পারে। পাশাপাশি, শরীরের ভিতর রক্তক্ষরণও হতে পারে। ডেঙ্গি থাবা বসায় হার্টেও। ডেঙ্গি সেরে গেলেও বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, এমনকি হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হতেও দেখা গিয়েছে কিছু রোগীর। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘মায়োকার্ডাইটিস’। এমনও দেখা গিয়েছে, ডেঙ্গি সারিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েও দিন পাঁচেকের মাথায় অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট ফের তলানিতে নেমে গিয়েছে । ডেঙ্গি নিয়ে যে রোগীরা আসছেন, তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন পেশিতে ও গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা হয় জ্বর থাকাকালীন। শরীরে জলের মাত্রা কমে যায়, ওজনও কমতে থাকে অনেক সময়ে।
আরও পড়ুন:
কী কী টেস্ট অবশ্যই করাবেন?
ডেঙ্গি হলে কিন্তু ঘরোয়া টোটকা নয়, চিকিৎসকের কাছেই যেতে হবে। ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে ঘরোয়া টোটকা প্রয়োগ করতে থাকলে হিতে বিপরীত হবে। তিন দিনের বেশি জ্বর, সঙ্গে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, গায়ে হালকা র্যাশ বেরোলে আগে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। এনএস১ অ্যান্টিজেন’ টেস্ট করানো জরুরি। এই টেস্টের রিপোর্ট দেখে বোঝা যাবে, শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কি না। অনেকেই এনএস১ টেস্ট করে ভাবেন ডেঙ্গি হয়েছে। সেখানেও ভুল হয়। ওই পরীক্ষায় কেবল ভাইরাসের উপস্থিতি অনুমান করা হয়। সেই ভাইরাস ডেঙ্গি কি না, তা ধরতে রক্তের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাতে হয়। তার জন্য ‘আইজিএম’ ও ‘আইজিজি’ অ্যান্টিবডি টেস্ট করানো জরুরি, যা নিশ্চিত ভাবে ডেঙ্গি সংক্রমণ চিহ্নিত করতে পারে।