Advertisement
E-Paper

পুজোর মুখে ডেঙ্গির দাপাদাপি, সঙ্কটজনক লক্ষণ না বুঝলেই বিপদ, জ্বর কমার পরেই শুরু হয় আসল সমস্যা

ডেঙ্গি জ্বর তিন থেকে সাত দিন থাকে, এর পর জ্বর কমতে থাকে। জ্বর কমতে শুরু করার পর পরই আসল বিপদটা শুরু হয়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:১৩
Dengue mosquito awareness, How to Protect Yourself from Dengue

ডেঙ্গিতে ঝুঁকি বাড়ছে কেন, সতর্ক করলেন চিকিৎসকেরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ডেঙ্গির সংক্রমণ এ বছর যে হারে বাড়ছে, তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। গত মাসেই কলকাতায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রেই খবর, ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধির সময় হল অগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর। গত এক মাসে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ভালই বেড়েছে। তাই ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক হওয়ার সময় চলে এসেছে। সামনেই পুজো। বহু মানুষ প্যান্ডেলে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখবেন। সঙ্গে ছোটরাও থাকবে। তাই সতর্ক না হলেই বিপদ। পুজো নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘ্নে কাটাতে তাই কী কী করা জরুরি, কী ভাবে সতর্ক হবেন, ডেঙ্গি ধরা পড়লে কী করণীয়, সবই জেনে রাখা জরুরি।

ডেঙ্গিতে ঝুঁকি বাড়ছে কেন?

ডেঙ্গিতে জ্বরই কিন্তু একমাত্র লক্ষণ নয়, যা দেখে সতর্ক হতে হবে। জ্বর সেরে গিয়েছে মানেই যে ডেঙ্গি রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছেন, এমনটা ধরে নিয়েই বিপদের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছেন সাধারণ মানুষ। এ কথাই জানালেন সংক্রামক রোগ বিষক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। জ্বর সেরে গেলেও ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা ডেঙ্গি রোগীকে বিশেষ নজরে রাখা ভীষণ জরুরি। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে শরীরে জলের ঘাটতি শুরু হয়। শরীরের কোষগুলিতে জল কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন অঙ্গের কাজ ব্যহত হয়। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বাড়াবাড়ি পর্যায় পৌঁছেলে ফুসফুস, হৃদ‌্‌যন্ত্র, লিভারের মতো একাধিক অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম ক’দিন যেমন ডেঙ্গি ভাইরাস রক্তনালি ও কোষগুলি থেকে জল টেনে বার করে আনে, তেমনই কয়েক দিন পর আবার সেই জল কোষে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। তাই ডেঙ্গি রোগীকে স্যালাইন বা ফ্লুইড কখন বেশি দিতে হবে, কখন আবার স্যালাইনের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে, সে দিকে খেয়াল রাখা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে জল বেশি হয়ে গেলে আবার রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হৃদ্‌যন্ত্রের উপর চাপ তৈরি হয় এবং হার্ট ফেল হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়।তাই ডেঙ্গি ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শমতোই থাকতে হবে। বাড়াবাড়ি হলেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন।

ডেঙ্গি আর ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ গুলিয়ে ফেলবেন না

জ্বর তিন দিনের বেশি থাকা মানেই অনেকে ভেবে নেন ভাইরাল জ্বর। তা নয়। চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির জ্বর থাকে ৩-৭ দিন। ওই সময়ে প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা থাকে, গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা হয়, তীব্র মাথা যন্ত্রণা এবং হালকা শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এই সব লক্ষণ দেখেই ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলা বা নেটমাধ্যম ঘেঁটে বিভিন্ন ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করতে শুরু করলেই মুশকিল। আগে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। তাতে ডেঙ্গি ধরা পড়লে তবে চিকিৎসা শুরু হবে।

কোন কোন পরীক্ষা জরুরি?

প্রথম যে টেস্টটি করাতে হবে তা হল, এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট। এই টেস্টের রিপোর্ট দেখে বোঝা যাবে শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কি না।‘আইজিএম’ ও ‘আইজিজি’ অ্যান্টিবডি টেস্টও করাতে দেন চিকিৎসকেরা। কোন ভাইরাসের সংক্রমণ, তা বোঝা যাবে এতে।

‘নিউক্লিক অ্যাসিড অ্যামপ্লিফিকেশন টেস্ট’ (এনএএটি)করিয়ে নেওয়াও জরুরি।এই পরীক্ষাটি আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মতো, ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে এতে।

এনএস-১ ও এলাইজা টেস্টের পরে ডেঙ্গি-পজ়িটিভ এলে সেই রোগীকে আলাদা রেখে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ডেঙ্গি রোগী যদি স্বাভাবিক ভাবে ঘুরে বেড়ান, তা হলে রোগ অনেকের মধ্যে ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়।

সতর্কতা

খুব ছোট এবং বয়স্কদের ডেঙ্গিতে ঝুঁকি বেশি। বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, কোমর্বিডিটিও থাকে। তাই এই সময়ে বাইরে বেশি বেরোতে হলে গা-ঢাকা পোশাক পরাই ভাল।

ডেঙ্গির এডিস মশা ভোরে ও সন্ধ্যায় বেশি কামড়ায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা, ভোর ৪টে থেকে সকাল ৬টা ডেঙ্গির মশা বেশি সক্রিয় থাকে। এলাকায় যদি মশার উৎপাত বেশি থাকে, তা হলে ওই সময়ে প্রয়োজনে ঘরের জানলা বন্ধ রাখুন। মশারি ব্যবহার করতে হবে অবশ্যই।

বাড়ির কোথাও জল যেন না জমে থাকে, খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির ছাদে, টবের মধ্যে, রান্নাঘরে কোথাও জল জমতে দেবেন না। খোলা পাত্রে জল রেখে দেবেন না।

ডেঙ্গি হলে শরীরে জলের পরিমাণ কমে যায়, তাই যথেষ্ট পরিমাণ জল, শরবত, ডাবের জল, অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার দিতে হবে। রোগী খেতে না পারলে স্যালাইন দিতে হবে। প্যাকেটজাত ফলের রস বা হেল্‌থ ড্রিঙ্ক খাওয়াতে গেলে হিতে বিপরীত হবে।

রোগীকে ব্যথা কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন বা ওই জাতীয় ওষুধ দেওয়া চলবে না।

যদি রোগীর রক্তচাপ কমে যায়, পালস রেট বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত বেরোতে থাকে, তা হলে দেরি না করে হাসপাতাল বা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

Dengue Awareness Dengue fever Puja Special 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy