অ্যান্টিবায়োটিক আর ঠিকমতো কাজ করছে না অনেকের শরীরেই। ডোজ় না জেনেই মুঠো মুঠো ওষুধ খেয়ে ফেলার প্রভাব যে কতটা ভয়ঙ্কর, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। ইন্ডিয়ার কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) সম্প্রতি তাদের একটি সমীক্ষায় দাবি করেছে, বেশ কিছু ব্যাক্টেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। ফলে মূত্রনালির সংক্রমণ, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, রক্তের কয়েক রকম সংক্রমণজনিত রোগ সারাতে আর চেনা ওষুধগুলি কাজেই লাগছে না।
গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর অবধি দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের উপর পরীক্ষা চালিয়ে আইসিএমআর তাদের সমীক্ষার ফল করেছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ই.কোলাই, ক্লেবসিয়েল্লা নিউমোনি, সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসা, স্ট্যাফাইলোক্কাস অরিয়াসের মতো ব্যাক্টেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারছে। ফলে এই ব্যাক্টেরিয়াগুলি যে ধরনের রোগের জন্য দায়ী, যেমন ডায়েরিয়া, সেপসিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি অসুখ সারাতে আর অ্যান্টিবায়োটিক তেমন ভাবে কাজ করছে না। অর্থাৎ, ওষুধ খেয়েও রোগ ঠিকমতো সারছে না।
আরও পড়ুন:
পছন্দের ওষুধ নিরাপদ মনে করে যথেচ্ছ খেয়ে ফেলার এই অভ্যাসই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে দিনের পর দিন। যে অ্যান্টিবায়োটিকের রোগ সারানোর কথা ছিল, সেটিই ক্রমশ প্রতিরোধী করে তুলছে শরীরকে। ফলে দেখা দিচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণ, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স’। সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট’-এর একটি গবেষণাপত্রেও দাবি করা হয়েছিল, ২০৫০ সালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণেই প্রায় ৩ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
কী ভাবে এর প্রতিকার সম্ভব? এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, প্রেসক্রিপশনে কোনও রকম অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের নাম লেখার সময় চিকিৎসকদের তার কারণ উল্লেখ করলে ভাল। তা হলেই কী ধরনের রোগে তার চিকিৎসা হচ্ছে, তা বোঝা যাবে। কেবল চিকিৎসকদেরই নয়, ওষুধ বিক্রেতাদেরও সতর্ক হতে হবে, যাতে কোনও রকম বৈধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া গ্রাহকদের কোনও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ না দেওয়া হয়।