E-Paper

কাশির ওষুধের কী কার্যকারিতা রয়েছে?

কাশির সিরাপ খাওয়া নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কাশি হলে কী করণীয়?

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৪৫

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে, শিশুদের কাফ সিরাপ দেওয়া নিয়ে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলফ সার্ভিস-এর সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে— দু’বছরের কম বয়সি শিশুদের কাশির সিরাপ দেওয়া যাবে না। পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে শিশুদের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। চিকিৎসকের লিখিত প্রেসক্রিপশন ছাড়া কাশির ওষুধ দেওয়া যাবে না।

গোটা বিষয়টির নেপথ্যে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে পরপর শিশুমৃত্যুর ঘটনা। অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট কাফ সিরাপ খেয়েই দুই রাজ্যে ১২ জন শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। অধিকাংশ শিশুই কিডনি বিকল হয়ে মারা যায়। এর পর ওষুধটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়, সেই রিপোর্টে আশঙ্কাজনক কিছু পাওয়া না গেলেও তদন্ত চলছে। একাধিক রাজ্য ওই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের কাফ সিরাপটি বাতিল করেছে। কিন্তু এটা কি নেহাতই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি কাফ সিরাপের ক্ষতিকারক দিক রয়েছে? কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কাশির ওষুধ দেওয়ার সময়ে এর উপাদানগুলি এবং তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকে চিকিৎসকদের নজর দিতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কাশির ওষুধ খাওয়ার ফলে যে ছোট-বড় সব বয়সিদেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা মানছেন বিশেষজ্ঞরা। এর পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, কাশির ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও।

সমস্যা হল অধিকাংশ ব্যক্তিই প্রেসক্রিপশন ছাড়া দোকান থেকে সরাসরি কাশির ওষুধ কেনেন। কাশি হলেই চিকিৎসকের আগে দেওয়া কোনও কাফ সিরাপ কিনে খেয়ে নেন। ছোটদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। কাশির প্রকারভেদে বদলে যায় ওষুধ ও তার মাত্রা, যেটা অনেকেই গুরুত্ব দেন না।

ছোটদের ক্ষেত্রে

কাফ সিরাপ দিয়ে কাশি চাপার বদলে, মূল সমস্যার দিকে নজর দেওয়ার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ। তাঁর কথায়, “কাশির ওষুধের আদপেই কোনও প্রয়োজন নেই। কাফ সিরাপ খেয়ে কাশি কমে যাচ্ছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দেখতে হবে, কাশি কেন হচ্ছে? জোর দিতে হবে, মূল রোগটি সারানোর জন্য। কাশি উপসর্গ মাত্র।”

অনেক সময়ে বাবা-মায়ের জোরাজুরিতে কাশির ওষুধ দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু যখনই সর্দিকাশি হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেই ওষুধ শিশুকে খাওয়ানোয় আপত্তি রয়েছে চিকিৎসকদের। আবহাওয়া বদল, ঠান্ডা-গরম থেকে ছোটদের হামেশাই সর্দিকাশি হয়। সেখানে সাধারণত অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ দেন চিকিৎসকেরা। এর পাশাপাশি জ্বর থাকলে, সেটি কমানোর জন্যও ওষুধ দেওয়া হয়। “একদম ছোট শিশুদের যত কম ওষুধ দেওয়া যায়, তত ভাল। মরসুমের সর্দিকাশি ছাড়া অ্যাজ়মা, সিওপিডি-র জন্যও কাশি হয়, সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অসুখের নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে। ভাইরাসঘটিত সমস্যা হলে, যত দিন ভাইরাসের কার্যক্ষমতা আছে, তত দিন রোগ থাকবে, তার পর সেটা আপনিই চলে যাবে। আবার শ্বাসনালিতে সিস্টিক ফাইব্রোসিস থাকলে কফ বার করার ওষুধ দিতে হবে। সেখানে কাশির সিরাপের কোনও ভূমিকাই নেই,” বললেন ডা. অপূর্ব ঘোষ।

মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানের শিশুমৃত্যুর ঘটনা, কাফ সিরাপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ছোটদের হার্ট রেট কমে যাওয়া, কিডনির সমস্যা, খিঁচুনি ইত্যাদির সমস্যা হতে পারে বলে জানালেন ডা. ঘোষ।

সতর্ক হতে হবে বড়দেরও

বড়দেরও যথেচ্ছ কাশির সিরাপ খাওয়ার উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করছেন চিকিৎসকেরা। জেনারেল মেডিসিনের চিকিৎসক সুবীরকুমার মণ্ডল ব্যাখ্যা করে বললেন, “কাশি কষ্টকর হতে পারে কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শরীর কফ বার করে দিতে চায়। তাই কাফ সিরাপ খেয়ে কাশি চেপে দেওয়ার প্রবণতা ভুল। কাশি আমাদের ইঙ্গিত দেয় শরীরে কোনও সমস্যা হয়েছে। তাই কেন কাশি হচ্ছে, সেটা দেখতে হবে।”

জানতে হবে কাশির উৎস, গলা থেকে নাকি লাংস থেকে সেটি আসছে। প্রয়োজনে চেস্ট এক্স-রে করিয়ে নেওয়া যায়। কাশির ধরন এবং কারণ বিবেচনা করে চিকিৎসক ঠিক করে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি-অ্যালার্জিক কোনটা দেওয়া প্রয়োজন। “কাফ সিরাপ দিয়ে কাশি চেপে দিলে বয়স্কদের নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে। কারও যদি ব্রঙ্কোস্প্যাজ়ম হয়, তা হলে সিরাপে কোনও কাজই হবে না। তাকে নেবুলাইজ়ার দিতে হবে। সাইনোসাইটিস, অ্যাজ়মা, সিওপিডি... সব ক্ষেত্রেই আলাদা ওষুধ রয়েছে। কাশির ওষুধ এর কোনওটি থেকে নিরাময় দেবে না,” মন্তব্য ডা. মণ্ডলের। যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের অনেক সময়েই কাশি হয়, যেটাকে স্মোকার্স কাফ বলা হয় চলতি কথায়। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্যও কাশি হয়। কোনও ক্ষেত্রেই কাশির ওষুধ সমস্যার সমাধান করবে না। ডা. মণ্ডল জানালেন, প্রোডাক্টিভ কাফ অর্থাৎ গলার ভিতর থেকে থোকা থোকা কফ বেরোলে বুঝতে হবে ভিতরে ইনফেকশন আছে, তখন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হতে পারে।

জেনে রাখুন

  • কাশি হলে স্বস্তি পাওয়ার কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। তার মধ্যে ভেপার নেওয়া, ঈষদুষ্ণ জল খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
  • মধু কাশি থেকে খানিক আরাম দিতে পারে।
  • নাক বন্ধের সমস্যা হলে সালাইন ওয়াটারের নেসাল ড্রপ নেওয়া যায়।
  • ছোট ও বড়দের কাফ সিরাপ আলাদা। বয়ঃসন্ধির আগে পর্যন্ত কাশির সিরাপ না দেওয়াই উচিত। ছোটদের কাশি না কমলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
  • সর্দিকাশি হলে রাস্তাঘাটে বেরোনোর সময়ে মাস্ক পরা উচিত। নয়তো দূষণের জেরে কাশি আরও বেড়ে যাবে।

কাশির সিরাপে কী উপাদান রয়েছে তা দেখতে হবে। কিছু ব্র্যান্ডের ওষুধে ডাইইথিলিন গ্লাইকল (ডিইজি) ও ইথিলিন গ্লাইকল (ইজি) নামে দু’ধরনের রাসায়নিক রয়েছে। এই দুই রাসায়নিক শরীরে ঢুকলে ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকেরা। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ছোট বা বড় কারও-র কাশির ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

medicine

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy