Advertisement
E-Paper

ডিম্বাশয় বা জরায়ু ক্যানসার বিপজ্জনক, লক্ষণ বোঝার ভুলেই ঘটছে বিপদ, কোন পরীক্ষাগুলি প্রাণ বাঁচাবে

এমন কয়েক ধরনের ক্যানসার আছে যা, ভয়াবহ এবং তাদের লক্ষণ খুবই সাধারণ, যেমন— ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এবং এন্ডোমেট্রিয়াল বা জরায়ুর ক্যানসার। এই দুই ক্যানসারের প্রকোপ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। এর মূল কারণই হল রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং ঠিক সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করানো।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৫ ১১:৪৩
Every woman should know the symptoms and diagnosis processes of Endometrial and Ovarian Cancers

ক্যানসার হওয়ার আগেই ধরা পড়বে, কোন কোন টেস্ট জরুরি? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ক্যানসার এখনও প্রায় গোলকধাঁধা। শরীরের এক-এক জায়গার ক্যানসারের চরিত্র এক-এক রকম। ফলে তার চিকিৎসাও আলাদা। আর রোগ ধরার পদ্ধতিও। ক্যানসারই যে হয়েছে, তা বোঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভবই নয়। যেমন ধরা যাক, দিনের পর দিন গ্যাসের ব্যথা হচ্ছে, ঋতুস্রাবের সময়ে ভারী রক্তপাত হয়, তলপেটেও অসহ্য যন্ত্রণা হয়। এমন দেখলে কে আর ভাবেন যে, তা ক্যানসারেরও লক্ষণ হতে পারে। দোকান থেকে ব্যথানাশক ওষুধ কিনে খেয়ে নেন। তাতে সাময়িক আরাম হলেও রোগ সারে না। যখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়, তত দিনে দেখা যায় ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে শরীরের অনেক জায়গায়। এমন কয়েক ধরনের ক্যানসার আছে যা, অতি ভয়াবহ এবং তাদের লক্ষণও খুবই সাধারণ, যেমন— ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার এবং এন্ডোমেট্রিয়াল বা জরায়ুর ক্যানসার। এই দুই ক্যানসারের প্রকোপ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। এর মূল কারণই হল রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং সঠিক সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করানো।

বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার কারণ লুকিয়ে থাকে শরীরেই। যেমন ধরুন, এক ব্যক্তি সারা জীবন ধূমপান করে গেলেন, তাঁর ক্যানসার হল না। অথচ যিনি সিগারেট ছুঁয়েও দেখেননি, তিনি কর্কট রোগের শিকার হলেন। এই রহস্যের বীজ বহুলাংশে বপন করা থাকে তাঁর জিনে ও জীবনযাপনের পদ্ধতিতে। সেই জন্যই আগে থেকে পরীক্ষা করানো জরুরি। যাঁর পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস আছে অর্থাৎ, স্তন ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার, প্রস্টেট বা কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন কেউ তাঁর আরও বেশি করে পরীক্ষা করানো জরুরি। অথচ বেশির ভাগ মহিলাই এই ব্যাপারে সচেতন নন, এমনটাই মনে করছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ও রোবটিক সার্জন সুব্রত দেবনাথ। পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস না থাকলেও বয়স ত্রিশ বা চল্লিশ পেরিয়ে গেলে প্রত্যেক মহিলারই কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন, যার মধ্যে পড়ছে আলট্রাসাউন্ড, আলট্রাসোনোগ্রাফি, ট্রান্সভ্যাজ়াইনাল আলট্রাসোনোগ্রাফি ইত্যাদি। এই সব পরীক্ষাকেই এক ছাতার তলায় নিয়ে এসেছে অ্যাপোলো ক্যানসার সেন্টার। সেখানে নানা রকম স্ক্রিনিং পদ্ধতি থাকবে যা, আগে থেকে ক্যানসারের লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারবে। যিনি বুঝতে পারছেন না কী ধরনের পরীক্ষা করাতে হবে, তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন অভিজ্ঞ স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ও রোবোটিক সার্জনরা। বিনামূল্যে তাঁর আলট্রাসাউন্ডও করা হবে। যদি দেখা যায়, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে টিউমার বা সিস্ট তৈরি হয়েছে বা ক্যানসারের কোনও আশঙ্কা আছে, তা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কেন হয় জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার?

৪৫ থেকে ৫২ বছর পর্যন্ত মেনোপজ়াল এজ ধরা হয়। কোনও মহিলার ৪৫ বছর বয়সের পরে যদি ঋতুস্রাব এক বছর বন্ধ থাকে, তা হলে তাকে রজোনিবৃত্তি বলে ধরে নেওয়া হয়। রজোনিবৃত্তির পরেও যদি ঋতুস্রাবের মতোই রক্তপাত হতে থাকে, তা হলে সেটি স্বাভাবিক নয় বলেই জানালেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ও রোবোটিক সার্জন রূপস্রী দাশগুপ্ত। সে ক্ষেত্রে জরায়ুর ভিতরের স্তর পুরু হয়ে যেতে পারে, সেখানে সিস্ট বা টিউমার তৈরি হতে পারে। রজোনিবৃত্তির পরে অর্থাৎ পোস্ট মেনোপজ়ালে অনেকে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেন। সে ক্ষেত্রে থেরাপি শুরু হওয়ার ছ’মাস পর্যন্ত একটুআধটু রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু মাস ছয়েক পরেও যদি দেখা যায় যে রক্তপাত হচ্ছে, তা হলে সাবধান হতে হবে।

এখানেও ভুলভ্রান্তি হয়। জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ভিতরে যদি কোনও সিস্ট তৈরি হয়, তখন তা ক্যানসার ভেবে বসেন অনেকে। অনেক সময়ে অ্যাট্রোপিক ভ্যাজাইনাইটিস বা অ্যাট্রোপিক এন্ডোমেট্রাইটিস হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জরায়ুর ভিতরের চামড়া পাতলা হয়ে গিয়ে প্রদাহ হয়। তা থেকেও রক্তপাত হতে পারে। তবে এগুলি নিয়ে অতটা চিন্তার কারণ নেই। কোনও গ্রোথ দেখা গেলে পরীক্ষা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

লক্ষণ বোঝা যায় না অনেক সময়েই

ডিম্বাশয় বা ওভারিয়ান ক্যানসার একেবারে নীরবে বাসা বাঁধে শরীরে। আজ পেটে ব্যথা হবে, তো কাল অম্বল, গলা-বুক জ্বালা। পেলভিস অঞ্চলে ব্যথা, জল খুব বেশি না খেয়েও ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়াও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। যদি দেখেন অল্প খেলেই পেট ভরে যাচ্ছে বা বেশি খেতে পারছেন না, এবং এই অবস্থা যদি তিন-চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বেশির ভাগ সময়ে গ্যাসের ব্যথা ভেবে ক্যানসারের লক্ষণ এড়িয়ে যান অনেকেই।

জরায়ুর ক্যানসারের ক্ষেত্রে আবার কোমর, তলদেশ বা শ্রোণিচক্রে এক টানা ব্যথা চলতেই থাকে। রোগী অনুযায়ী ব্যথার মাত্রার তারতম্য দেখা যায়। অধিকাংশ মহিলাই ব্যথাটা অনুভব করেন কোমর ও নিতম্বের মধ্যবর্তী অঞ্চলে। পায়ের উপরের অংশেও ব্যথা হতে পারে। আবার কিছু মহিলার ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমিক ব্যথা হয়। সে ক্ষেত্রেও সাবধান হওয়া জরুরি। আর পরিবারে যদি ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, ওজন অতিরিক্ত হয়, হরমোনের থেরাপির জন্য ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট খান, তা হলে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই ভাল।

কোন কোন পরীক্ষায় আগে থেকেই ধরা পড়বে ক্যানসার?

ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান চল্লিশের পরে করিয়ে নেওয়া জরুরি বলেই মত স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মনিকা মীনার। জরায়ুর মধ্যে কোনও গ্রোথ আছে কি না, তার লাইনিং কতটা মোটা, এগুলো পরীক্ষা করা হয়। রজোনিবৃত্তি হয়নি যাঁদের তাঁদের থেকে রজোনিবৃত্তি পর্ব পেরিয়ে যাওয়া মহিলাদের জরায়ুর ভিতরের চামড়ার পুরুত্ব কম। পরীক্ষায় যদি সেই পুরুত্ব ৫ মিলিমিটারের কম আসে, হলে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু বেশি হলেই মুশকিল। তখন রোগনির্ণয়ের জন্য বাকি পরীক্ষা শুরু করতে হবে।

ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান নিয়ে অনেক মহিলারই ভয় থাকে। যোনির ভিতর দিয়ে একটি প্রোব ঢোকানো হয়। তবে এই পদ্ধতি ব্যথাহীন। এমন ভাবে পরীক্ষাটি করা হয় যাতে সেই মহিলার সঙ্কোচবোধ না হয় এবং যন্ত্রণাও কম হয়। এই পরীক্ষায় জরায়ু, ডিম্বাশয়ের ভিতরের সমস্যাগুলি আগে চিহ্নিত করা যায়।

৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সি মহিলাদের যদি রজোনিবৃত্তির পরেও রক্তপাত হতে থাকে, তা হলে শুধু ট্রান্সভ্যাজ়াইনাল আলট্রাসাউন্ড নয়, আল্ট্রাসোনোগ্রাফির সঙ্গে হিস্টেরোস্কপি ও বায়পসিও করতে হবে। এমনটাই মত রেডিয়োলজিস্ট রেশমি চাঁদের। এ ক্ষেত্রে মহিলাদের অ্যানাস্থেশিয়া দিয়ে (অচেতন করে) যোনি দিয়ে এন্ডোস্কপি করার মতো ছোট ক্যামেরা ঢুকিয়ে সন্দেহজনক জায়গা থেকে বায়পসি স্যাম্পল নিতে হয়। রিপোর্ট তিন রকম আসতে পারে। একটা বিনাইন, অর্থাৎ, যাতে ক্যানসার নেই, সে ক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হাইপারপ্লাশিয়া বা অন্য কারণ দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে ক্যানসারের আশঙ্কা থাকতে পারে। তৃতীয় ক্ষেত্রে ক্যানসার ধরা পড়তে পারে। কী ধরনের ক্যানসার, তার উৎস কী, কোন স্টেজে রয়েছে তা দেখে সেই মতো অস্ত্রোপচার, রেডিয়োথেরাপি বা কেমোথেরাপি করা হয়।

এ ক্ষেত্রেও কিছু পদ্ধতি মেনে চলেন চিকিৎসকেরা। অনেকেই মনে করেন যে কমবয়সে জরায়ুর ভিতরে কোনও টিউমার বা সিস্ট হলে বায়োপসি করা ঠিক নয়। তাতে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে। তারও একটি সমাধা আছে বলে জানান চিকিৎসক রূপশ্রী। সে ক্ষেত্রে জরায়ুতে ছিদ্র করা হয় না। রোগীকে অজ্ঞান করে গোটা জরায়ুই বাইরে বার করে এনে সংরক্ষণ করে তাতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সেরে নেন চিকিৎসকেরা। এই পদ্ধতিতে ঝুঁকি অনেক কম ও ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার ভয় থাকে না। তার পরে সেই জরায়ু আবার শরীরে বসিয়ে দেওয়া হয়। আর যদি আলট্রাসাউন্ড করে দেখা যায়, যে ক্যানসার সত্যিই ছড়িয়ে পড়েছে অর্থাৎ, রোগী স্টেজ ২ বা স্টেজ ৩-এ আছেন, তখন জরায়ু থেকে কোষ তুলে বায়োপ্সি করে দেখা হয়। ক্যানসার হলে তখন ৩ থেকে ৪টি পর্বে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। সঙ্গে অস্ত্রোপচারও চলে।

একটা বয়সের পর থেকে তাই মহিলাদের রুটিন চেকআপ করা জরুরি। যদি ক্যানসার থেকে বাঁচতে হয়, তা হলে পরীক্ষা করাতেই হবে। রোগ এক বার শরীরে চেপে বসলে, তার নিরাময়ের পথটা কঠিন। ক্যানসার সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায় না অনেক সময়েই, তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। তাই যদি ক্যানসারের আশঙ্কাকেই নির্মূল করে দেওয়া যায়, তা হলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

Cancer Risk Cancer Diagnosis cancer awareness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy