এন্ডোমেট্রিয়োসিস কেন মহিলাদের কাছে বড় চিন্তার অন্যতম কারণ? ছবি: সংগৃহীত।
ঋতুস্রাবের সময়ে অনেক মহিলাই তীব্র যন্ত্রণায় ভোগেন। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে সেই ব্যথা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার দেখা যায়, ঋতুস্রাবের পাঁচ থেকে সাত দিন আগে থেকেই যন্ত্রণা শুরু হয়। এমন সমস্যা কি আপনারও হয়? এই ধরনের সমস্যা কিন্তু এন্ডোমেট্রিয়োসিসের লক্ষণ হতে পারে। এই রোগ থাকলে সন্তানধারণে সমস্যা হয়। তাই এই রোগের লক্ষণ দেখলে বাড়তি সতর্কতা নিতেই হবে।
জরায়ুর ভিতরের একটি স্তর হল এন্ডোমেট্রিয়াম। প্রতি মাসে জরায়ুর এই এন্ডোমেট্রিয়াম অংশের স্তর খসেই ঋতুস্রাব হয়। সেই রক্ত সন্তান প্রসবের পথ দিয়ে জরায়ু থেকে বেরিয়ে শরীরের বাইরে চলে আসে। কিন্তু এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর বাইরে, তলপেটের যে কোনও জায়গায় বা শরীরের অন্য কোথাও চলে এলে, তাকে বলে এন্ডোমেট্রিয়োসিস। শরীরের অন্য কোথাও এন্ডোমেট্রিয়াম চলে গেলে, সেখানে ওই স্তর খসে যে রক্তপাত হয়, তা বেরোতে না পেরে সেই স্থানেই জমাট বাঁধতে শুরু করে। আশপাশের কোষগুলিতে চাপ তৈরি হয়। এর থেকে সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ডিম্বাশয়, তলপেটের পিছনে, মূত্রথলি, বর্জ্য নির্গমনের পথ, সন্তান নির্গমনের পথের গোড়ায় এন্ডোমেট্রিয়াম বেশি দেখা যায়। এই রোগকেই বলা হয় হয় এন্ডোমেট্রিয়োসিস।
অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসও এন্ডোমেট্রিয়োসিসের অন্যতম কারণ। প্রধানত ‘জাঙ্ক ফুড’ বা বাইরের ভাজাভুজি, তেল-মশলাদার খাবার খাওয়ার ফলে অন্ত্রের ভাল ব্যাক্টেরিয়া নষ্ট হয়ে যায় ও খারাপ ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হয়। খারাপ ব্যাক্টেরিয়া কোষে কোষে সংক্রমণ ঘটায় এবং কোষগুলি এন্ডোমেট্রিয়োসিস কোষে পরিবর্তিত হয়ে যায়। চিকিৎসকেদের মতে, মানসিক চাপ ও তার ফলে খাওয়াদাওয়ার অনিয়মেও এই রোগের বাড়বাড়ন্ত হয়।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে আগে থেকেই সতর্ক হবেন?
১) ঋতুস্রাব চলাকালীন অনেকেরই তীব্র পেটের যন্ত্রণায় ভোগেন। কিন্তু এন্ডোমেট্রিয়োসিসের সমস্যা থাকলে এই ব্যথা বহু গুণ বেড়ে যায়। এমনকি ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগে ও শেষের পরে বেশ কিছু দিন পর্যন্ত এই ব্যথা থাকে। ব্যথা হয় তলপেট এবং কোমরেও।
২) এন্ডোমেট্রিয়োসিসের ফলে যৌন মিলনের সময়ে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা মিলনের পরেও বেশ কিছু দিন থাকে। এ রকম সমস্যা হলে সতর্ক হন।
৩) এন্ডোমেট্রিয়োসিসের কারণে মলত্যাগ করার সময়ে এবং প্রস্রাব করতে গেলেও তলপেটে যন্ত্রণা হতে পারে। সাধারণত ঋতুস্রাব চলার সময়ে এই সমস্যাগুলি আরও বেড়ে যায়।
৪) এন্ডোমেট্রিয়োসিসের সমস্যা থাকলে ঋতুস্রাবের সময়ে অতিরিক্ত রক্তপাত দেখা যেতে পারে। দু’ মাসের ঋতুস্রাবের নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ‘ইন্টারমেন্সট্রুয়াল ব্লিডিং’-ও হতে পারে।
৫) সব সময়ে না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিয়োসিসের সমস্যা থাকলে রোগীর সন্তানধারণে সমস্যা তৈরি হয়। একাধিক বার সন্তানধারণের পরেও সমাধান না হলে চিকিৎসকের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলুন।
এন্ডোমেট্রিয়োসিসের সমস্যা থাকলে অনেক সময় ক্লান্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাঘোরার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে, এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে যোগাযোগ করতে হবে চিকিৎসকের সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy