মগজখেকো অ্যামিবার কথা শোনা যায় মাঝেমধ্যেই। দূষিত জল থেকে নাকে-মুখে ঢুকে গিয়ে মস্তিষ্কের কোষ ছিন্নভিন্ন করে দেয়। ভারতেও অ্যামিবার দাপট বেড়েছিল গত বছরে। কিন্তু মাংসখেকো ব্যাক্টেরিয়া?
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। এমন এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া, যা মানবশরীরে ঢুকে দেহকোষ খেয়ে ফেলছে। এই মাংসখেকো ব্যাক্টেরিয়ার উৎপাতে নাজেহাল ফ্লরিডাবাসী। ৪ জনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছে। আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) জানিয়েছে, ওই জাঁদরেল ব্যাক্টেরিয়ার নাম ভিব্রিয়ো ভালনিফিকাস। যাঁর শরীরে হানা দিচ্ছে, তাঁর মাংসপেশি, কোষ, চামড়া বেমালুম খেয়ে ফেলছে।
কলেরার জাতভাই ভিব্রিয়ো ভালনিফিকাস
এই প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ভিব্রিয়ো কলেরি বা কলেরার জীবাণুর। তবে এরা আরও বেশি মারাত্মক। সামুদ্রিক প্রাণীর শরীরে জন্মায়। শামুক, ঝিনুক থেকে এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়া বেশি ছড়ায়। উষ্ণ সামুদ্রিক পরিবেশ, বিশেষ করে যেখানে মিষ্টি জল ও নোনা জল মিশে থাকে (যেমন মোহনা বা উপকূলীয় অঞ্চল), সেখানে এরা দ্রুত বংশবিস্তার করে। ফ্লরিডার সৈকত সংলগ্ন এলাকাগুলিতেই এদের দাপট বেশি।
আরও পড়ুন:
ভিব্রিয়ো ভালনিফিকাস থেকে ভিব্রিয়োসিস নামক রোগ হয়। ফ্লরিডায় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। আরও কত জনের শরীরে এই ব্যাক্টেরিয়া ঢুকেছে, তা জানা নেই। সতর্ক থাকতে তাই কাঁচা বা আধসেদ্ধ সামুদ্রিক খাবার খেতে নিষেধ করছে সিডিসি। শামুক বা ঝিনুক ভাল করে রান্না না করে খেলেও এই ব্যাক্টেরিয়া শরীরে ঢুকতে পারে। তা ছাড়া শরীরে কোনও ক্ষত থাকলে আর সেখানে সমুদ্রের লবণাক্ত জল লাগলে, তার থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, বা সমুদ্রের ধারে হাঁটার সময়ও এটি ঘটতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল হলে মাংসখেকো ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ দ্রুত ঘটতে পারে। লিভারের ক্রনিক অসুখ আছে যাঁদের বা ডায়াবিটিসে দীর্ঘ সময় ধরে ভুগছেন, তাঁদের বেশি সাবধান হতে হবে।
ফ্লোরিডায় প্রাণঘাতী ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (হু)। এই ব্যাক্টেরিয়াকে প্রতিরোধ করার উপায় খুঁজে বের করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। ব্যাক্টেরিয়ার হানায় সকলের শরীরে একই রকম রোগের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে না। এমন অনেক রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে তাঁদের কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছে। এমনকি হার্টের সমস্যা হতেও দেখা গিয়েছে। তা ছাড়া সেপসিস বা রক্তের সংক্রমণ ঘটতেও দেখা যাচ্ছে।