‘ভুয়ো’ ওআরএস-এর বিক্রি রুখতে ইতিমধ্যেই কড়া পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা ও গুনমান দফতর (এফএসএসএআই)। নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) অনুমোদন ছাড়া এখন থেকে কোনও খাদ্যপণ্যের নামকরণে ‘ওআরএস’ শব্দটি রাখা যাবে না। লেবেলে ‘ওআরএস’ লেখা দেখে বিভ্রান্ত হয়ে অনেকেই নানা রকম মিষ্টি পানীয়, ডায়েট সোডা কিনে খেয়ে ফেলেন যা আসলে অস্বাস্থ্যকর। কোন কোন পানীয় ‘ওআরএস’ ভেবে ভুল হয় বেশির ভাগ সময়েই?
ওআরএস-এর পুরো কথা ‘ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন’। শরীরে প্রয়োজনীয় জল ও খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে রোগীকে ওআরএস খাওয়ানোর নিদান দেন চিকিৎসকরা। হু অনুমোদিত ফর্মুলাতেই ওআরএস তৈরি হয়। আন্ত্রিকের সমস্যা, জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন ও বমি হচ্ছে এমন রোগীদেরই ওআরএস খাওয়ানো হয়। ডায়াবিটিস, কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের সমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে ওআরএস খাওয়ার সময়। ওআরএসে থাকে শর্করা ও সোডিয়াম, কাজেই অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, অতিরিক্ত সোডিয়ামে রক্তচাপের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই ওআরএস খাওয়ার নিয়ম আছে। যে কাউকে ওআরএস দেওয়া যায় না। দোকানে এমন কিছু মিষ্টি পানীয়, কার্বনেটেড পানীয় বা প্যাকেটজাত ফলের রস বিক্রি হচ্ছে, যেগুলি গায়েও ‘ওআরএস’ লেখা থাকে। সেগুলি আসলে হু দ্বারা অনুমোদিত নয় বা তার ফর্মুলাও এক নয়। সে ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতেই হবে।
ওআরএস ভেবে ভুল করে যা যা কিনছেন?
স্পোর্টস ড্রিঙ্ক
এগুলিতে ইলেকট্রোলাইট (যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম) থাকে, তাই অনেকেই ওআরএস ভেবে ভুল করেন। তবে এগুলিতে শর্করার মাত্রা খুব বেশি থাকে। স্পোর্টস ড্রিঙ্ক সকলের জন্য নয়। এগুলি খেতে শুরু করলে ডায়েরিয়া বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা আরো বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
প্যাকেটজাত ফলের রস
অনেকেই ভাবেন ফলের রস শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাবে ও জলশূন্যতা কমাবে। এমন কিছু ব্র্যান্ডের ফলের রস আছে যেগুলির প্যাকেটের উপর ‘ওআরএস’ লেখা থাকে। কিন্তু আসলে সেগুলি তা নয়। প্যাকেটজাত ফলের রসে শর্করার মাত্রা যেমন বেশি থাকে, তেমনই দীর্ঘ দিন প্যাকেটে সংরক্ষণের জন্য এমন কিছু প্রিজ়ারভেটিভ মেশানো থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
ডায়েট সোডা
‘জ়িরো সুগার’ লেবেল দেখে ডায়েট সোডা কিনে খেয়ে ফেলেন? এগুলি আরও বেশি অস্বাস্থ্যকর। গবেষণা বলছে, কেউ যদি দিনে একটি করেও ডায়েট পানীয় খান, তা হলে তাঁর টাইপ টু ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৩৮ শতাংশ বেড়ে যাবে। শুধু তা-ই নয়, এর থেকে ক্ষতির আশঙ্কা চিনি দেওয়া পানীয়ের চেয়েও অনেক বেশি।
বোতলবন্দি নুন-চিনির জল
বোতলবন্দি নুন-চিনির জল বা ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়কে ‘ওআরএস’ ভেবে ভুল করবেন না। অনেকে ভাবেন, কেনার চেয়ে বাড়িতেই ওআরএস বানিয়ে নেবেন। সেখানেও ভুল হয়। বাড়িতে তৈরি নুন বা চিনির জল, অথবা চিনি দিয়ে সিরাপ বানিয়ে খেলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। দেখা গিয়েছে, নুন-চিনির জলের স্বাদ বাড়াতে অনেকেই বেশি পরিমাণে চিনি ব্যবহার করেছেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। বেশি নুন বা অধিক চিনি শরীরে গিয়ে বিপত্তি আরও বাড়িয়েছে। তাই একমাত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ‘ওআরএস’-ই খাওয়া উচিত।