বিন মেলে বছরভরই। তবে শীতের বাজারে কড়াইশুঁটি থেকে বিন, সিম— রকমারি সব্জির বৈচিত্র থাকে। সবুজ শাকসব্জি খাওয়া সব সময়েই ভাল বলেন চিকিৎসকেরা। তবে পুষ্টিগুণের দৌড়ে নামলে কড়াইশুঁটি না বিন— কে, কাকে টেক্কা দিতে পারে?
ওজন কমানোই যদি লক্ষ্য হয়, তা হলে পাতে বিন বেশি রাখলেই ভাল। কারণ, এক কাপ কড়াইশুঁটিতে যেখানে ১১৭ কিলোক্যালোরি শক্তি মেলে, সেখানে বিনে সেই পরিমাণ মাত্র ৩১। ক্যালোরির হিসাবনিকাশ যাঁরা করেন, তাঁদের পক্ষে বিন বেছে নেওয়া সুবিধাজনক। আবার সমপরিমাণ বিনে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রাও কড়াইশুঁটির চেয়ে অনেকটাই কম। ফলে এটি ডায়াবেটিকদের জন্যও ভাল।
আরও পড়ুন:
কিন্তু পুষ্টিগুণের বিচারে বিনকে টেক্কা দিতে পারে কড়াইশুঁটি। এক কাপ কড়াইশুঁটিতে প্রোটিনের পরিমাণ যেখানে ৭.৮৬ গ্রাম, সেখানে বিনে প্রোটিন মেলে মাত্র ১.৮৩গ্রাম। ফাইবারের মাত্রাও কড়াইশুঁটিতে বেশি। বিনে ২.৭ গ্রাম ফাইবার মেলে, কড়াইশুঁটিতে পাওয়া যায় ৮.২৬ গ্রাম। ভিটামিন সি-এর মাত্রাও বিনের চেয়ে কড়াইশুঁটিতে খানিক বেশি। আবার বিনে ভিটামিন কে-র মাত্রা কড়াইশুঁটির চেয়ে বেশি। বিনে ভিটামিন কে মেলে ৪৩ মাইক্রোগ্রাম, কড়াইশুঁটিতে ৩৬ মাইক্রোগ্রাম। ফোলেট সমপরিমাণ বিনের চেয়ে কড়াইশুঁটিতে অনেকটাই বেশি থাকে।
সুতরাং তুল্যমূল্য বিচারে প্রোটিন, ফাইবারে এগিয়ে কড়াইশুঁটি। যদিও বিনের পুষ্টিগুণ কিছু কম নয়।
বিনের উপকারিতা
বিনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে মেলে, যা অস্টিয়োপোরেসিস বা হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমায়। ফলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল পাখার জন্য বিন উপকারী।
হার্টের জন্য ভাল
সবুজ বিনে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফোলেট, যা হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং রক্তচাপ বশে রাখতে সাহায্য করে।
চোখের জন্য ভাল
ভিটামিন এ, কে এবং ফোলেট থাকার জন্য বিন চোখের জন্যও ভাল। দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে।
ওজন বশে রাখে
ক্যালোরি কম, কিন্তু ফাইবার, খনিজে সমৃদ্ধ। বিন তাই পুষ্টিকর খাবারের তালিকাতেই শুধু পড়ে না, ওজন বশে রাখতেও সাহায্য করে।
ক়ড়াইশুঁটির উপকারিতা
হজমে সহায়ক
কড়াইশুঁটিতে রয়েছে সহজপাচ্য ফাইবার। হজম বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে এই সব্জি খাওয়াই যায়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে কড়াইশুঁটি।
প্রদাহ কমায়
কড়াইশুঁটির মধ্যে রয়েছে পলিফেনল। এই উপাদানটি হল অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। কড়াইশুঁটিতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ক্যারোটিনয়েড প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের সঙ্গে লড়াইয়ে সাহায্য করে।
হার্ট ভাল রাখে
ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের পাশাপাশি কড়াইশুঁটিতে রয়েছে পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ। যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতেও এই খনিজটির ভূমিকা রয়েছে।
ডায়াবেটিকেরও খেতে পারেন
কড়াইশুঁটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তা ছাড়া কড়াইশুঁটিতে প্রোটিন এবং ফাইবার থাকায় তা রক্তে বাড়তি শর্করা শোষণেও বাধা দেয়। তা ছাড়া, ভিটামিন সি থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধকও।
কাদের কোন সব্জি বুঝেশুনে খেতে হবে?
· বিনে রয়েছে ভিটামিন কে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ফলে, যাঁরা রক্ত তরল রাখার ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদের এই সব্জি বেশি খাওয়া ভাল নয়।
· কারও বাদাম বা কড়াইশুঁটি খেলে হজমের সমস্যা হয়, অ্যালার্জি থাকে। তাঁরা কড়াইশুঁটি এড়িয়ে যাবেন।
· গেঁটে বাত, কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা থাকলেও মুঠো মুঠো ক়ড়াইশুঁটি খাওয়া ঠিক নয়।
বিন, কড়াইশুঁটি দুই সব্জিই খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদেরা। গুণ কোনওটিরই তেমন কম নয়। তবে পুষ্টিবিদেরা বলেন, যে কোনও খাবারই পরিমিত খাওয়া উচিত। উপকারী হলেও, কোনও একটি খাবারে বিশেষ জোর দেওয়া বা বেশি খাওয়া ঠিক নয়।