সমাজমাধ্যম জুড়ে চর্চিত স্যালাডের গুণাগুণ।স্যালাড বলতে ভাত বা রুটির সঙ্গে শসা, পেঁয়াজ, টম্যাটো খাওয়ার যে ধারণা এতদিন প্রচলিত ছিল, সে সব অনেকটা বদলে গিয়েছে। দেশ-বিদেশে যেমন কায়দায় স্যালাড খাওয়া হয়, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, রকমারি সস্ দিয়ে— সেভাবেই স্যালাড ডায়েট জুড়ছেন তরুণ প্রজন্মের অনেকে। দুপুর কিংবা রাতের ভোজ সম্পূর্ণ হচ্ছে এক বাটি স্যালাড খেয়েই।
প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ, কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট— সঠিক উপকরণে স্যালাড বানালে একটি খাবারেই মেলে সমস্ত উপকরণ। ফলে স্বাস্থ্যের পক্ষে তা যে ভাল নিঃসন্দেহেই বলা যায়। কিন্তু অন্যান্য খাবার বাদ দিয়ে দিনরাত স্যালাড খাওয়ার প্রবণতা কি আদৌ ভাল?
আরও পড়ুন:
পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, স্যালাডের গুণাগুণ নির্ভর করে কোন কোন উপাদানে তা তৈরি হচ্ছে তার উপর। তা ছাড়া ভাল মানেই যে পেট ভরে খেলে ভাল হবে এমনটা নয়। বরং যে কোনও স্বাস্থ্যকর খাবারেরই মাত্রা থাকা উচিত। পরিমিত খাদ্যগ্রহণই সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। বরং বেশি স্যালাড খেলে উল্টে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
১। স্যালাডে প্রচুর শাকসব্জির ব্যবহার হয়। ফল হোক বা সব্জি— এতে ফাইবার থাকে। খাবার হজম করাতে এবং পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ফাইবার জরুরি। তা ছাড়া রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়তে দেয় না ফাইবার। তবে বেশি কাঁচা স্যালাড খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। কাঁচা সব্জি মজিয়ে গ্যাস উৎপন্ন করে অন্ত্রে থাকা ব্যাক্টেরিয়া। ফলে পেটে গ্যাস হতে পারে এতে। তা ছাড়া সকলের হজম ক্ষমতা এক নয়। সব্জি বেশি খেলে কারও কারও হজমেও সমস্যা হতে পারে।বরং হালকা ভাপিয়ে নেওয়া বা সেদ্ধ করা সব্জি হজম করতে সুবিধা হতে পারে।
২। কাঁচা সব্জি দিয়ে তৈরি স্যালাড পুষ্টিগুণ শোষণেও বাধা তৈরি করতে পারে। বেশি মাত্রায় কাঁচা সব্জি খেলে আয়রন, জ়িঙ্ক, ক্যালশিয়ামের মতো ভিটামিন-খনিজের শোষণ কম হতে পারে। এতে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হবে।বদলে স্যালাডে সমস্ত কাঁচা সব্জির বদলে কিছুটা ভাপানো সব্জি যোগ করা যেতে পারে।
৩। গরমের দিনে বিশেষত অনেকেই ঠান্ডা স্যালাড খান। এই ধরনের স্যালাড বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়। দরকার মতো খাওয়া যায়, আবার টিফিনে নিতেও সুবিধা হয়। মাঝেমধ্যে এই ধরনের স্যালাড খেলে অসুবিধা নেই। কিন্তু নিয়মিত ঠান্ডা স্যালাড বিপাকহারে প্রভাব ফেলতে পারে। বিপাকক্রিয়া শ্লথ করে দিতে পারে। পুরোপুরি ঠান্ডা স্যালাড খাওয়ার বদলে এর সঙ্গে গ্রিল করা মুরগির মাংস, পনির, সেদ্ধ কাবলি ছোলা মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
৪। স্যালাড মানেই কম ক্যালোরি নয়। অনেকেই ওজন কমাতে স্যালাড খান, কারণ এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। শাক বা সেদ্ধ করা মাছ, ডিমের ক্যালোরিও খুব বেশি হয় না। তবে স্যালাডে স্বাদ আনতে মেয়োনিজ়, চিজ়, অলিভ অয়েল, বাদাম, বীজ যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করলে ক্যালোরির মাত্রাও বাড়তে পারে। তা ছাড়া ফ্যাট স্বাস্থ্যকর হলেও, বাদাম-বীজ বেশি খেলে হজম করতে সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। লিভারের সমস্যায়, বদহজমের প্রবণতা থাকলেও এগুলি এড়িয়ে যাওয়া ভাল।
৫। স্যালাডের উপকরণ যদি ঠিক না থাকে তা হলে পু্ষ্টির অভাব হবে। ভাত-মাছের সঙ্গে স্যালাড খাওয়া একরকম। কিন্তু নিজের মতো স্যালাড বানাতে গেলে তাতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট দুই-ই সঠিক মাত্রায় রাখা দরকার। মাছ, ডিম, মাংস, পনির, টোফু প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে। ভাত-ডালের মতো খাবার বাদ দিয়ে শুধুই স্যালাড খেলে প্রোটিনও গুরুত্ব দিয়ে জুড়তে হবে।
স্যালাড খাওয়ার সঠিক উপায় কী?
পুরোপুরি কাঁচা সব্জি না রেখে সেদ্ধ সব্জি, হালকা সাঁতলে নেওয়া বীজ, সেদ্ধ কাবলি ছোলা, মুগ, মুসুরও এতে জোড়া দরকার। খেয়াল রাখতে হবে পুষ্টির ভারসাম্য যেন বজায় থাকে। মেয়োনিজ়, চিজ়ে প্রচুর ক্যালোরি থাকে। প্রতি দিন একই রকম স্যালাড না খেয়ে মাঝেমধ্যে টক দই দিয়ে, কখনও অলিভ অয়েল মিশিয়ে স্যালাড খেতে পারেন। মেয়োনিজ়, চিজ় মাঝেমধ্যে জোড়া যায়, রোজ নয়।আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিমিতি বোধা। স্যালাড খাওয়াই যায়, তবে দু’বেলা প্রতিদিন শুধু স্যালাড না খেয়ে এক বেলা এটি খেতে পারেন।