ফ্যাটি লিভার নিয়ে আতঙ্ক ঘরে ঘরে। খাদ্যাভ্যাস যে ভাবে বদলাচ্ছে, জাঙ্ক ফুডের প্রতি আসক্তি বাড়ছে ছোটদের, তাতে কম বয়স থেকেই মেদ জমছে লিভারে। ফ্যাটি লিভার এক দিনে হয় না। দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে একটু একটু করে লিভারে ক্ষত হতে থাকে। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বড় অসুখের প্রথম ধাপ। সূত্রপাত এর থেকেই হয় যা পরবর্তীতে গিয়ে লিভারের জটিল রোগ সিরোসিসের কারণ হয়ে ওঠে। লিভারে মেদ যত সহজে জমে, তার অপসারণ অত সহজ নয়। এর জন্য নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া, শরীরচর্চার প্রয়োজন হয়। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা বলছে, বিশেষ এক রকম খাদ্যাভ্যাসে ফ্যাটি লিভার নির্মূল হতে পারে। একে বলে ‘ননঅ্যালকোহলিক স্টিয়েটোহেপাটাইটিস’ বা ‘ন্যাশ’ ডায়েট।
ন্যাশ হল ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়। এটি হলে লিভারে ভয়ানক প্রদাহ শুরু হয়, লিভারের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। বিপাকক্রিয়ার হার অনেকখানি কমে যায়। লিভারের এই অবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আরও একটি নামে ডাকা হয়, তা হল ‘মেটাবলিক অ্যাসোসিয়েটেড স্টিয়েটোহেপাটাইটিস’ (ম্যাশ)। প্রথম দিকে এই রোগ ধরা না পড়লে লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, এমনকি লিভার বিকল হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকি থাকে। একাধিক কারণ রয়েছে, যেগুলি নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তোলে। তার মধ্যে অন্যতম ডায়াবিটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল। একসঙ্গে এগুলিকে মেটাবলিক সিনড্রোমও বলা হয়। পরিসংখ্যান বলছে, মেটাবলিক সিনড্রোম যাঁদের রয়েছে, তাঁদের মধ্যে এই রোগ ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি দেখা যায়। সে কারণেই ডায়েটের দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন:
কতটা উপকারী ‘ন্যাশ’ ডায়েট?
‘আমেরিকান লিভার ফাউন্ডেশন’ ও দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘ন্যাশ’ ডায়েট হল মূলত ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস, যেখানে ভাজাভুজি, তেলমশলা দেওয়া খাবারের কোনও জায়গা নেই। দানাশস্য, টাটকা ফল ও সব্জি, নানা ধরনের বাদাম ও বীজ, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, বিভিন্ন রকম মাছ খাওয়ার চল রয়েছে। এই ডায়েটে মাংস কমই খাওয়া হয়, বিশেষ করে রেড মিট একেবারেই চলে না। প্রক্রিয়াজাত খাবার ছুঁয়েও দেখা হয় না। রান্না করতে হয় অলিভ অয়েলে। তবে সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে অলিভ অয়েলে রান্না করা সহজ নয়, সে ক্ষেত্রে অলিভ অয়েলের বিকল্পে সামান্য ঘি বা রাইস ব্র্যান অয়েল চলতে পারে।
দানাশস্যের মধ্যে সহজলভ্য যা যা আছে, তার মধ্যে ডালিয়া, কিনোয়া, ওট্স খাওয়া যেতে পারে। ময়দার বদলে রাগি বা মিলেট, জোয়ার, বাজরার রুটি খেতে পারেন। মশলার মধ্যে জিরে, জোয়ান, জায়ফল ও জয়িত্রী উপকারী। এগুলি প্রদাহনাশক। ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় মরসুমি সব্জি ও ফল বেশি খাওয়া হয়। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের মধ্যে বাদাম ও নানা ধরনের বীজ, যেমন সূর্যমুখী, তিসির বীজ ভাল। তা ছাড়া বিভিন্ন রকম ডাল, ছোলা, রাজমা রাখা যেতে পারে রোজের খাদ্য তালিকায়। এই ধরনের ডায়েটে চর্বি জাতীয় খাবার, চিনি এবং কোনও রকম প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া চলবে না। খাবারে তেলের পরিমাণ হবে খুব সামান্য।