ব্যস্ত দিনের শেষে বা ঘুম থেকে উঠে সকালে গায়ে জল ঢাললে শরীর-মন দুই-ই সতেজ হয়ে যায়। ভারতের মতো দেশে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, সব ঋতুতেই প্রতি দিন স্নানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু চিরকালীন সেই দ্বন্দ্ব নিয়ে আজও ধন্দে থাকেন অনেকে। গরম না কি ঠান্ডা, কেমন জলে স্নান করা উচিত? দু’ধরনের স্নানেরই ভিন্ন ভিন্ন গুণ ও সমস্যা রয়েছে। সব ঋতুর ক্ষেত্রেই সেগুলি কী ভাবে কাজ করে, জেনে নিলে সুবিধা হতে পারে।
গরম জলে স্নান
সন্ধ্যায়, ঘুমের আগে, বা পেশি শক্ত হয়ে থাকলে বা ব্যথা করলে গরম জলে স্নান করলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত গরম জল এড়িয়ে চলাই ভাল।
উপকারিতা
রক্ত সঞ্চালনে উন্নতি- গরম জলে রক্তনালী প্রসারিত হয়, ফলে রক্ত চলাচল বাড়ে। এতে শরীর হালকা লাগে, চাপও কিছুটা কমে।
পেশি শিথিল হওয়া- শরীরের ব্যথাবেদনায় আরাম দেয়। ক্লান্ত বা টান ধরা পেশিতে গরম জলের উষ্ণতা স্বস্তি আনে।
সর্দি-সাইনাসে সাময়িক স্বস্তি- উষ্ণ ভাপ শ্বাসনালি খুলে দিতে পারে। ফলে নাক বন্ধ হওয়ার অস্বস্তি কমে। বুকে কফ জমে থাকলে তা-ও গলে যেতে পারে।
গরম জলে স্নানের ঝুঁকি
গরম জল শরীরকে শিথিল করলেও এরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। অতিরিক্ত গরম জলে স্নান করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে গিয়ে শুষ্কতা, চুলকানি বা অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় রক্তচাপ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে ডায়াবিটিস বা নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুব গরম জল ঝুঁকির হতে পারে। তাই ঈষদুষ্ণ জলেই স্নান করা উচিত, ফুটন্ত বা অতিরিক্ত গরম জলে নয়।
নিজের শরীরের অবস্থা, ঋতু ও সময় দেখে ঠিক করুন কোন জলে স্নান করবেন। ছবি: সংগৃহীত।
ঠান্ডা জলে স্নান
সকালে দিনের শুরুতে, ক্লান্তি কাটাতে, মন-মেজাজ টানটান করতে শীতল জলে গা ধুয়ে নিলে আরাম মেলে। তবে স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে ঠান্ডা বাড়ানোই নিরাপদ।
উপকারিতা
তৎক্ষণাৎ শরীরে বদল- ক্লান্ত শরীরে ঠান্ডা জল ঢাললে সঙ্গে সঙ্গে সতেজ ও চাঙ্গা বোধ হয়।
স্নায়ুতন্ত্রকে জাগিয়ে তোলে- শরীরে ঘুমের ঘোর থাকলে ঠান্ডা জলে স্নান করা উচিত। তাতে সারা দিন ঝিমুনির সমস্যা খানিক হলেও কমে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- নেদারল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, যাঁরা সকাল সকাল ঠান্ডা জলে স্নান করেন, তাঁরা রোগে ভোগেন কম। যাঁরা ঠান্ডা জলে স্নান শুরু করেছেন, তাঁরা তাঁদের তুলনায় ২৯ শতাংশ কম ছুটি নেন কর্মস্থল থেকে, যাঁরা গরম জলেই স্নান করেন।
মেজাজে উন্নতি- নিয়মিত ঠান্ডা জলে স্নান মনের অবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উদ্বেগ ও মনখারাপের সমস্যা কমতে পারে।
বিপাকক্রিয়ায় উন্নতি- ঠান্ডা জলে স্নান করার সময়ে শরীর গরম থাকার জন্য অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করে। ফলে অল্প পরিমাণে হলেও ক্যালোরি পুড়তে পারে এবং বিপাকক্রিয়ার উন্নতি হতে পারে।
আরও পড়ুন:
ঠান্ডা জলে স্নানের ঝুঁকি
যদিও ঠান্ডা জল শরীরকে দ্রুত সতেজ করে, তবু এর কিছু ঝুঁকি আছে। হঠাৎ বরফশীতল জল গায়ে ঢাললে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। রক্তচাপও হঠাৎ ওঠানামা করতে পারে। যাঁদের হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা হাঁপানির সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে। আবার অতিরিক্ত ঠান্ডা জলে দীর্ঘ ক্ষণ স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রা নেমে গিয়ে সমস্যা হতে পারে। তাই শরীরের সহনশীলতা অনুযায়ী ঠান্ডা জল ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ঠান্ডা–গরম জল মিশিয়ে স্নান
অনেকে পালা করে গরম ও ঠান্ডা জল ব্যবহার করেন। একটানা গরম জল নয়, একটানা ঠান্ডা জল নয়।
উপকারিতা
রক্ত সঞ্চালনে উন্নতি- এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। গরম জল রক্তনালি প্রসারিত করে, ঠান্ডা জল আবার সংকুচিত করে। এই ওঠানামা রক্ত চলাচলকে সক্রিয় রাখে।
পেশি মজবুত করে- পেশির ক্লান্তি কমায়, বিশেষ করে ব্যায়ামের পর।
মানসিক প্রশান্তি- অনেক সময় উদ্বেগ ও অবসাদও কমে যেতে পারে সাময়িক ভাবে।
দু’ধরনের স্নানের ভিন্ন ভিন্ন গুণ। নিজের শরীরের অবস্থা, ঋতু ও সময় দেখে ঠিক করুন কোন জলে স্নান করবেন। আরাম চাইলে গরম জলে স্নান, ঝটপট শরীরকে চাঙ্গা করে তুলতে চাইলে ঠান্ডা জলে স্নান। প্রয়োজনমতো পাল্টে নেওয়াই ভাল।