দেখতে যতই লোভনীয় হোক, রঙিন খাবার শিশুদের জন্য মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। ছোটদের জন্য এখন নানা রং রঙের ও আকারের ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল বেরিয়ে গিয়েছে। সে সবের গায়ে ‘পুষ্টিকর’ বলে লেবেলও সাঁটা থাকে। স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ ভেবে লাল-নীল নানা রঙের যে ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল শিশু খাচ্ছে, তা থেকে তার বুদ্ধির বিকাশ থমকে যেতে পারে। সমস্যাক্রান্ত হতে পারে মানসিক স্বাস্থ্যও। রঙিন ক্যান্ডি থেকে মুখরোচক স্ন্যাক্স— যে কোনও রঙিন খাবার, যাতে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার হচ্ছে, তা শিশুর আচার-আচরণেও বদল আনতে পারে।
আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র গবেষকেরা জানিয়েছেন, খাবারে ব্যবহৃত কৃত্রিম রং শিশুদের ক্ষেত্রে নানা জটিল স্নায়বিক রোগের জন্ম দিতে পারে। দেখা গিয়েছে, কৃত্রিম রং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছোটদের ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজ়অর্ডার’ (এডিএইচডি) রোগের কারণ। অত্যধিক চঞ্চলতা, মনঃসংযোগের অভাব ও শিশুদের আচরণগত সমস্যা এবং ছোট থেকেই দুর্বল স্মৃতিশক্তি, বারে বারে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা এই রোগের লক্ষণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কৃত্রিম রঙে থাকা রাসায়নিক শিশুর মধ্যে আচরণগত সমস্যাও তৈরি করতে পারে। এই ধরনের রং ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য ঘটায়। হাসি-কান্না, আনন্দ, বিরক্তি, রাগ, দুঃখ, অভিমান, স্মৃতিশক্তি— সবই নিয়ন্ত্রণ করে এই হরমোন। তাই এর তারতম্য হলে জটিল মানসিক বা স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
কোন রঙে কী রাসায়নিক থাকে?
টারট্রাজ়িন বা হলুদ রঙে সালফার, সোডিয়াম বেশি পরিমাণে থাকে। এই ধরনের রং তৈরি হয় আলকাতরা থেকে, যা শিশুর মধ্যে ‘হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজ়অর্ডার’, অ্যালার্জির সংক্রমণ বা চর্মরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
সানসেট ইয়েলো রং নানা রকম ক্যান্ডি, আইসক্রিম ও কেকে পাওয়া যায়। এটিও একটি পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক রাসায়নিক যৌগ। শিশুরা বেশি খেলে তাদের কিডনি ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির ক্ষতি হতে পারে।
‘রেড ৩’ নামক কৃত্রিম লাল রং কেক-পেস্ট্রি, চকোলেট, যাবতীয় বেক্ড ও ফ্রোজ়েন খাবারে থাকে। রংটি আসলে এরিথ্রোসিন নামক এক ধরনের কৃত্রিম রং, যা বিভিন্ন খাবার ও পানীয়ে মেশানো হয়। এই রং ডিএনএ-র ক্ষতি করে, ক্যানসারের আশঙ্কা বৃদ্ধি করে।
ব্রিলিয়ান্ট ব্লু রং নীল বা সবুজ রঙের পানীয় ও জেলিতে পাওয়া যায়। রংটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দেয়। এর থেকে স্নায়বিক ব্যাধি হতে পারে।
কৃত্রিম সবুজ রঙে থাকে আর্সেনিক ও ক্রোমিয়ামের মতো রাসায়নিক, যা শিশুর এডিএইচডি রোগের কারণ হতে পারে। আবার অ্যালার্জির সংক্রমণও ঘটাতে পারে।