ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘বাটারফ্লাইজ় ইন স্টম্যাক’। ভালবাসার মানুষকে দেখলে বা তাঁর কাছাকাছি এলে অনেক সময়ে এমন অবস্থা হয়। লজ্জা, ভয়, আতঙ্ক— এমন অনেক অনুভূতির ইঙ্গিত মেলে পেটের ভিতর। কিন্তু মাথার খেলা আরও জটিল। চিউইং গাম চিবিয়ে ‘দিমাগ কি বাত্তি’ জ্বলে কি না জানা নেই। কিন্তু একদল গবেষক প্রমাণ করে দিয়েছেন, মস্তিষ্কের অন্ধকারাচ্ছন্ন ৬টি প্রকোষ্ঠ আলোকময় করে তুলতে পারে ৬ রকমের ভালবাসা।
আরও পড়ুন:
কোন সহকর্মী কাকে দেখে কেমন ভাবে হাসলেন কিংবা কোন ইঙ্গিতে তাকালেন, এক ঝলক দেখেই পাশে থাকা তৃতীয় ব্যক্তিটি তাঁর সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য ফাঁস করে দিতে পারেন। কিন্তু কাকে দেখলে বা কার প্রতি প্রেম উথলে উঠলে মস্তিষ্কের কোন প্রকোষ্ঠ চিকচিক করে উঠবে সেই জটিল ক্রিয়াকলাপ, খালি চোখে বোঝার উপায় নেই। ‘সেরিব্রাল কর্টেক্স’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে অন্তত তেমনটাই বলা হয়েছে। তবে ভালবাসা মানেই যে তা নারী-পুরুষ বা ‘আদম-ইভ’ কেন্দ্রিক, তা নয়। ভালবাসারও রকমফের আছে। তা মানুষের প্রতি মানুষেরও হতে পারে। আবার পোষ্য বা প্রকৃতিপ্রেমও হতে পারে। আবার কৃষ্ণের প্রতি মীরার যে প্রেম, তা-ই বা বাদ যায় কেন!
আরও পড়ুন:
মস্তিষ্কের এই জটিল কার্যকলাপ বোঝার জন্য ফিনল্যান্ডের একদল গবেষক ‘ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজ়োন্যান্স ইমেজিং’ বা (এফএমআরআই)- প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছিলেন। তাঁদের গবেষণার মূল বিষয় ছিল মানব মস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশে কোন ‘ভালবাসার প্রদীপ’ জ্বলে ওঠে তা নির্ধারণ করা। ৫৫ জন এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। গবেষণার ফলাফল অক্সফোর্ডের জার্নাল ‘সেরিব্রাল কর্টেক্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেই ভালবাসার নানা রকম প্রকারভেদ এবং তার ফলাফলের হদিস পাওয়া গিয়েছে। বিভিন্ন পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে থাকা মানুষ এবং তাঁদের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে তাঁদের মস্তিষ্কের যে যোগ, তা-ও ছবিতে ধরা পড়েছে। ভালবাসার হেরফেরে মস্তিষ্কের বিভিন্ন কুঠুরিতে ছোট ছোট ‘টুনি বাল্ব’ জ্বলে ওঠে, সে প্রমাণও মিলেছে।
গবেষণা প্রধান এবং দার্শনিক পার্টিলি রিনির মতে, কী রকম ভালবাসায় মস্তিষ্কের কোন অঞ্চল চকচক করে উঠবে, তা অনেকটা পরিস্থিতির উপরেও নির্ভর করে। সন্তানের প্রতি মা-বাবার ‘ভালবাসা’ কিংবা নারী-পুরুষের ‘প্রেম’ তো এক নয়। আবার, কল্পনায় ঘুরেফিরে আসা ভালবাসার মানুষের ছবিও এক রকম ভাবে সকলের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে না। ভালবাসা আর প্রেমের অনুভূতি যদি আলাদা হয়, তা হলে মস্তিষ্কের সঙ্কেত ভিন্ন হবে। কার ভালবাসার কেমন প্রলেপ মস্তিষ্কের কোন অন্ধকার কুঠুরি আলোকময় করে তুলবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। অদূর ভবিষ্যতে যদি তার সন্ধান করে ফেলা যায়, তা হলে মস্তিষ্কের স্নায়ু সংক্রান্ত এমন অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা করাও সহজ হবে।