ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজা আবশ্যিক, এ কথা জানে ছোট থেকে বড় সকলেই। তবে দাঁত মাজার ব্রাশের দিকে আলাদা ভাবে নজর থাকে কি? অনেকে ভাবেন নিয়ম করে ব্রাশ বদলানো, ভাল ব্রাশ কেনা এসবই বিজ্ঞাপনী চমক! কিন্তু নিয়ম করে দাঁত মাজা এবং ব্রাশ না বদলানো অনেক অসুখের ঝুকি বাড়িয়ে দেয়, বলছেন দাঁতের চিকিৎসকেরা।
এই নিয়ে সাবধান করছেন দিল্লির দাঁতের চিকিৎসক বিমল অরোরা। দীর্ঘ দিন ধরে সেনাবাহিনীর দন্তচিকিৎসক হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, দাঁত নিয়ে অবহেলা এবং ব্রাশের দিকে নজর না দেওয়া— ডায়াবিটিস থেকে হার্টের অসু্খের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘দাঁত মাজার ব্রাশ হল দ্বাররক্ষক। যখন কেউ দাঁত মাজেন, রোগ-জীবাণু শরীরে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে না। দাঁত মাজা আসলে হাজার হাজর ব্যাক্টেরিয়া, জীবাণুকে হার্ট বা রক্ত পর্যন্ত পৌঁছতে বাধা দেওয়া।’’
খুব সাধারণ এই অভ্যাসই দিনের পর দিন অসংখ্য রোগজীবাণুর হাত থেকে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গগুলিকে বাঁচায়। মুখগহ্বরে সংক্রমণ হলে সেই কারণে শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এক দিন ঠিক করে দাঁত না মাজা মানে ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়া। আর সে সব যদি রক্তে মেশে, অন্ত্রে বা হার্ট পৌঁছয়, তার ফল ভয়াবহ হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মুধমেহর সঙ্গে দাঁতের সম্পর্ক
মধুমেহ বা ডায়াবিটিস থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই ভেঙে পড়ে। তার উপর অসংখ্য ব্যাক্টেরিয়া, জীবাণু হানা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তা ছাড়া, ডায়াবেটিকদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। ফলে মুখে বা মাড়িতে ক্ষত, সংক্রমণ যদি হয়, তা থেকে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতায় প্রভাব পড়তে পারে। ইনসুলিনই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে কী ভাবে?
মাড়িতে সংক্রমণ, রক্ত পড়ার মতো সমস্যার নেপথ্যে কখনও কখনও থাকতে পারে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের মতো সমস্য। এতে ধমনীর মধ্যে কোলেস্টেরল, মেদ-সহ কিছু জিনিস জমে ধমনীর পথ সঙ্কীর্ণ করে তোলে। কিছু বিশেষ ধরনের প্রদাহ মাড়ির পাশাপাশি হার্টেও প্রভাব ফেলতে পারে। চিকিৎসক সতর্ক করছেন, মাড়ি বা দাঁতে সংক্রমণ হলে বিষয়টিকে অবহেলা না করতে, হার্টের দিকটিও নজর দিতে। কারণ, তাঁর অভিজ্ঞতায় সংক্রমিত মাড়ি হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ব্রাশের ভূমিকা কতটা?
দাঁত মাজার ব্রাশটি একেবারে নষ্ট না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অনেকেই সেটি ব্যবহার করেন। তা ছাড়া রাতভর খোলা স্থানে ব্রাশ রেখে দেওয়ার ফলে সেখান থেকে সংক্রমণের ভয় থাকে। ব্রাশের ব্রিস্লগুলি নষ্ট হয়ে গেলে দাঁতের ফাঁক পর্যন্ত তা যেতে পারে না। ফলে ঠিক ভাবে মুখ পরিষ্কার হয় না। চিকিৎসক বলছেন, তিন মাস অন্তর ব্রাশ পরিষ্কার করা দরকার। এ ছাড়া চিনি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ভাল। কারণ, এতে দাঁতের ক্ষতি হয়।
· দাঁত মাজার আগে ব্রাশটি গরম জলে ধুয়ে নেওয়া দরকার।
· ব্রাশ ঢাকা দেওয়া দায়গায় রাখা দরকার। এবং সেই স্থানটি পরিচ্ছন্ন এবং শুকনো করে রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।