বৃষ্টির দিন এলে জীবাণু ঘটিত রোগ বেড়ে যায়। খাবার বা জল থেকে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে। দেখা যায়, বর্ষার সময়ে পেটের গোলমাল, ডায়েরিয়ার প্রকোপ অনেক বাড়ে। সে কারণেই চিকিৎসকেরা বারে বারে সতর্ক করে বলেন যে, এই সময়ে রাস্তায় বিক্রি হওয়া খাবার, কাটা ফল বা লস্যি-শরবতের মতো পানীয় না খেতে। শিশু ও বয়স্কদের তো বিশেষ করে সাবধান করা হয়। কারণ, খাবারে জন্মানো কিছু ব্যাক্টেরিয়া থেকে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তা কাঁচা আনাজপাতিও হতে পারে, অথবা কাঁচা মাছ বা মাংস বা ফ্রিজে রাখা দু’দিনের বাসি খাবার। খাবারে বিষক্রিয়ার জন্য কিন্তু কিছু ভুল অভ্যাসই দায়ী। কী করলে সংক্রমণের প্রকোপ এড়ানো যাবে, তা জেনে রাখা ভাল।
ই.কোলাই, সালমোনেল্লা, লিস্টেরিয়া, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর, স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়া, ব্যাসিলাম সিরিয়াসের মতো কিছু ব্যাক্টেরিয়া খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী, এমনটাই জানালেন চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর মতে, ভাল করে না ধোয়া খাবার, দীর্ঘ সময় ধরে কেটে রাখা ফল, এমনকি ফ্রিজে কাঁচা-মাংসের পাশে রেখে দেওয়া রান্না খাবারে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ দ্রুত হয়। তা ছাড়া রাস্তার জল, শরবত, লস্যি বা নারম পানীয়ে রোটা ভাইরাস জন্মায়, যা থেকে হেপাটাইটিস-বি ছড়াতে পারে। সালমোনেল্লা সিগেলা ভাইরাস রক্ত আমাশয়ের অন্যতম কারণ। খামখেয়ালি আবহাওয়াই এই সব জীবাণুর বাড়বাড়ন্তের কারণ। কখনও চড়া রোদ, কখনও বৃষ্টি— এমন আবহাওয়াই জীবাণুদের বংশবিস্তারের জন্য আদর্শ। ‘ফুড পয়জ়নিং’ বা খাদ্যে বিষক্রিয়া তো বটেই, হেপাটাইটিস এ ও বি ছড়ানোর পিছনেও দূষিত খাবার ও অপরিশোধিত জলের ভূমিকা রয়েছে।
খাদ্যে বিষক্রিয়া ঠেকানোর উপায় কী?
খাবারে জীবাণু সংক্রমণ যাতে না হয়, তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। মনে রাখতে হবে, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ খুব দ্রুত ঘটে। তাই সামান্য ভুলেও খাবারে জীবাণু জন্মাতে পারে।
২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া
ফ্রিজ থেকে খাবার বার করার আগে, রান্না করার আগে অথবা খাবার পরিবেশনের আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ঈষদুষ্ণ জলে হাত ধুতে হবে। তার পর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে শুকনো করে হাত মুছতে হবে। ভেজা হাতে বার বার ফ্রিজের দরজা খুললে বা খাবারের পাত্র ধরলে, তার থেকেও জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে।
কাঁচা মাছ-মাংস সংরক্ষণের পদ্ধতি
বাজার থেকে কেনা কাঁচা মাছ বা মাংস আগে কিছু ক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তার পর ভাল করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সেগুলি মুখ ঢাকা পাত্রে সংরক্ষণ করলে ভাল। ফ্রিজে তোলার আগে ভাল করে হাত স্যানিটাইজ় করে তবেই ফ্রিজের হাতল ধরুন। কাঁচা মাছ বা মাংসের সঙ্গে অন্য সব্জি বা রান্না খাবার রাখবেন না। এতে মাছ বা মাংসে জন্মানো ব্যাক্টেরিয়া রান্না খাবারেও ছড়িয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন:
ফ্রিজ জীবাণুমুক্ত করেন তো?
অনেকেই বলেন, বাড়ির খাবার খেয়েও পেটে বিষক্রিয়া হয়েছে। এর কারণ হল রান্না খাবার যেখানে রাখছেন, সেই ফ্রিজের প্রতিটি তাক নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। তার জন্য জলে পাতিলেবুর রস অথবা ভিনিগার মিশিয়ে প্রতিটি তাক ভাল করে মুছে নিন। যেখানে মাছ বা মাংস রাখা হয়, সেই তাকটিও পরিষ্কার রাখতে হবে। বরফের ট্রে এক দিন অন্তর পরিষ্কার করে জল বদলে দিন। আর রান্না খাবার বা রান্না করে রাখা ভাত, সব সময়ে কাচ বা সেরামিকের পাত্রে রেখে তা ঢাকা দিয়ে রাখা উচিত।
সঠিক পদ্ধতিতে রান্না
মাছ, মাংস বা ডিম সব সময়েই উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যে কাটিং বোর্ডে সব্জি কাটছেন বা যে ছুরি ব্যবহার করছেন, তা নিয়মিত যেন পরিষ্কার করা হয়। কাটিং বোর্ড থেকেও জীবাণু সংক্রমণ ঘটে। রান্না খাবার ঠান্ডা করেই ফ্রিজে তুলবেন। কারণ, তাপমাত্রার এই পার্থক্যেই সালমোনেল্লার মতো ব্যাক্টেরিয়া দ্রত বংশবৃদ্ধি করে।
বাসি খাবার জীবাণুর আঁতুড়ঘর
খাবার কত দিন রেখে খাচ্ছেন তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। যদি রান্না করা খাবার বা কেটে রাখা ফল রাতভর ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেন, তা হলে ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাক জন্মাবেই। ফ্রিজের খাবারও যদি তিন দিনের বেশি রেখে খান, তা হলে টক্সিন তৈরি হবে যা পেটে গেলেই বিষক্রিয়া হবে। ঘন ঘন বমি, ডায়েরিয়ার লক্ষণ দেখা দেবে। অনেকে ভাবেন, বাসি খাবার ভাল করে গরম করে নিলেই তা জীবাণুমুক্ত হবে, তা একেবারেই নয়। বরং উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যাক্টেরিয়ার টক্সিন ভেঙে গিয়ে তা আরও বিপজ্জনক রাসায়নিক তৈরি করবে।