ব্যথা-বেদনা-যন্ত্রণা জীবনে নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বিশেষ করে বয়স ৪০ পেরোলে এ ‘উপদ্রব’ বাড়তে শুরু করে। কারও পায়ে ব্যথা, তো কারও ঘাড়ে-কাঁধে-হাতে-কোমরে! এ দিক-সে দিক করতে গেলেই হঠাৎ মালুম পড়ে। তবে তার পরেও ব্যথাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান না অনেকেই।
সাধারণত ব্যথা হলে তা বেদনানাশক মলমেই মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন বেশির ভাগ মানুষ। তাতে না কমলে কেউ কেউ গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেন। আবার কেউ খেয়ে নেন ব্যথানাশক ওষুধ। ব্যথা-বেদনা হওয়া ইস্তক ডাক্তারবাবুর চেম্বারে ছোটা মানুষ খুঁজলে কমই মিলবে। তার একটা কারণ অবশ্যই সময়ের অভাব। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্বের অভাবও কাজ করে। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, কিছু ব্যথা অবহেলা করলে ফল হতে পারে উল্টো। যেমন আর্থ্রাইটিসের ব্যথা।
হয়তো সকাল থেকে রাত হাতের কব্জিতে একটা চিনচিনে হালকা ব্যথা হয়ে চলেছে। যা কখনও বাড়ছে, আবার কখনও নিজের অস্তিত্ব বুঝতেই দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে খুব বেশি বিরক্তির কারণ নয়, এমন ব্যথাকে অনেকেই পাত্তা দেন না। অথচ এমন ব্যথা আর্থ্রাইটিসের ব্যথা হলেও হতে পারে। যার চিকিৎসা সময় থাকতে না করালে মাত্রা ছাড়াতে পারে। তাই সাবধান হওয়া জরুরি। অস্থিরোগের চিকিৎসক সুব্রত গড়াই বলছেন, ‘‘সাবধান হওয়া সম্ভবও। ব্যথা হলে তা সাধারণ ব্যথা, না কি আর্থ্রাইটিসের মতো কোনও অস্থি সংক্রান্ত রোগের দিকে গড়াচ্ছে, তা বুঝতে হলে কয়েকটি উপসর্গে নজর রাখতে হবে।’’
কী কী উপসর্গ দেখে বুঝবেন ব্যথাটি ‘সাধারণ’ নয়?
১। ব্যথার মেয়াদ
যদি ব্যথা দীর্ঘ দিন ধরে একই জায়গায় হতে থাকে, তবে তা সাধারণ ব্যথা না-ও হতে পারে। চিকিৎসক সুব্রত বলছেন, ‘‘ধরুন কোনও ব্যথা ছ’সপ্তাহ ধরে চলছে, তবে বুঝতে হবে কোনও সমস্যা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সেই ব্যথার প্রতি বিশেষ মনোযোগী হওয়া জরুরি।’’
২। সকালের সমস্যা
আর্থ্রাইটিসের ব্যথা হলে সকালের দিকে অস্থিসন্ধিতে এক ধরনের অনমনীয়তা দেখা যায়। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে যদি মিনিট তিরিশেক চেষ্টাচরিত্র করতে হয়, তবে বুঝতে হবে ব্যথা সাধারণ নয়।’’ এটি ইনফ্ল্যামেটারি আর্থ্রাইটিস বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের একেবারে প্রথম দিকের লক্ষণ।
৩। ফোলা ভাব থাকছে?
ব্যথা তো নানা কারণে হতেই পারে। কিন্তু যদি দেখেন, যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে অল্প বা বেশি ফোলাভাব রয়েছে, বিশেষ করে হাঁটু, পা, হাতে এবং তা যদি কোথাও আঘাত লাগার কারণে না হয়ে থাকে, তবে সতর্ক হওয়া জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক।
৪। শিরশিরে অনুভূতি
অনেক সময় অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হলে তা থেকে স্নায়ুর উপর চাপ পড়তে পারে। যা থেকে অসাড় ভাব অথবা হাতে-পায়ে শিরশিরে অনুভূতি হতে পারে। সুচ বেঁধানোর মতো অনুভূতিও হতে পারে।
৫। ক্লান্তিবোধ, দুর্বলতা
যে সমস্ত আর্থ্রাইটিস অটোইমিউন ডিজ়িজ়ের কারণে হয়, যেমন লিউপাস বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, সেগুলি থেকে শরীরে একটা সার্বিক ক্লান্তিবোধও আসে। এই ক্লান্তিবোধ মূলত পেশির। এই ক্লান্তিবোধের সঙ্গে সারা দিনের পরিশ্রমের কোনও সম্পর্ক নেই। এই ধরনের ক্লান্তি বিশ্রাম নেওয়ার পরেও কাটতে চাইবে না।
মনে রাখতে হবে
আর্থ্রাইটিস কেবল বয়সকালেই হয়, এমন একটি ভুল ধারণা অনেকেরই আছে। তা কিন্তু ঠিক নয়। আর্থ্রাইটিস নানা বয়সে নানা কারণে হতে পারে। তার ধরণও হয় আলাদা আলাদা। কোনও আর্থ্রাইটিস ইউরিক অ্যাসিড থেকে হয়, কোনওটি হয় প্রদাহ এবং রোগ প্রতিরোধের সমস্যা থেকে, ব্যাকটেরিয়া থেকেও বাতের রোগ হতে পারে। আবার শিশুদেরও আর্থ্রাইটিস হয়, যাকে জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস বলা হয়। আগে থেকে সতর্ক হলে চিকিৎসা করিয়ে তার সমাধান হতে পারে।