E-Paper

আয়ু বাড়ুক চুলের

চুল হারালেও চুল ফিরে আসবে— এমন দাবি করছে নানা রকম ‘বিউটি ট্রিটমেন্ট’। সেগুলি কি কার্যকর? স্বাস্থ্য-ঝলমলে চুল ফেরানোর সহজ উপায় কী?

চিরশ্রী মজুমদার 

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:২৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কুড়ি-তিরিশ বছর আগেও, চুল নিয়ে এতটা সচেতনতা ছিল না। কিন্তু এখন নারী-পুরুষ উভয়েই অনেক সচেতন, কোনও ভাবেই চুল হারাতে চান না। এর কারণ ভোগপণ্যবাদের রমরমা, তারুণ্যের সীমাবৃদ্ধি। মেগাস্টারদের বয়স বাড়লেও যেমন টাক পড়ে না, তরুণ তারকার সিঁথিটুকুরও দেখা মেলে না— ঠিক তেমন কেশসৌন্দর্যের আকাঙ্ক্ষাও প্রবল হচ্ছে। সেই ইচ্ছাপূরণে নানা ক্লিনিক থেকে চুল পাতলা হওয়ার সমস্যার সমাধান হিসেবে অনেক ধরনের ট্রিটমেন্টের বিজ্ঞাপন করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলি কি আদৌ বৈজ্ঞানিক ও ফলপ্রসূ? ব্যাখ্যা করলেন বিশেষজ্ঞেরা।

কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি

ইদানীং অনেক সংস্থা দাবি করছে, স্টেম সেল থেরাপির প্রয়োগে চুল পড়ার সমস্যা রুখে চুলের ঘনত্ব বাড়ানো সম্ভব। কসমেটিক সার্জন মনোজ খন্নার স্পষ্টোক্তি, “কয়েক দশক ধরেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্টেম সেল থেরাপির প্রয়োগ নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। কিন্তু এই থেরাপিতে মাথায় নতুন চুল গজানো এখনও সম্ভব হয়নি। স্ক্যাল্পে ফাঁক দেখা গেলে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশনই মানুষের প্রথম পছন্দ। তবে ওষুধ প্রয়োগেও চুলের বাড়বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য ভাল হয়।”

প্লেটলেট-রিচ প্লাজ়মা থেরাপি (পিআরপি) শরীরের স্বাস্থ্যোন্নতি বা ক্ষত নিরাময়ের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রোগীর নিজের রক্তরসের ‘বাফি কোট’ আক্রান্ত অংশে ইঞ্জেক্ট করা হয়। চুলের চিকিৎসায়ও এই পদ্ধতি খুব জনপ্রিয়। মাথায় দিলে চুলের স্বাস্থ্য ফেরে, চুল মোটা হয়। কিন্তু চিকিৎসা বন্ধ করলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ড. খন্না জানালেন, এখন পিআরপি-র সঙ্গে জুড়েছে গ্রোথ ফ্যাক্টর কনসেনট্রেট (জিএফসি)। আরও কিছু গ্রোথ ফ্যাক্টরকে উদ্দিষ্ট জায়গায় ইঞ্জেক্ট করা হচ্ছে। কিন্তু এ সব চিকিৎসারই ফলাফল সাময়িক। ছ’মাসে ছ’বার করাতে হচ্ছে। কারণ চিকিৎসা থামালেই চুল আগের অবস্থায়ফিরে যায়।

চুল পড়ে গেলেও যদি চুলের গোড়া ঠিক থাকে, তবে লেজ়ার রশ্মি দিয়ে সেগুলোকে স্টিমুলেট করে দিলে চুল বাড়তে পারে। কিছু সালঁ বা বিউটি ক্লিনিকে আরও কিছু হেয়ার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে চুল ফেরানোর আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এতে চাকচিক্য বাড়ে, দেখতে ভাল লাগে। ফাঁকা অংশে নতুন করে চুল গজানোর প্রমাণ নেই।

প্রতিরোধই অস্ত্র

অতএব এক বার টাক দেখা দিলে চুল ফিরে পাওয়া সত্যিই মুশকিল। তাই চিকিৎসকেরা জোর দিচ্ছেন প্রতিরোধে। অর্থাৎ সময় থাকতে চুলের মাহাত্ম্য বুঝে তাকে রক্ষা করুন। চুল পরিষ্কার রাখা, খুশকির নিরাময়, তেল মালিশ, স্টাইলিং কম করানো ইত্যাদির মাধ্যমে চুল এবং টাক পড়া কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হিট দেওয়ার জন্যও চুল ঝরে, তাই চাহিদা বাড়ছে কোল্ড স্ট্রেটনিং পদ্ধতির। এটি চুলের জন্য অপকারী নয়। রূপবিশেষজ্ঞ জলি চন্দ বললেন, “সুন্দর চুল পাওয়ার চাবিকাঠি সুস্থ জীবনযাপন। খাদ্যতালিকায় বাদাম, ডিম ইত্যাদি প্রোটিন, ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন, তেলমশলা থাকুক কম, স্ট্রেসমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন, ঠিক পদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস রাখুন। পর্যাপ্ত ঘুমের সঙ্গেও আপস নয়।”

মরসুমি চুল পড়া নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। কারণ যত চুল ঝরল সেই জায়গায় আপনা হতেই নতুন চুল গজানোর কথা। বরং শীতকালে বিশেষ নজর দিন খুশকির সমস্যায়। চিকিৎসক বোঝালেন, মাথার চামড়ার উপরের অংশ কিছু সময় অন্তর পড়ে যায়। সেটা পরিষ্কার না করলেই মানুষ বলেন খুশকি হয়েছে। খুশকি যে কোনও শ্যাম্পুতেই চলে যাবে। তবে অনেক দিন ধরে খুশকি ফেলে রাখলে ছত্রাকের জন্ম হতে পারে। তখন অ্যান্টি ফাঙ্গাল বা অ্যান্টি ড্যানড্রফ শ্যাম্পুর প্রয়োজন। টানা তিন মাস এই ভাবে মাথা পরিষ্কার করলে তবে স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ফিরবে। তেল, হেয়ার কন্ডিশনার, সেরামের যথার্থ ব্যবহারে সমস্যা মিটবে। এলাকার জল খারাপ হলে চুল ধোয়ার জন্য বালতিতে কিছুটা ‘আর ও ওয়াটার’ ধরে রাখতে পারেন।

জলি বললেন, নারকেল তেলের সঙ্গে রোজ়মেরি অয়েলের ড্রপ, ভৃঙ্গরাজ তেল, টি ট্রি অয়েল দিয়ে মাসাজ করুন। মাথার ত্বকের প্রকৃতি ও চাহিদা বুঝে স্পা করান। ভাইব্রেটর ব্যবহারে মাসাজ করলেও রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।

কেশহীন হলেই কেতহীন?

ড. খন্না বললেন, পুরুষ-মহিলা উভয় ক্ষেত্রেই ৯০ শতাংশ চুল পড়ার কারণ বংশগত। চুল পাতলা হতে শুরু করলে দ্রুত মিনক্সিডিল দ্রবণ ব্যবহার করে সমস্যাকে কয়েক বছর ঠেকিয়ে রাখা যায়। আর যদি মাথার কিছুটা ফাঁকা হয়ে যায় তবে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশন অথবা হেয়ার প্যাচের কথা ভাবা যেতে পারে। এখন যে উইগ বা হেয়ার প্যাচগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি দেখতে অত্যন্ত স্বাভাবিক। ব্যক্তিবিশেষের চুলের রং, গড়নের সঙ্গে পুরোপুরি মিলিয়ে দেওয়া সম্ভব। এগুলি পরে স্নান পর্যন্ত করা যায়। বহু জনপ্রিয় তারকাও জনসমক্ষে এলে এমন প্যাচই ব্যবহার করছেন। অতএব বহু আয়াস সত্ত্বেও চুল যদি না-ও বা থাকে, নিজের ‘লুক’ ধরে রাখার কৌশল কিন্তু রয়েছে।


মডেল: হিয়া মুখোপাধ্যায়, মেকআপ ও হেয়ার: অভিজিৎ পাল, ছবি: দেবর্ষি সরকার, জয়দীপ মণ্ডল

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Stop hairfall

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy