ঝমঝম বৃষ্টি, দু’দিন বাদে বাদে চারদিকে হাঁটু জল, কাদা। রোদ উঠলেও একটা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া। এই পরিবর্তিত মরসুমে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে বাড়ির খুদে সদস্যটি। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বলছেন, “গত কয়েকদিনে বাচ্চাদের মধ্যে জ্বর, সর্দিকাশি, ডায়রিয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সর্দিকাশির কারণে শ্বাসকষ্টেও ভুগছে অনেকে।” এ সময়ের অধিকাংশই ভাইরাল জ্বর। বর্ষায় রাইনো, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেটানিউমো, অ্যাডিনো নানা ধরনের ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে। তাই সন্তানকে সুস্থ রাখতে সতর্ক হতে হবে অভিভাবকদের।
কী সাবধানতা নেবেন?
ডা. দিব্যেন্দু বলছেন, বাচ্চা বৃষ্টিতে যেন না ভেজে, প্রথমেই সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছাতা মাথায় কিংবা রেনকোট পরে বাড়ি ফিরলেও বৃষ্টির দিনে বাচ্চাকে তৎক্ষণাৎ অ্যান্টি-ব্যাক্টিরিয়াল সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে দেওয়া ভাল।
- সর্দিকাশির ধাত থাকলে: বর্ষার শুরু থেকেই বাচ্চাকে সাবধানে রাখুন। ভাইরাস মূলত ড্রপলেট থেকে ছড়ায়। তাই ভিড় জায়গায় বাচ্চাকে মাস্ক পরা অভ্যেস করান।
- সংক্রমণের দিকে নজর: বাড়িতে অন্য কারও ঠান্ডা লাগলে বাচ্চার আশপাশে না আসাই ভাল। বর্ষার দিনে বড়রা বাইরে থেকে ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে জামাকাপড় বদলে তবেই ছোটদের কাছে যান। সন্তানের জ্বর বা সর্দিকাশি হলে স্কুলে পাঠাবেন না। সে ক্ষেত্রে একজনের কাছ থেকে ভাইরাস অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্যানিটাইজ়ারের অভ্যেসও জরুরি।
- ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন জরুরি: পাঁচের নীচে বয়স হলে সাধারণত প্রতি বছরই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ডা. দিব্যেন্দু বলছেন, “পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এই ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। বর্ষায় জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভোগার ধাত থাকলে প্রতি বছর আগেভাগেই এই ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বাচ্চারা তো বটেই, যে কোনও বয়সের মানুষই এই ভ্যাকসিন নিতে পারেন।” বিশেষত, ইমিউনিটি কম্প্রোমাইজ়ের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁরা সহজেই সংক্রমিত হতে পারেন। বর্ষার আগে তাঁরাও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়ে রাখতে পারেন।
- ডায়রিয়া এড়াতে: বর্ষায় জলের ব্যাক্টিরিয়া থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। বিভিন্ন এলাকা জলে ডুবে থাকায় পানীয় জলও দূষিত হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে বর্ষায় বাচ্চাকে পারলে ফুটিয়ে জল খাওয়ান। বাড়িতে ভাল মানের প্যাকেজড পানীয় জলব্যবহার করতে পারেন। ডা. দিব্যেন্দু বলছেন, “এমনিতেই বর্ষায় জলবেশি খাওয়া জরুরি। আর ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে অনেকটা জল বেরিয়ে যায়। তাই সে সময়েবাচ্চাকে বেশি করে জল খাওয়ানো দরকার। ওআরএস খাওয়ানো যেতে পারে। সঙ্গে বাচ্চাকে কিন্তু পেট ভরে খাবার খাওয়ানোও জরুরি।”
কী কী সমস্যা হচ্ছে?
জ্বর, সর্দি, কাশি ছাড়াও এ সময়ে গা, হাত-পা ব্যথা, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গও দেখা দেয়। ডা. দিব্যেন্দু জানাচ্ছেন, শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জির সমস্যা যাদের রয়েছে, বিশেষত যারা ইনহেলার ব্যবহার করে, তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই পরিস্থিতি জটিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জার সমস্যা বাড়ছে। সংখ্যায় কম হলেও ব্যাক্টিরিয়াল নিউমোনিয়া হচ্ছে বাচ্চাদের। অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও বাচ্চার অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ দু’দিনের মধ্যে শরীর সুস্থ না হলে, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঠিক কোন ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে শিশু ভুগছে, তা পরীক্ষা করে জানতে হয়। যদিও চিকিৎসকেরা বলছেন, ভাইরাসের সেই পরীক্ষা খরচসাপেক্ষ। তবে প্রাথমিক ভাবে উপসর্গ দেখেই বাচ্চা কোন ভাইরাসে আক্রান্ত তার ধারণা পাওয়া যায়। সেই অনুযায়ীই চিকিৎসা করা হয়। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের তেমন কোনও ভূমিকা নেই। বরং উপসর্গ অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দু’-তিনদিনের মধ্যে বাচ্চা সুস্থ হয়ে যায়। তবে একবার সুস্থ হয়ে গেলে কিন্তু বাচ্চার শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে আসে। তাই তাকে সাবধানে রাখা জরুরি, না হলে বারবার ভুগতে থাকবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)