E-Paper

শিশু-ত্বকে যত্নের পরশ

শিশুদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল, যার আলাদা যত্ন দরকার। কী ভাবে পরিচর্যা করা উচিত?

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৫ ০৮:০৯


আর সব কিছুর মতোই শিশুদের ত্বকের প্রতিও আলাদা যত্ন দরকার। কারণ তাদের ত্বক বেশি কোমল, নমনীয়। অনেকেই বড়দের ব্যবহার করার ক্রিম, পাউডার, সাবান বাচ্চার জন্যও ব্যবহার করেন। কিন্তু তা একেবারেই ঠিক নয়। শিশুদের ত্বক সংবেদনশীল হওয়ায় যে কোনও সংক্রমণও খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সব সময়ে শিশুদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা দরকার। তাদের ত্বকের পরিচর্যাও যথার্থ মনোযোগ দাবি করে। কোন প্রডাক্ট, কেন ও কী ভাবে ব্যবহার করবেন, জেনে রাখা দরকার।

সাবান ও শ্যাম্পু

শিশুর ত্বকের জন্য বড়দের সাবান কখনওই নয়। কম ক্ষারযুক্ত, ঠিক পিএইচ ব্যালান্স (৫.৫) রয়েছে, এমন সাবানই ব্যবহার করুন শিশুর জন্য। আমাদের মতো ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশে বাচ্চাকে প্রত্যেক দিন সাবান মেখে স্নান করাতে হবে। তাতে ত্বক খসখসে হয়ে যাবে, এ ধারণা ভ্রান্ত। ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে ঘাম বসে অ্যালার্জি হতে পারে। ঘামাচি বা মিলিয়ারিয়াও খুব চেনা সমস্যা। তা চুলকে ফেললে সংক্রমিত হয়ে এগজ়িমার আকার নিতে পারে। ত্বক পরিষ্কার রাখাই এর একমাত্র উপায়। শরীরের ভাঁজযুক্ত জায়গা, অর্থাৎ কুঁচকি, বাহুমূল, নিতম্বে প্রত্যেক দিন সাবান দিতেই হবে। সপ্তাহে দু’-তিন দিন সারাগায়ে ভাল করে সাবান মেখে স্নান করাতে হবে। এই ‘সোপ হলিডে’র দিনগুলোয় বাচ্চারা স্নান করে দারুণ আনন্দও পায়।

সাবানের পরিবর্তে লিকুইড সোপ (জেল বা ক্রিম) ব্যবহার করা আরও ভাল। এর পিএইচ ব্যালান্স শিশুদের ত্বকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি করা হয়। অনেক সময়ে সদ্যোজাতকে সাবান মাখাতে বারণ করা হয়। কিন্তু সেই ধারণাও সম্পূর্ণ ঠিক নয়। পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজিস্ট ডা. সন্দীপন ধর জানালেন, শিশুর জন্মের পরের দিন থেকেই তার ত্বক পরিষ্কার রাখা দরকার। ‘‘ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বা নামী কসমেটিক হাউসের তৈরি বেবি সোপ বা শাওয়ার জেলে ডিটারজেন্ট এজেন্টের পাশাপাশি অয়েল, ময়শ্চারাইজ়ারও দেওয়া থাকে। তাই শিশুর ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়ার ভয় নেই। সাবানের পরে প্রয়োজনে বডি লোশন লাগাতে হবে। কিন্তু ত্বক পরিষ্কার রাখাটা বেশি জরুরি।’’

সাবানের মতোই ছোটদের জন্য তৈরি আলাদা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। টিয়ার গ্ল্যান্ডের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে এ রকম শ্যাম্পু তৈরি করা হয়।

ক্রিম ও ময়শ্চারাইজ়ার

গরমের দেশে ঘন ক্রিমের দরকার কমই পড়ে। সে ক্ষেত্রে ভাল কাজ করে বডি লোশন। হালকা অথচ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তবে শীতকালে ময়শ্চারাইজ়ারের বিশেষ প্রয়োজন। বছরের বেশির ভাগ সময়ে অনেক বাচ্চাই এসিতে থাকে দীর্ঘক্ষণ। সেই সময়ে বিশেষ করে ময়শ্চারাইজ়ার ব্যবহার করতে হবে। ‘‘শীতকালে সাধারণত অয়েল বেসড লোশন বা ক্রিম লাগানোর পরামর্শ দিই আমরা। আর গরমে আর্দ্রতা বেশি বলে ওয়াটার বেসড লোশন লাগাতে বলি। তবে রাতে এসি-তে শোয়ার আগে অবশ্যই বাচ্চাকে ময়শ্চারাইজ়ার লাগাতে হবে, না হলে ত্বক ধীরে ধীরে শুকনো হয়ে যাবে,’’ বললেন ডা. ধর।

তেল

স্নানের আগে শিশুদের তেল মালিশ করার অভ্যেস চিরকালীন। এতে পেশির গড়ন, রক্ত চলাচলে সাহায্য করার মতো একাধিক উপকার রয়েছে। তবে বাচ্চাকে কী তেল মাখানো উচিত? ডা. ধর জানালেন, ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়া শুধু অলিভ অয়েল এবং নারকেল তেলকেই মান্যতা দেয়। তবে এ দেশে শিশুকে সরষের তেল মাখানোর চল সুপ্রচলিত। ‘‘সরষের তেল মাখাতে বারণ করা হয় কারণ তা ভারী এবং বাচ্চার ত্বকে প্রদাহ বা ইরিটেশনের সৃষ্টি করে অনেক সময়ে। নারকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল লাগাতে পারলে সবচেয়ে ভাল। অনেকে মনে করেন, নারকেল তেলে শিশুর ঠান্ডা লেগে যায়। কিন্তু এটি ভ্রান্ত ধারণা। নারকেল তেলের ফ্রিজ়িং পয়েন্ট কম বলে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে। অনেক সময়ে আমরা সানফ্লাওয়ার অয়েলও লাগাতে বলি,’’ বললেন ডা. ধর।

সদ্যোজাতকে তেল মাখানো উচিত কি না, তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ডা. ধর বললেন, ‘‘আগে বলা হত, জন্মের পরে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত তেল না মাখাতে, স্নান না করাতে। মায়ের প্লাসেন্টা থেকে বেরোনোর পরে সদ্যোজাতের ত্বকে ভারনিক্স স্কেসিওসা বলে একটা স্তর থাকে। সেই জন্যই তেল-সাবান মাখাতে বারণ করা হত। এখনও অনেক পুরনো পেডিয়াট্রিশিয়ান এটা বলে থাকেন। তবে আজকের দিনে এই ধারণা অচল। জন্মের পরে প্রথম দিন থেকেই শিশুর মাথায়, গায়ে তেল মাখিয়ে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে স্নান করানো উচিত। তার পরে বডি লোশন লাগিয়ে ফেলতে হবে।’’

ঘামাচির সমস্যা

ঘাম গায়ে বসে ঘামাচির সমস্যা খুব চেনা। এর প্রধান সমাধান হল, শুকনো কাপড় দিয়ে ঘাম মুছে ফেলা। শরীরকে যথাসম্ভব ঠান্ডা রাখা। প্রিকলি হিট পাউডার লাগালে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গলায়, বগলে পাউডার মাখালে খানিক পরে তা গলে ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ করে দেয়। ফলে ঘাম বেরোতে না পেরে ঘামাচি আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই এখন চিকিৎসকেরা শিশুদের পাউডার লাগাতে বারণ করেন। বিকল্প হিসেবে বেবি ডিয়োডোর‌্যান্ট ব্যবহার করা যায়।

সানস্ক্রিন

ছোটদেরও সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি। বাচ্চারা বাইরে বেশিক্ষণ খেলাধুলো করলে সান ট্যান, সান বার্ন, অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা যায়। ‘‘ছোটদের ত্বক এমনিতেই রোদে স্পর্শকাতর হয়। সূর্যের আলোয় বেশিক্ষণ থাকলে পলিমরফিক লাইট ইরাপশনের মতো সমস্যা হতে পারে। এতে গালে সাদা ছোপ ছোপ দাগ তৈরি হয়। বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন তাই আবশ্যিক। ছোটদের ক্ষেত্রে এসপিএফ ২০ বা ৩০ হলেই যথেষ্ট। মেঘলা দিনেও লাগাতে হবে সানস্ক্রিন। সানস্ক্রিন ব্যবহারের বয়সসীমা সে ভাবে না থাকলেও সাধারণত পাঁচ বছরের বেশি বয়সি বাচ্চাদের লাগানোর পরামর্শ দিই আমরা,’’ বললেন ডা. ধর।

নামী ফার্মাসিউটিক্যালকোম্পানি বা কসমেটিক ব্র্যান্ডের প্রডাক্টই শিশুদের জন্য কেনা উচিত। কারণ এই ধরনের সংস্থাগুলি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে গিয়ে তবেই লাইসেন্স পায়। বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে শিশুদের প্রডাক্ট না কেনাই ভাল। এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি, ফল খাওয়াতে হবে ছোটদের। নখ আর কান পরিষ্কার রাখতে হবে। সর্বোপরি, ছোটদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Skincare Tips

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy