অল্প বয়স থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। মাঝেমধ্যেই মলের সঙ্গে রক্তপাত। ওজনও কমেছে খানিকটা। কিছু খেলেই বমি পায়। মাথা ঘোরা বা দুর্বলতাও নিত্যদিনের সঙ্গী। এমন সব সমস্যা দেখা দিলে, বেশির ভাগই অর্শ ভেবে এড়িয়ে যান। বিশেষ করে বয়স্কেরা যখন ভোগেন, তখন অর্শ ভেবে তার চিকিৎসাও সঠিক সময়ে হয় না। শৌচালয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটালে কখনও অন্যের হাসি-ঠাট্টা, অভিযোগ মুখ বুজে শুনতে হয়। তাই তখন মনেও হয় না, সমস্যাটা নিছক সাধারণ কোনও রোগের নয়। কোলনে ক্যানসার বড়ই বিপজ্জনক। এক বার ধরা পড়লে, তার নিরাময়ের পথ বড়ই জটিল ও যন্ত্রণাদায়ক।
মধ্যবয়সি বা তার চেয়ে বেশি বয়সিদের মধ্যে এই ক্যানসার সাধারণ ব্যাপার হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এ রোগে আক্রান্ত তরুণ রোগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বরং উদ্বেগজনক ভাবে সে সংখ্যার সূচক ঊর্ধ্বমুখী।
অর্শের সঙ্গে তফাত কোথায়?
প্রাথমিক ভাবে অনেকেরই কোলন বা মলাশয়ের ভিতর উপবৃদ্ধি বা পলিপ দেখা দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পলিপগুলি ক্যানসারে রূপান্তরিত হতে পারে। ফলস্বরূপ মলদ্বারে প্রদাহ, মলত্যাগের সময় তীব্র যন্ত্রণা কিংবা রক্তপাতের মতো সমস্যা দেখা দেয়। মলদ্বারের কাছে ফোলা মাংসপিণ্ড দেখলে তা শুরুতে অর্শ বলেই ভ্রম হয়। চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে বাজারচলতি মলম লাগিয়ে বা কিছু চেনা ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। এতে হিতে বিপরীত হয়।
আরও পড়ুন:
দীর্ঘ সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন এবং সঠিক চিকিৎসা করাননি, এমন রোগীদের কোলোরেক্টাল ক্যানসার বা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। ঘন ঘন পেট খারাপ, রক্ত আমাশা যদি হতে থাকে, তা হলেও সতর্ক হতে হবে। দিনে কত বার মলত্যাগের প্রয়োজন অনুভূত হয়, আচমকা তার তারতম্য ঘটা কোলন ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ। ক্যানসারের সূত্রপাত হলে তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা হবে, রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। রক্তচাপ ওঠানামা করবে। দিনভরই গা গোলানো ভাব থাকবে। মলের সঙ্গে যদি অতিরিক্ত রক্ত বার হতে থাকে, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে।
সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় এ বিষয়ে এক সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের একাংশ দাবি করছেন, জীবনযাত্রা ও জিনগত সমস্যা ছাড়াও, কোলন ক্যানসারের পিছনে রয়েছে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়াও। কিছু রোগীর মুখে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায়। সে ব্যাক্টেরিয়া পরে পাকস্থলী হয়ে মলাশয়ে পৌঁছয় এবং ক্যানসারের কারণ হয়ে ওঠে।
এই মারণ রোগ থেকে বাঁচতে হলে, অল্প বয়স থেকে সময় মেনে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। মদ্যপান ও ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ, রেড মিট খাওয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি মেনে চললেই এই অসুখ অনেকাংশে এড়িয়ে চলা সম্ভব। রোজকার খাবারে রাখুন টাটকা ফলমূল, শাকসব্জি। আটার রুটি, ওটস ইত্যাদি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত রাখুন খাদ্যতালিকায়। এতে অল্প বয়সে কোলন ক্যানসারের সম্ভাবনা যেমন কমবে, তেমনই এই ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের বাঁচার মেয়াদও বাড়বে।