Advertisement
E-Paper

মিশরের ফারাওয়ের ‘অভিশপ্ত’ সমাধিতে ছিল, তার বিষে ঘটে মৃত্যুও, সেই মারণ ছত্রাকই সারাবে মারণ রোগ?

অভিশপ্ত সমাধি খোলার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকদের মৃত্যু হয়েছিল, না কি কারণ ছিল অন্য, সে নিয়ে নানা মতামত রয়েছে। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, সমাধির সঙ্গে অভিশাপ নয়, বরং এক মারণ ছত্রাকের যোগসূত্র রয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ ০৮:৫৫
New study says, Deadly Pharaoh\\\\\\\\\\\\\\\'s Curse Fungus can fight against Cancer

তুতানখামেনের সমাধিতে কোন ছত্রাক ছিল? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মিশরের ইতিহাসে সম্রাটদের বিচিত্র কাহিনি এখনও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আর এর মধ্যে অন্যতম হলেন প্রাচীন মিশরের সম্রাট বা ফারাও তুতানখামেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ এখনও রহস্যাবৃত। বা বলা ভাল, তাঁর মমিকে ঘিরে অভিশাপের কাহিনি রোমাঞ্চিত করে অগণিত মানুষকে। ১০০ বছর আগে এই মমির হদিস পাওয়া গিয়েছিল, যা এখনও চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। যে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সমাধি খুলেছিলেন, তাঁদের কারও কারও রহস্যজনক মৃত্যুর সঙ্গে বেশ কিছু অলৌকিক কাহিনি জড়িয়ে রয়েছে। অভিশপ্ত সমাধি খোলার জন্য সেই সব মৃত্যু হয়েছিল, না কি কারণ ছিল অন্য, তা নিয়ে নানা মতামত রয়েছে। সম্প্রতি আমোরিকার ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, সমাধির সঙ্গে অভিশাপ নয়, বরং এক মারণ ছত্রাকের যোগসূত্র রয়েছে। এমন ছত্রাক যা প্রাণ কেড়ে নিতে পারে নিমেষে। তার বিষ এতটাই মারাত্মক, যা দিয়ে মারণ রোগের চিকিৎসাও হতে পারে।

১৯২২ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার এই ফারাওয়ের মমিতে প্রথম প্রবেশ করেছিলেন। সেই অভিযানে পাথরের তৈরি একটি বাক্স খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে মোট তিনটি শবাধার রাখা ছিল। তিনটি শবাধারের একটি ছিল পুরু সোনার তৈরি। ওই শবাধারের মধ্যেই পাওয়া যায় তুতেনখামেনের প্রায় তিন হাজার বছর আগেকার মমি আর অজস্র দুর্মূল্য সামগ্রী। সেই খননকার্যে অর্থসাহায্য করেছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের লর্ড কার্নারভন। পরে কার্টার ও কার্নারভন, দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছিল রহস্যজনক ভাবে। শোনা যায়, কার্নারভন আক্রান্ত হন সেপ্টিসেমিয়ায় এবং কার্টারের মৃত্যু হয় হজকিন’স লিম্ফোমা বা একধরনের ক্যানসারে। তা ছাড়া খননকার্যে যে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ছিলেন, তাঁদের কারও নিউমোনিয়া ধরা পড়ে, কারও ফুসফুসের সংক্রমণ হয়।

পেনসিলভানিয়ার গবেষকেরা দাবি করেছেন, এই সব রোগের কারণ কোনও অভিশাপ বা ‘কালো জাদু’ নয়, বরং তুতানখামেনের সমাধিতে পাওয়া এক ধরনের মারণ ছত্রাক। গবেষকেরা জানান, ওই শবাধারগুলির ভিতরেই জন্মেছিল ‘অ্যাসপারজিলাস ফ্ল্যাভাস’ নামে এক ধরনের ছত্রাক। এর রেণু ভয়ানক বিষাক্ত। এক বার ছড়িয়ে পড়লে ও মানুষের শরীরে ঢুকলে ফুসফুস ছারখার করে দিতে পারে। রক্তের মাধ্যমে সেই রেণু শরীরে ঢুকে পড়লে হার্ট, কিডনি, লিভার, এমনকি মস্তিষ্কের কোষও নষ্ট করে দিতে পারে। যে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সমাধি খুলেছিলেন, তাঁদের শরীরেও ঢোকে ওই ছত্রাক। আর তার থেকেই একের পর এক মৃত্যু ঘটতে থাকে বলে দাবি।

বিষে বিষে বিষক্ষয়

মিশরের ফারাওয়ের সমাধিতে পাওয়া ছত্রাক অ্যাসপারজিলাস স্যাঁতসেঁতে ও অন্ধকার জায়গাতেই জন্মায়। এর মারণ বিষই মারণ রোগ সারাতে পারবে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা। ছত্রাকের রেণুতে এমন এক ধরেনর প্রোটিন থাকে, যার নাম ‘অ্যাসপেরিজিমাইসিন’। এই প্রোটিনই নাকি ক্যানসার কোষের বিভাজন ও বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে। রক্তের ক্যানসার হলে তার নিরাময় খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ ক্যানসার কোষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সে ক্ষেত্রে অ্যাসপেরিজিমাইসিন প্রোটিন সহায়ক হতে পারে।

ছত্রাকের বিষ থেকে নেওয়া প্রোটিন গবেষণাগারে শোধন করে তা থেকে কেমোথেরাপির ওষুধ তৈরিও সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। ‘নেচার কেমিকাল বায়োলজি’ জার্নালে এই বিষয়ে গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, প্রাণঘাতী ছত্রাক যেমন নিমেষে প্রাণ কাড়তে পারে, তেমনই প্রাণ বাঁচাতেও পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ধ্বংস করতে হলে এমন বিষই প্রয়োজন। আর তা পাওয়া যাবে একমাত্র অ্যাসপারজিলাস থেকে। ছত্রাকটিকে কী ভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে ব্যবহার করা যায়, সে নিয়ে এখন জোর গবেষণা চলছে।

Fungus tutankhamun Cancer treatment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy