দ্রুত স্নায়ুকে চাঙ্গা করতে এক কাপ কফিই যথেষ্ট। শীতের দিনে গা-গরম করতে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফির সঙ্গও মন্দ নয়। হালকা ঠান্ডার পরশ আর গরম কফি— এ যুগলবন্দি যেন রাজযোটক। তাই নিয়মকানুন, বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে সকাল থেকে রাত— বার বার কফি খাচ্ছেন?
মেজাজ নিয়ন্ত্রণে ক্যাফিনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এমনিতে তা ক্ষতিকরও নয়। তবে বিপদ মাত্রা ছাড়ালেই। দিনে ২-৩ কাপ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু তারও বেশি নিয়মিত খেলে নিঃশব্দেই শরীরে এক প্রভাব পড়তে পারে। ক্যাফিন মাত্রা ছাড়ালে শরীর নানা ভাবে তা জানান দেয়, বলছেন হরিয়ানার একটি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ নিশা মণ্ডল। পুষ্টিবিদের কথায়, শরীরের যতটা ক্যাফিন দরকার, তার চেয়ে বেশি হলে মেজাজ, ঘুম, হজম-সহ শরীরে নানা ভাবে তার প্রভাব পড়তে পারে। অনেক সময় অনেকেই বুঝতেই পারেন না, সমস্যাগুলি কেন হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
১। স্বল্প পরিমাণে ক্যাফিন যেমন মেজাজ ভাল করে, তেমনই ক্যাফিনের মাত্রাতিরিক্ত প্রভাবে উদ্বেগের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে ছটফটানি, অস্বস্তি, এমন অনেক কিছুই হতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরের জন্য জরুরি অ্যাডিনোসিনকে আটকে দেয়, অতিরিক্ত অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তার প্রভাব পড়ে মেজাজে। বেড়ে যায় দুশ্চিন্তা।
২। ঘন ঘন চা, কফি খেলে হৃৎস্পন্দনেও তার প্রভাব পড়ে। ক্যাফিনের মাত্রা বাড়লে হৃৎস্পন্দন দ্রুত গতিতে হতে পারে, এমনকি তা অনিয়মিত হয়ে পড়তেও পারে। অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে তার প্রভাব পড়তে পারে হৃদ্যন্ত্রে।
৩। বার বার চা-কফি খেলে ক্ষিদেও কমে যায়। পেট ভার হয়ে থাকে। পুষ্টিবিদ জানিয়েছেন, কফি ডাইইউরেটিক, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বার করে দেয়। কফি খেলে বেশি অ্যাসিড উৎপাদন হয়। ফলে জল কম খাওয়া, চিনি দিয়ে কফি খাওয়ার প্রবণতা হজমেও সমস্যা তৈরি করে। শরীর থেকে জল কমে গেলে সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্যে তার প্রভাব পড়বে, শারীরবৃত্তীয় কাজেও বিঘ্ন ঘটবে।
৪। ক্যাফিনের প্রভাব পড়ে ঘুমেও। বিশেষত রাত জেগে কাজ বা পড়ার সময় কফি, চায়ে চুমুক দিলে ঘুমের ছন্দ বিগড়ে যায়। সহজে ঘুম আসতে চায় না। সে কারণে ঘুমোনোর সময়ের অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে শেষ বার চা-কফি খেতে বলা হয়।
৫। চা-কফি খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে ঠিক সময় তা না পেলে মাথা ব্যথা করতে পারে। ক্যাফিনের উপর নির্ভরতা তৈরি হলে, ঠিক সময়ে তা না পেলেও ব্যথা, যন্ত্রণা বাড়তে পারে।
ক্যাফিন নির্ভরতা কমানোর বাস্তবসম্মত উপায়
· চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস আচমকা ছেড়ে দেওয়া কঠিন। বদলে ধীরে ধীরে কমাতে হবে। কারও দিন ৫-৬ কাপ চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে প্রথম চার দিন এক কাপ করে কফি-চা কম খান। তার পরে ধীরে ধীরে আরও এক কাপ কমান।
· কফি খাওয়ার জন্য শরীর-মন ছটফট করলে গ্রিন টি, মাচা টি খেতে পারেন। চুমুক দিতে পারেন উষ্ণ ভেষজ চায়ে। এতে ক্যাফিনের পরিমাণ খুব কম থাকে। ভেষজ চায়ে থাকেই না।
· মাথা ব্যথার সমস্যা হলে, ঘুম পেলে, চনমনে ভাব বজায় রাখতে হলে বেশি করে জল খান। খোলা হাওয়ায় খানিক হেঁটে আসুন। সন্ধ্যায় দিনের শেষ চা বা কফিটি খান।
· গ্যাস অম্বল, বুক জ্বালা, বুক ধড়ফড়ের মতো সমস্যা বেশি হলে, ঘন ঘন চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি।সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।