রক্তাল্পতার সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। বিশেষ করে মহিলারা। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় অনেকেরই। সম্প্রতি মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এর একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ভারতে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের অনেকেরই শরীরে আয়রন ও ভিটামিনের ঘাটতি হচ্ছে। সার্বিক পুষ্টির অভাবই এর জন্য দায়ী।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমতে থাকলেই অক্সিজেনের সরবরাহও কমে যায়। দেখবেন, রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব কমলে চেহারায় তার ছাপ পড়বে। প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব, ঝিমুনি হবে। সামান্য পরিশ্রমের ধকলও নিতে পারবেন না। খাবার দেখলেই অনিচ্ছা আসবে। চুল ঝরতে শুরু করবে। অবসাদও গ্রাস করতে থাকবে। অনেকের হৃৎস্পন্দনের গতিও কমে যায়।
রক্তাল্পতার লক্ষণ দেখা দিলেই মুঠো মুঠো আয়রন ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট নেওয়া শুরু করেন অনেকে। এতে হিতে বিপরীত হয়। আরও নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। তাই পুষ্টিবিদেরা বলেন, ওষুধ যতটা সম্ভব কম খেয়ে, বরং খাদ্যাভ্যাস বদলালেই এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। বেশি করে ফলমূল, শাকসব্জি রাখতে হবে ডায়েটে। সেই সঙ্গে তিন রকম পানীয় নিয়ম করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেতে হবে। তা হলেই রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কিছু দিনেই স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।
আরও পড়ুন:
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াবে কোন কোন পানীয়?
বেদানার রস
বেদানায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অন্য পুষ্টিগুণ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বেদানাতে আয়রন ভরপুর পরিমাণে আছে। এটি নিয়ম করে খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ হবে। বেদানা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। বেদানায় থাকা নাইট্রেটস এবং পলিফেনল পেশিতে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে।
আমলকির রস
আমলকিতে আয়রন ও ভিটামিন সি-এর মাত্রা খুব বেশি। নিয়মিত আমলকির রস খেলে কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তা ছাড়া, এর মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। আমলকি হজমক্ষমতা বাড়ায়। বিপাকে সাহায্য করে। শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে বার করে দেয় আমলকির রস। এটি নিয়ম করে খেলে লিভারও ভাল থাকবে।
বিটের কাঞ্জি
বিটের মধ্যে আয়রন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের মাত্রা বেশি। রোজ খাওয়ার পরে এক গ্লাস করে বিটের রস খেলে রক্তাল্পতার সমস্যা দূর হবে। বিটে আছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি১, বি২, বি৬, বি১২ এবং ভিটামিন সি। বিটের রয় খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়বে।
বিটের কাঞ্জি তৈরি করার পদ্ধতিও সহজ। প্রথমে বিটের খোসা ছাড়িয়ে, ভাল করে ধুয়ে নিয়ে ছোট ছোট করে কেটে রাখুন। এ বার বড় একটি পাত্রে জল গরম করতে দিন। এর মধ্যে কেটে রাখা বিটগুলি দিয়ে দিন। কম আঁচে ফোটান। এ বার ওই মিশ্রণে দিয়ে দিন নুন, সামান্য পিষে নেওয়া সর্ষে। সব উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে চিনামাটির পাত্রে ঢেলে নিন। তিন থেকে চার দিন পর্যন্ত ওই পাত্রটি রোদে রেখে দিন। তা হলেই তৈরি হয়ে যাবে কাঞ্জি। দই বা ঘোল যাঁরা বেশি খেতে পারেন না, তাঁরা প্রোবায়োটিকের জন্য এই পানীয়টি খেতেই পারেন।