—প্রতীকী চিত্র।
দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরে পড়ুয়াদের আত্মহত্যার নথিভুক্ত হওয়া ঘটনা কমেছে তামিলনাড়ুতে। ২০০৪ সালে সংখ্যাটা ছিল ৪০৭। ২০২২-এ তা নেমে এসেছে ১২১-এ। এই হার প্রায় ৭০ শতাংশ কমার অন্যতম মূল কারণ, সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা চালু করা— এমনটাই মনে করেন মনোরোগ চিকিৎসক লক্ষ্মী বিজয়কুমার।
আবার, ২০১৯ সালে ভারতে আত্মহত্যায় মৃত্যুর ঘটনা ছিল ১,৩৯,০০০টি, পরের বছর অতিমারির সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৫৩,০৫২-তে। ২০২১-এ তা আরও বেড়ে হয় ১,৬৪,০৩৩, ২০২২-এ এই সংখ্যা ছিল ১,৭১,০০০। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর (এন সি আর বি) এই পরিসংখ্যান টেনে মনোরোগ চিকিৎসক সৌমিত্র পাথারে জানাচ্ছেন, আত্মহত্যাকে মূলত ব্যক্তি-সিদ্ধান্তের ফল বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই ধারণা ভ্রান্ত। একটি আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে একাধিক কারণ। তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন আর্থিক, সামাজিক, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নীতি। এটি কেবল মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাও নয়। সেই কারণেই অতিমারি, আর্থিক মন্দার সময়ে বাড়ে এমন ঘটনা। আবার সুসংহত নীতির ফলে কমে এর হার। আত্মহত্যা প্রতিরোধ নিয়ে এক আলোচনাসভায় এ দিন এর পাশাপাশিই উঠে আসে, ভারতের শ্রেণি ও জাতিগত তীব্র অসাম্যের দিকটিও।
রাষ্ট্রনীতি ও অসাম্যের সঙ্গে আত্মহত্যার হারের সরাসরি যোগ রয়েছে, জানাচ্ছেন সৌমিত্র। এন সি আর বি-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে ২০২২ সালে প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় আত্মহত্যার হার ছিল ১২.৪ শতাংশ, যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। আত্মহত্যা যে জাতীয় জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে উঠে আসছে, তা জানিয়ে সৌমিত্র বলেন, ‘‘কোন আর্থ-সামাজিক কাঠামোর জেরে এত মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন, সেই প্রশ্নটা নিজেদেরই করার সময় এসেছে। এই সমস্যার সমাধান চাইলে মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদেরও দেশের রাজনীতির দিকে তাকাতে হবে।’’
আইনজীবী কৌশিক গুপ্তের মতে, ‘‘আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির জেরে নাগরিকদের জীবনে মর্যাদার এতটাই হানি হচ্ছে যে, তাঁরা বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয় মনে করছেন। সাধারণ মানুষের জীবন ও মৃত্যু— দু’টি ক্ষেত্রেই আরও মর্যাদা দিতে হবে সমাজকে।’’
তবে আত্মহত্যা ঠেকাতে জাতীয় স্তরে নীতি নির্ধারণ যে কার্যত শুরুই হয়নি, সে কথা তুলে আনেন বক্তারা। নীতির অভাবে একটি আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনার মোকাবিলা করার জন্য নেই কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম, নেই যথেষ্ট তথ্যও। সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও। সমস্যাটি যে রয়েছে, তা স্বীকার করা হবে প্রথম ধাপ। পাশাপাশি, বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া আত্মহত্যা কমানোর আশা কম বলে মনে করছেন লক্ষ্মী বিজয়কুমার। গণমাধ্যমে কোনও আত্মহত্যার প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। কারণ, চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনের জেরে বাড়ে একই পন্থায় আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা। এ দিনের আলোচনার আয়োজক, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কর্মরত একটি সংস্থা, ‘অঞ্জলি’র কর্ণধার রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছ বোঝাপড়া থাকা প্রয়োজন। এমন ঘটনা কমাতে গেলে, কোন কোন কর্মসূচি বেশি কার্যকর, তা বুঝতে যে তথ্য আমাদের হাতে থাকা প্রয়োজন, সেগুলো নেই।’’
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘জিনগত এবং মস্তিষ্কের গঠনের সঙ্গে আত্মহত্যার যোগে বেশি গুরুত্ব আরোপ করাও আসলে আত্মহত্যা রোখার পথে অন্তরায়। কারণ, সে ক্ষেত্রে কার্যত স্বীকার করা হয় যে, তা আটকানোর কোনও উপায় নেই। অথচ, সব আত্মহত্যাই আটকানো যাবে, এই মনোভাব নিয়ে চললে সাফল্যের হার বাড়বে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। এর পাশাপাশি, অবিরাম আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছেন ওই চিকিৎসক। সেই পথেই নীতিগত স্তরেও বদল আনার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy